'বারে বারে কহ রাণি, গৌরী আনিবারে।'
![]() |
| কমলাকান্ত ভট্টাচার্য |
শাক্তপদাবলি
'বারে বারে কহ রাণি, গৌরী আনিবারে।' এটি কোন পর্যায়ের পদ? পদকর্তা কে? পদটির কাব্যসৌন্দর্য বিচার করো।
আলোচ্য পদটি শাক্ত পদাবলির অন্যতম পর্যায় 'আগমনী'র অন্তর্গত।
আলোচ্য 'বারে বারে কহ রাণি, গৌরী আনিবারে।' পদটির রচয়িতা হলেন শাক্ত পদাবলির অন্যতম পদকর্তা কমলাকান্ত ভট্টাচার্য।
আগমনী পর্যায়ের অনেক পদেই দেখা যায়- গিরিরাজকে মেনকা উমাকে আনার জন্য অনুরোধ করেছেন । দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা 'কবে যাবে বল গিরিরাজ, গৌরীরে আনিতে।', 'ওহে গিরিরাজ গৌরী অভিমান করেছে।' প্রভৃতি পদের কথা বলতে পারি। এ সমস্ত পদের মধ্যে পরিস্ফুট হয়েছে মাতৃহৃদয়ের অসীম ব্যাকুলতা। গিরিরাজ যেতে পারেন নি উমাকে আনতে। এ কারণে নয় যে তাঁর হৃদয় পাষাণ, এ কারণেও নয় যে তিনি মেয়েকে ভালোবাসেন না। এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে শিব-উমার সংসার-সৌন্দর্যের প্রতি সম্মানবোধ। আপাতত আমরা এ অনুভবই খুঁজে পাব 'বারে বারে কহ রাণি, গৌরী আনিবারে।' পদটির মধ্যে। এর আড়ালেও পেতে পারি অন্য কোনো সত্য। এভাবেই পদটিতে ফুটে ওঠে দুটি মাত্রা। যথা-
(ক) পৌরাণিক কারণ ও তার সমাজবাস্তবতা
(খ) আপাত সত্যের আড়ালে জায়মান অসহায়তা
পদের শুরুতেই আমরা দেখতে পাবো- উমাকে নিয়ে আসার জন্য মেনকার বারংবার অনুরোধকে গিরিরাজ মেনে নিতে পারেননি। কেন পারেননি? তার উত্তরে গিরিরাজ জানালেন-
'জান তো জামাতার রীত অশেষ প্রকারে।'
পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই পৌরানিক প্রসঙ্গ-দেবতা দানব যুদ্ধে সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হয়েছিল গরল ও অমৃত। সবাই যখন অমৃত ধারণে ব্যস্ত তখন জীব জগৎকে রক্ষা করতে সেইসঙ্গে স্বর্গের মান বাঁচাতে স্বয়ং শিব কষ্টে গরল ধারণ করেছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন 'নীলকণ্ঠ'। বিষের জ্বালা 'নীলকষ্টে'র পরিচয় বহন করে। দেহের এই জ্বালা উমার অঙ্গছায়ায় প্রশমিত হয়। তাই 'মণি' ত্যাগ করে 'ফণী' হয়তো কিছুক্ষণ থাকতে পারে, তবুও উমাকে ছেড়ে শিব থাকতে পারবে না। তাই গিরিরাজের অভিব্যক্তি-
'উমার অঙ্গের ছায়া শীতলে শঙ্কর-কায়া:
সে অবধি শিব-জায়া বিচ্ছেদ না করে।
পিতা হিসেবে প্রত্যেকেই চেয়ে থাকে কন্যার সংসারের সুখ সৌন্দর্য। তাই না আনতে যাওয়ার পেছনে এ কারণ যথোপযুক্ত মনে হয়। তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। যা অন্য এক সত্যের সন্ধান দিতে পারে।


কোন মন্তব্য নেই
ok