Translate

কারক ও বিভক্তি : ড. নীলোৎপল জানা

 


বিভক্তি কাকে বলে?

বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য শব্দের সঙ্গে যে সকল বর্ণ যুক্ত হয় তাদের বিভক্তি বলে। যেমন: ছাদে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

বাক্যটিতে ছাদে (ছাদ+এ বিভক্তি), মা (মা+০ বিভক্তি)

শিশুকে (শিশু+কে বিভক্তি), চাঁদ (চাঁদ+০ বিভক্তি) ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।

 

বাংলা শব্দ বিভক্তি

০ শূন্য বিভক্তি (অথবা অ বিভক্তি), এ, (য়), তে (এ), কে, রে, র, এরা– এ কয়টিই খাঁটি বাংলা শব্দ বিভক্তি।

এ ছাড়া বিভক্তিস্থানীয় কয়েকটি অব্যয় শব্দও কারক-সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য বাংলায় প্রচলিত আছে।

 

বিভক্তির আকৃতি

একবচন এবং বহুবচন ভেদে বিভক্তির আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়-

বিভক্তি   একবচন                                  বহুবচন

প্রথমা     ০,অ,এ,(য়),তে                       রা, এরা, গুলো, গণ

দ্বিতীয়া    কে, রে, এরে                          দিগে, দিগকে, দের

তৃতীয়া    দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক                   দের, দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক

চতুর্থী     দ্বিতীয়ার মতো, জন্য, নিমিত্ত     দ্বিতীয়ার মতো

পঞ্চমী     হইতে, থেকে, চেয়ে, হতে       দের হইতে, দিগের চেয়ে

ষষ্ঠী       র, এর                                     দিগের, দের, গুলির

সপ্তমী     এ, (য়), তে, এতে                    দিগে, দিগেতে, গুলিতে

 

কারক কাকে বলে?

বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে।

 

কারকের প্রকারভেদ

ক)কর্তৃকারক

খ)কর্ম কারক

গ)করণ কারক

ঘ)সম্প্রদান কারক/নিমিত্ত কারক

ঙ)অপাদান কারক

চ)অধিকরণ কারক

=======================================================================

কারকের প্রকারভেদ

কর্তৃকারক

বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে।

যেমন: মেয়েরা ফুল তোলে।

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

কর্তৃকারক বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে।

মুখ্য কর্তা:      যে নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে সে মুখ্য কর্তা।

প্রযোজক কর্তা: মূল কর্তা যখন অন্যকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করায় তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।

প্রযোজ্য কর্তা:  মূল কর্তার করণীয় কার্য যাকে দিয়ে সম্পাদিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে।

ব্যতিহার কর্তা: কোনো বাক্যে যে দুটো কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে তাদের ব্যতিহার কর্তা বলে।

বাক্যের বাচ্য বা প্রকাশভঙ্গি অনুসারে কর্তা তিন রকম হতে পারে।

কর্মবাচ্যের কর্তা (কর্মপদের প্রাধান্যসূচক বাক্যে): পুলিশ দ্বারা চোর ধৃত হয়েছে।

ভাববাচ্যের কর্তা (ক্রিয়ার প্রাধান্যসূচক বাক্যে): আমার যাওয়া হবে না।

কর্ম-কর্তৃবাচ্যের কর্তা (বাক্যে কর্মপদই কর্তৃস্থানীয়): বাঁশি বাজে।

=============================================================

কর্মকারক

যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্মকারক বলে।

কর্ম কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে 'কি' বা 'কাকে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্ম। কর্মকারকে এ, য়, য়ে, কে, রে এবং বহুবচনে দিগকে, দেরকে, এদের, এদেরকে প্রভৃতি বিভক্তি যুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই সব বিভক্তির চিহ্ন অনুক্ত থাকে।

যেমন- সে বই পড়ে।

এখানে ক্রিয়া পড়ে, এই ক্রিয়া কে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় বই। অতএব

বই হচ্ছে কর্মকারক।

কর্মকারকে বিভক্তির উদাহরণ:

ক) শূন্য বিভক্তি:

1. গরু গাড়ি টানে।

উঃ গাড়ি কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

2. দশে মিলি করি কাজ।

উঃ কাজ কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

3. মিষ্টি মধুর গল্প বল।

উঃ গল্প কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

খ) র বিভক্তি:

1. সারা বিকেল তার খবর নেই।

উঃ তার কর্মকারকে র বিভক্তি

গ) কে, রে, এরে বিভক্তিঃ

1. সাপুড়েকে ডাক। ভজুকে খেতে বল।

উঃ সাপুড়েকে কর্ম কারকে কে বিভক্তি। ভজুকে কর্ম কারকে কে বিভক্তি।

2. দূর করে দিনু তোরে - রবীন্দ্রনাথ।

তোর কর্ম কারকে রে বিভক্তি।

কর্মকারকের প্রকারভেদ

কর্মকারক ৪ প্রকার:

১)সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম

২)প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম

৩)সমধাতুজ কর্ম

৪)উদ্দেশ্য ও বিধেয়

দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি পরস্পর অপেক্ষিত কর্মপদ থাকলে প্রধান কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য। কর্ম এবং অপেক্ষিত কর্মটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম।

=======================================================================

করণ কারক

করণ শব্দটির অর্থ যন্ত্র, সহায়ক বা উপায়।

ক্রিয়া সম্পাদনের যন্ত্র,

কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণকারক বলে।

করণ কারক চেনার উপায়

ক্রিয়া পদকে কিসের দ্বারা' এই প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই

করণকারক।

করণ কারকে সাধারণতঃ এ, য়, তে, এতে বিভক্তি এবং দ্বারা, দিয়া (কর্তৃক) প্রভৃতি অনুসর্গ যুক্ত থাকে।

করণ কারকের উদাহরণঃ

আমি কলম দিয়া লিখি। হাত দিয়ে কাজ করি।

উঃ কলম করণ কারক।

করণ কারকে বিভক্তি উদাহরণঃ

ক) শূন্য বিভক্তিঃ

1. তাস খেলছে।

উঃ তাস দ্বারা খেলছে। এখানে তাস করণ কারকে শূন্য বিভক্তি।

=======================================================================

সম্প্রদান কারক

যাকে স্বত্ব ত্যাগ করে দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয় তাকে (সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী) সম্প্রদান কারক বলে।

 

বা নিমিত্ত কারক

নিমিত্ত কারক কাকে বলে?

যখন কোনো ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর নিমিত্ত বা জন্য কোনো ক্রিয়া সম্পাদন করা হয়, তখন যার নিমিত্ত করা হয়, তাকে নিমিত্তকারক বা নিমিত্ত কর্মকারক বলে। যথা-

সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

এখানে সকলের তরে অর্থাৎ সকলের জন্য এবং পরের তরে' অর্থাৎ পরের জন্য-বোঝান হয়েছে। ফলে, সকলের তরে, পরের তরে নিমিত্ত কারক।

নিমিত্ত কারক চেনার উপায়

1. 'জন্য' বোঝাতে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন-কিছু বলব ব'লে এসেছিলাম। এখানে 'বলে' অর্থাৎ বলার জন্য।

2. লাগিয়া/ লেগে অর্থে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন: সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু'।

3. উদ্দেশ্য অর্থে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন-তিনি বাজারে গেছেন। অর্থাৎ বাজার করার উদ্দেশ্যে বাজারে গেছেন।

4. 'উদ্দেশ' বোঝাতে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন-তার উদ্দেশে অপেক্ষা করাই সার হলো।

5. নিমিত্ত অনুসর্গ যোগে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন-সে কিসের নিমিত্ত রোজ রোজ আমার কাছে আসছে?

নিমিত্ত কারকে বিভক্তির উদাহরণ-

নিমিত্ত কারকে এ(য়), কে বিভক্তি চিহু ব্যবহৃত হয় যেমন-

আমি স্নানে যাছি-(এ)

=======================================================================

অপাদান কারক

যা থেকে কিছু বিচ্যুত, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হয় এবং যা দেখে কেউ ভীত হয় তাকেই অপাদান কারক বলে।

অপাদান কারকের উদাহরণ

বিচ্যুত- গাছ থেকে পাতা পড়ে।

গৃহীত- শুক্তি থেকে মুক্তো মেলে।

জাত- জমি থেকে ফসল পাই।

বিরত- পাপে বিরত হও।

দূরীভূত- দেশ থেকে পঙ্গপাল চলে গেছে।

রক্ষিত- বিপদ থেকে বাঁচাও।

আরম্ভ- সোমবার থেকে পরীক্ষা শুরু।

ভীত- বাঘকে ভয় পায় না কে?

=======================================================================

অধিকরণ কারক

ক্রিয়া সম্পাদনের কাল (সময়) এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অধিকরণ কারকে সপ্তমী অর্থাৎ এ/য়/তে ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়।

কোনো বাক্যে ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণকারক বলে। ক্রিয়ার আধার সব সময় উল্লিখিত হয় না। যখন এই আধার উল্লিখিত হয় তখন সেই আধার অধিকরণ কারক হয়।

অধিকরণ কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে 'কোথায়' বা 'কখন' প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাকে অধিকরণ কারক বলে।

যেমন- জলে কুমীর থাকে। এখানে থাকে এই ক্রিয়ার আধার হচ্ছে জলে।

অধিকরণ কারকে এ, তে, এতে, কে, য়, র বিভক্তি হয়।

অধিকরণ কারক তিন ভাবে বিভক্তঃ

ক. কালাধিকরণ। যেমন-তুমি সকালে যাবে।

খ. আধার অধিকরণ। যেমন-গাছে ফুল ফুটেছে।

গ. ভাবাধিকরণ। যেমন-সুখের মধ্যে কাল কেটে গেল।

 অধিকরণ কারকে বিভক্তির উদাহরণ

ক) এ, তে, এতে বিভক্তিঃ

1. বনে বাঘ থাকে।

2. নদীতে কুমির আছে।

৩. তিলেতে তেল হয়।

 খ) কে, য়, র বিভক্তিঃ

1. আজিকে যতেক বনস্পতির ভাগ্য দেখি যে মন্দ।

2. পড়াশুনায় মন দাও।

3. খাঁচার পাখিটিকে ছেড়ে দাও। গুদামের মাল সাফ করো।

 

কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.