প্রশ্ন: বাংলা ভাষার ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ কর:
বাংলা ভাষার ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ কর
ভূমিকা:- বাংলা একটা প্রাণবন্ত চলমান ভাষা। বহু বছরের ধীর ও ধারাবাহিক
বিবর্তনে বাংলা ভাষার বর্ণ ও সংযুক্ত বর্ণের মূল ধ্বনির নানা পরিবর্তন ঘটেছে। ধ্বনির
পরিবর্তনশীলতা বাংলা ভাষাকে আরো আন্তরিক ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এই পরিবর্তনের পিছনে
যে যে কারণগুলি রয়েছে সেগুলি হল-
(১) ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ু,
(২) উচ্চারণে অসাবধানতা ও উচ্চারণ-কষ্ট লাঘবের জন্য
(৩) অন্য কোনো ভাষার প্রভাবের জন্য,
(৪) শ্রবণ ও বোধের ত্রুটির জন্য এবং সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব জনিত
কারণে ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে।
চলমান জীবন প্রবাহে পরিবর্তনশীলতা একটি বাধ্যতামূলক বৈশিষ্ট্য,
আর সেই পরিবর্তনশীলতাকে মানুষ প্রকাশ করে তার মৌখিক ভাষার মাধ্যমে, তাই তার পরিবর্তন
অবশ্যম্ভাবী। যে কোনো প্রচলিত মৌখিক ভাষাই পরিবর্তনশীল। ছোটবেলায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক
মহাশয়ের আলোচনায় বার বার এসেছে "কোনো জাতির মৌখিক ভাষা বহমান নদীর মতো" তখন
কথাটি একটি প্রবাদ বাক্যের মতো কানে বাজত, কিন্তু সাহিত্যের ছাত্র হওয়ায় ক্রমশ সেই
প্রবাদের গূঢ় রহস্য ভেদ হচ্ছে, নদী যেমন সময়ের সাথে সাথে এলো মেলো ভাবে তার চলার পথ
বদলায়, তেমনি যুগ থেকে যুগান্তরে তার প্রকৃতি বদলায়, নদী বদলায় তার স্রোত, ভাষা বদলায়
তার ধ্বনি। নদীর স্রোত ভিন্নমুখী হলে যেমন নদীর গতিপথ বদলায়, তেমনি কালক্রমে মূল ভাষার
ধ্বনি পরিবর্তন হতে হতে নতুন ভাষার পরিচিতি পায়, যা মান্য ভাষার অন্তর্গত কিন্তু অন্য
নাম নিয়ে বাস্তবে ও ভাষার আলোচনায় আলোচিত হয়।
১) ভৌগোলিক অবস্থানজনিত কারণ
শান্তিপূর্ণ অবস্থানে কোনো দেশের ভাষার উচ্চরণগত বিকৃত কম থাকে।
কিন্তু যে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ অথবা বিদেশীদের আগমন ক্রমাগত হতেই থাকে, সেখানকার ভাষার
ধ্বনি পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেড়েই যায়। আমাদরে ভারতবর্ষের কথাই যদি ধরি নিয়মিত বিদেশীদের
আগমনে ও যোগাযোগের ফলে ভাষার যে ধ্বনিগত পরিবর্তন হয়েছে তা লক্ষণীয়।
যেমন, শ, স, ষ, এই তিন ধরনের শিসধ্বনি পশ্চিমবঙ্গের মান্য চলিত
ভাষার মধ্যে থাকলেও মূল ধ্বনি হিসেবে মান্যতা পেয়েছে "তালব্যশই। কিন্তু এই বাংলা
ভাষাভাষীর বাংলদেশে ‘দন্ত্য-স’ দারুণ ভাবে প্রচলিত। এর কারণ হিসেবে ভাষাবিদদের যুক্তি
মধ্যযুগ থেকেই মুসলমান শাসনের ফলে ফরাসি ভাষার প্রভাবে এই ধ্বনির পরিবর্তন ঘটেছে।
বিভিন্ন ভাষার সংস্পর্শে বাংলা ভাষা আসার সূত্রে তার নিজেস্ব ভাষা
কিছু কিছু বদলে গেছে। যেমন বাংলা 'বন্ধ' শব্দটি হিন্দি ভাষার প্রভাবে বন্ধ অথবা 'বন্ধু'।
সাধরণ বাংলা বাক্যের ভেতরেই এই রকম অন্য ভাষার প্রভাব থেকে গেছে।
যেমন- নেতাজী সুভাষ অমর রহে
মানুষে ভাব বিনিময়ের সবথেকে শক্তিশালী মাধ্যম হল পঞ্চ ইন্দ্রীয়।
এই ইন্দ্রীয়গুলির কোনো একটির ত্রুটি থাকলে ধ্বনি পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
(ক) বাকযন্ত্রের ত্রুটিজনিত কারণ বাক্য বিনিময়ের ক্ষত্রে যদি বক্তার
জিহ্বার সমস্যা থাকে তাহলে উচ্চারণে মূর্ধণ্যীভবন। যেমন- সেই বক্তা ‘দিন দুনিয়ার হাল
বদলে গেছে’, বলতে গিয়ে বলেন- ‘ডিন ডুনিয়ার হাল বডলে গেঠে’।
=============================
whatsapp-9932312235
ফলো ও like করো।

কোন মন্তব্য নেই
ok