Translate

মহিষাদলের রথ ২২১বছর বয়স : ড. নীলোৎপল জানা (২০২৫)

                    



 মহিষাদলের রথ 
  পূর্ব মেদিনীপুর                   
 
       মহিষাদলের হিজলি টাইডেল ক্যানেল এর পূর্বপাড়ে  মহিষাদলের রাজা গর্গদের দুটো রাজপ্রাসাদ;একটির নাম রঙ্গীবসান রাজপ্রাসাদ  অন্যটি ফুলবাগ রাজপ্রাসাদ। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে উপাধ্যায় বংশের শেষ রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায় পরলোক গমন করলে তাঁর বিধবা পত্নী রানি জানকীদেবী রাজএস্টেটের সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অতি বুদ্ধিমতী ও ধর্মপ্রাণ মহিলা ছিলেন সেই কারণে মহিষাদল এলাকায় এবং  এস্টেটের  মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্দির তৈরি করেন মহিষাদলের পরিচিত দেবতা মদনগোপাল তাঁর প্রতিষ্ঠা।

       কথিত আছে একটি দারুমূর্তি রূপনারায়ণ নদে ভাসতে ভাসতে মহিষাদলে চলে আসে। এক ধীবর মাছ ধরতে গিয়ে সেটি জল থেকে তুলে নেয় তারপর সেই দারু মূর্তিটি খড়ের চালে তুলে রাখে। ওই কাঠটিতে নাকি চোখ মুখ আঁকা ছিল। একদিন রানি স্বপ্নে দেবতাকে দেখতে পান; তারপর সেই ধীবরের বাড়ি খুঁজতে থাকে। শেষে গেঁওখালির কাছে  রাজচকে সেই ধীবরের বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়, সেখান থেকে ওই মূর্তিটিকে সংগ্রহ করেন রানি। তারপর সেটিকে এনে রানি পূর্ণ মূর্তির রূপ দেন। গোপালজীউর পাশে আরেকটি রাধিকার মূর্তি তৈরি করা হয়। (এরপর সেই ধীবরকে রানী কয়েক বিঘা জমি দান করেন।) মদনগোপাল ধীবরের কাছ থেকে সংগৃহীত হয়েছিল বলে প্রতি বছর পঞ্চমী তিথিতে নবরত্ন মন্দিরে গোপালের জেলে বাপের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হতো, এখন বন্ধ আছে।
 
      সে সময় মদন গোপাল ছোটো একটি মন্দিরে পূজিত হতো সেটা রানির ভালো লাগেনি, তাই তিনি বিশাল মন্দিরের পরিকল্পনা করেন। ১৭৭৪ সালের ৯চূড়া-বিশিষ্ট নবরত্ন মন্দির তৈরি হল। উচ্চতা প্রায় ৭০ ফুট। অনেকে বলেন- মন্দিরের চূড়ায় পাঁচসের ওজনের একটি সোনার কলস ছিল, সেটি খোয়া গেছে। সেই নবরত্ন মন্দিরে মদনগোপাল ও শ্রীরাধিকার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।এই মদনগোপালই মহিষাদল রথের প্রধান আকর্ষণ।
        
মন্দির
গোপাল জিউ

     মহিষাদলের রথযাত্রায় মহিষাদল রাজ পরিবারের ভূমিকাই এক সময় প্রধান ছিল। এই রথ ২০০ বছরের অধিক প্রাচীন। মহিষাদলের রথযাত্রার সূচনাবর্ষ নিয়ে অল্প হলেও বিতর্ক আছে। কোনো কোনো প্রাবন্ধিক মনে করেন ১৭৭৬ সাল নাগাদ মহিষাদল রথযাত্রার প্রবর্তন করেছিলেন রানি জানকী। কিন্তু প্রামাণ্য ইতিহাস বলে মহিষাদল রথযাত্রা শুরু করেছিলেন জনৈক মতিলাল পাঁড়ে যিনি রানি জানকীর পোষ্যপুত্র। রানি জানকীর মৃত্যুর পর ১৮০৪ সালে এই রথের সূচনা করেন। তবে রানি জানকী সম্ভবত রথের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানা যায়।
     
    আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়াতে যে রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল তা ছিল কাঠের সতেরো চূড়ার রথ। তখনকার দিনে তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০০০ সিক্কা টাকা। রথটি বর্গাকার হয়ে কৌণিকভাবে উঠে গেছে। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩২ ফুট। দ্বিতীয়তলের দৈর্ঘ ও প্রস্থ ২৫ ফুট। তৃতীয়তল ২০ ফুট, চতুর্থ তল ১৫ ফুট। পঞ্চমতলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হল ১০ ফুট। চৌত্রিশটি কাঠের চাকা একলাইনে নেই যাতে দু-চারটি চাকা খারাপ হলেও রথ চলাচলে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। চারখণ্ড কাঠ দিয়ে এক একটা চাকা তৈরি।চাকার উপর যে লোহার পাত থাকে তার ওজন প্রায় একশো কেজি। প্রতিবছর অন্তত দুটো করে চাকা মেরামত করা হয়। সমস্ত রথে মোট বাহান্নটি খুঁটি আছে যার মধ্যে চারটে মোটা খুঁটি রথকে ধরে রাখে। রথটি ৫ তলার সমান। একতলা থেকে উপরের তলায় যাওয়ার সিঁড়ি  ছিল। রথের চারপাশে ছিল ঘুর বারান্দা। সবার উপরে যে চূড়া সেখানে পৌঁছতে গেলে গোলকধাঁধায় পড়তে হতো। রথের অঙ্গ-শয্যায় পতাকাতো ছিলই আর ছিল কলস, চক্র, ঘন্টা।  দেওয়ান  আনন্দ ঘোষের ডায়েরী থেকে জানা যায় ওই রথ তখন সতেরোচূড়া বিশিষ্ট ছিল। কিংবদন্তি আছে রথটি নাকি ‘জীদান’  পাওয়া কাঁঠে তৈরি।  তাই রথের প্রাণশক্তি ছিল। এলাকাবাসী বলেন- রথটি নাকি রাতে উড়ে উড়ে চলে যেতে পারত।


    রাজার লছমনপ্রসাদ  বিভিন্ন কারণে ১৭ চূড়া রথ বাতিল করে ১৩ চূড়া রথ তৈরি করান। ১৮৫২ সালে একটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে সে সময় রথের চাকায় পিষ্ট হয়ে সাতজন মানুষ প্রাণ হারান এরপরেও ১৯৫২ সালে ১৩চূড়া-বিশিষ্ট রথে পৃষ্ঠ হয়ে একটি ১২ বছরের মেয়ে মারা যায়। ১৮৬০ সালে লছমনপ্রসাদ গর্গের জনৈক ফরাসী বন্ধু মঁসিয়ে পেরু রথ দেখতে আসেন এবং তখনই তিনি রথের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য একটি নকশা করেন। নকশায় যোগ হয় চারদিকের ঝুলবারান্দা ও চারকোণের চারটি ঋষি মূর্তি। চূড়ার সংখ্যা কমে হয় তেরো। রথের নিচ তলায় চারটি কাঠের সাধুর মূর্তি রয়েছে। এসবই ১৮৬১ সালে তৈরি। ওই মূর্তিগুলো তৈরি করতে নাকি খরচ হয়েছিল প্রায় এক হাজার টাকা। ওইগুলো তৈরি করতে কলকাতার মিস্ত্রির সঙ্গে কাজ করেছিল চিনা মিস্ত্রি। এই রথের একটি নমুনা লন্ডনের ভিক্টোরিয়া মিউজিয়ামে রক্ষিত রয়েছে।

      এখন যে রথটি মহিষাদলের রথতলা থেকে গুণ্ডিচাবাড়ি যায় তার উচ্চতা এক থাকলেও চূড়ার সংখ্যা কমে তেরো হয়েছে। সেই থেকে বছরের পর বছর রথসংস্কার চলছে মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে। শুধুমাত্র রাজা সতীপ্রসাদ গৰ্গ দুটো সাদা ঘোড়া রথের আগে যোগ করেন। মহিষাদল রাজাদের অন্যান্য স্থাপত্যের মতো রথটির কাঠের কাজ মনোমুগ্ধকর। রথের কোণে লতাপাতার নকশার বদলে হাতি, ঘোড়া, বাঘ, সিংহ প্রভৃতি জানোয়ারের উপর বর্শা হাতে সৈন্য বা নর্তকীদের মিছিল দেখা যায়।
 
       ১৯১২ সালে সতীপ্রসাদ গর্গের রাজত্বকালে প্রথমবার সংস্কার হয় তখন দুটি প্রকাণ্ড কাঠের ঘোড়া লাগানো হয় যা এখনো দেখা যায় এরপর দীর্ঘ ৭৬ বছর পর ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয় বার সংস্কার করা হয় বেশ কিছু জিনিস পরিবর্তন করা হয়। এই রথ টানতে লাইলনের দড়ি ব্যবহার করা হয়। ২০০ হাত করে চারটি রশি দিয়ে রথ টানা হয়।
        
    প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এই রথযাত্রা একটু হলেও অভিনবত্বের দাবি রাখে। আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে রথে আরোহণ করেন রাজবংশের আরাধ্য দেবতা গোপাল জিউ। সঙ্গে থাকেন কেবলমাত্র জগন্নাথদেব। ঠিক আগের দিন রাজবংশের আরাধ্য শালগ্রাম শিলা ‘শ্রীধর জিউ’কে রথে এনে ‘রথের চক্ষুদান' উৎসব হয় যা‘নেত্রোৎসব' হিসেবে বহুল জনপ্রিয়। আঠাশ থেকে তিরিশ কিলোগ্রাম ওজনের এক একটি পিতলের কলস ও দশ থেকে বারো কেজি ওজনের এক একটি চক্র রথের চূড়ায় লাগান হয়।
 
       রথের দিন শোভাযাত্রা  করে জগন্নাথ দেব, গোপালজিউ ও শ্রীধরজিউকে নিয়ে এসে রথে বসানো হয়। পুরীর রথে টান দেওয়ার পরেই রাজবাড়ির কেউ সজ্জিত পালকি করে এসে রথের রশিতে টান দেন। রথের সঞ্চালক মশাই রথ টানার নির্দেশ দেন পতাকা  নাড়িয়ে। আর একহাতে লাল পতাকা নাড়িয়ে রথ থামাবার নির্দেশ দেন। সঞ্চালকের নির্দেশ পেলে গোলন্দাজ কামানের বারুদে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন যাকে বলে কামান দাগা; এরপর রথচলা  শুরু করে।  শোনা যায় বহু পূর্বে দুটি সুসজ্জিত হাতি রথের আগে আগে নিশান নিয়ে চলত। অসংখ্য ভক্তের প্রবল হর্ষধ্বনির মধ্যে রথ এগিয়ে চলে প্রায় এক কিমি দূরের গুণ্ডিচাবাড়ির দিকে। এখন রথে চারটি রশি লগানো হয়। একটিতে মেয়েরা টান দেয় অন্য তিনটিতে পুরুষেরা টান দেয়। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রথ চলতে থকে।

     উল্টোরথের দিনও একইভাবে সেখানে উৎসব পালিত হয়। কোভিদের আগে ২০১৮ সালে রথটির আমূল সংস্কার করা হয়। প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল। গত বছর আবার চারটি চাকা পরিবর্তন করা হয় এবং ভালো করে রঙ করা হয়। রথে দেওয়ালে নানা ধরনের চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে কলকাতা থেকে চিত্র শিল্পী এনে। এখন রথটি পরিচালনা করে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি। এই মেলাটি প্রায় একুশ-ত্রিশদিন ধরে চলে। রথ টানার সময় খল- করতালসহ হরির নাম সংকীর্তন ও ঢাকের বাদ্যি শোনা যায়।






       এরপর গুণ্ডিচাবাটিতে বিগ্রহত্রয়ী অবস্থানকালে সাত দিন ধরে মেলা  বসতো  এখনো বসে। সে সময় রথ উপলক্ষ্যে কলকাতা থেকে নামি যাত্রাদল আসতো, নহবদখানা থেকে সানাইয়ের সুর শোনা যেত। সন্ধ্যা ছটায় যাত্রা শুরু হতো আর দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ দুপুর থেকে যাত্রা দেখতে হাজির হত। গুন্ডিচা বাটি চন্ডীমণ্ডপের আদলে তৈরি ছিল; বর্তমানে সেটাকে ভেঙে নতুন ভাবে সংস্কার করা হয়েছে যা অপূর্ব সুন্দর। এখানে এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়- বিবাহ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা আছে, এছাড়া কেউ চাইলে বহু মানুষকে একত্র করে ভোগ খাওয়াতেও পারেন। এখনো পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে যাত্রা অনুষ্ঠান হয়,  রামরসায়ন,  কীর্তন ইত্যাদি হয়ে থাকে।  বিভিন্ন বই থেকে জানা যায়  বহু পূর্বে রথ টানা শুরুতে সিঙ্গা-ফোঁকা হতো।

        ২০০০ সাল থেকে এই রথ দেখা-শোনার দায়িত্ব নিয়েছে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি। এছাড়া স্থানীয় ক্লাবের উদ্যোগে এই রথ সুষ্ঠুভাবে চালনা করা হচ্ছে। সর্বতোভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ভারত-সেবাশ্রম সংঘ। রথের দিন ধারাভাষ্য দান করেন মহিষাদলের শিক্ষক সংকর্ষণ মাইতি মহাশয়। তাঁকে আমরা কুড়ি বছর ধরে ধারাভাষ্যদান করে আসতে দেখছি।
 
       এই রথ ছাড়াও মহিষাদলের ১৯৮০ সাল থেকে গুরু পূর্ণিমার দিন একটি পাঁচ-চূরার রথ চালাচ্ছে ভারত সেবাশ্রম সংঘ। এখনো এই রথটি সাড়ম্বরে টানা হয়। ওই দিন মহিষাদল বহু মানুষের আনাগোনা ঘটে বাঁশের ঝুড়ি, চালা ইত্যাদি কেনার জন্য। রাজ কলেজ সংলগ্ন কুকুর পাড়ে ১০০ বেশি দোকান বসে। এই ধরনের কেনাকাটা অন্য কোথাও দেখা যায় কিনা  আমাদের জানা নেই।
 
মহিষাদল রাজবাড়ি
                                         


       ২০০১ সালে বিজয়া দশমীতে গুন্ডিচাবাটির দিক থেকে একটি পাঁচ চূরার রথ টানা শুরু হয়েছে। যেটা শহীদ স্তম্ভ পর্যন্ত আসে এবং ফিরে যায়। মহিষাদলের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে তমলুক ও তার পাশাপাশি এলাকায় বহু রথের সূচনা হয়েছে; যেমন সুতাহাটা রথ, রাজনগরের রথ, ময়না ও খঞ্চির রথ, দক্ষিণ কাশিমনগরের রথ, বহিচ বেড়িয়ার রথ, রামবাগের রথ, রঘুনাথ বাড়ির রথ ইত্যাদি।




মাসি বাড়িতে জগন্নাথদেব । এই উপলক্ষ্যে রামরসায়ন পরিবেশিত হচ্ছে।
 
     মহিষাদলের প্রাচীন রথের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে , সারা বছরই পর্যটকদের জন্য রাজবাড়ি ঘুরে দেখার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। রথের কয়েকটা দিন রাজকীয়ভাবেই সেজে উঠেছে মহিষাদল রাজবাড়ি এবং প্রাসাদ চত্বর।পর্যটকদের জন্য রাজবাড়িতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও চালু থাকে সারা বছরই । রাজবাড়িতে রাত্রিযাপনের বুকিং সংক্রান্ত ব্যাপারে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ছোলাবাড়ি প্রাঙ্গণে নাগরদোলা বিভিন্ন দোকানপাট বসে । রাজবাড়ির আম্রকুঞ্জে কাঁঠালের দোকান রথযাত্রা উপলক্ষ্যে উপস্থিত হয়। মহিষাদলের রথের সঙ্গে কাঁঠাল কেনাবেচারই সম্পর্ক চিরকালীন।
===============================
মহিষাদলের রথ প্রচলন নিয়ে কিছু তথ্য--

ক) মহিষাদলের ইতিহাস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে। বইটির নাম- মহিষাদল রাজবংশ। লেখক : ভগবতীচরণ প্রধান। তিনি লিখেছেন : “১২১১ সালে (১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে) রাজা মতিলাল উপাধ্যায় রাজপদে অভিষিক্ত হইলেন....... মতিলাল রাজকার্যে প্রবৃত্ত হইয়া সর্বপ্রথমে গোপালের নিমিত্ত সপ্তদশ চূড়ক সমন্বিত বৃহৎ দারুম রথ নির্মাণ করান। জগন্নাথদেবের রথযাত্রার অনুকরণে প্রতি বর্ষের আযাঢ়ীয় শুক্লা দ্বিতীয়াতে ঐ রথোৎসব গুঞ্চাবাটী নামক প্রাসাদে সপ্তাহকাল ব্যাপিয়া সম্পন্ন হইয়া থাকে।” উল্লেখ্য, এই বইটি উৎসর্গ করা হয়েছিল রাজা জ্যোতিঃপ্রসাদ গর্গ মহাশয়কে এবং বইটি মহিষাদল স্টেটের মহামান্য ম্যানেজার শ্রীযুক্ত বাবু নীলমণি মণ্ডল মহাশয় বইটি আদ্যোপান্ত পাঠ শ্রবণ করে ছাপার অনুমতি দিয়েছিলেন।

খ) প্রখ্যাত ঐতিহাসিক যোগেশচন্দ্র বসু ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস' বইতে লিখেছেন —“মহিষাদলের সুবিখ্যাত সপ্তদশ চূড়ক সমন্বিত বৃহৎ দারুময় রথটি রাজা মতিলালের (উপাধ্যায়) কীর্তি।”

 গ) ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত, রাসবিহারী রায় সম্পাদিত মেদিনীবাণী পত্রিকার মহিষাদল রাজ সংখ্যায়ও রথনির্মাণ-কর্তা হিসেবে মতিলাল উপাধ্যায়ের নাম আছে।

 ঘ) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মহিষাদল রাজ স্টেট থেকে প্রকাশিত History and Account of the Mahishadal Raj Estate বইয়ে K. C. Aitch-লিখেছেন—“It was during his (Matilal Upadhyaya) time that the famous Rath (chariot) with 17 turrets was constructed for the familydeity-Lord Madan Gopal, after the style of the renowned Rath of Jagannath at Puri.” উল্লেখ্য, এই বইটি উৎসর্গ করা হয়েছিল কুমার দেবপ্রসাদ গর্গকে। এছাড়া এই বইতে কুমার দেবপ্রসাদ গর্গের একটি ভূমিকা ছাপা হয়েছে। সেই ভূমিকায় তিনি বলেছেন—“I did not find any wrong representation and I hope this can well be taken as an authentic document on the subject."

ঙ) দি কন্ট্রোলার অব পাবলিকেশনস্, নিউ দিল্লি থেকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এবং অশোক মিত্র সম্পাদিত ‘পশ্চিমবঙ্গের পূজা-পার্বণ ও মেলা' বইতে উল্লিখিত আছে—“যতদূর জানা যায় রানি জানকীদেবীর মৃত্যুর পর (১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ) স্বল্পকালের জন্য মতিলাল পাঁড়ে (উপাধ্যায়) মহিষাদলের রাজত্ব পান। সেই সময় তিনি একটি সতেরো চূড়াবিশিষ্ট সুসজ্জিত রথ নির্মাণ করান।”

এই লেখাটি পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট লিখুন। এই ধরনের আরো লেখা পেতে পেজটি ফলো করুন

  •  তথ্যসূত্র:---
  •  আমাদের মহিষাদল, হরপ্রসাদ সহু, ২০০৫,কল্পকৃতি
  • মহিষাদল রাজপরিবারের ইতিকথা, ইন্দ্রাণী গর্গ ও দিব্যানী গর্গ, ২০২২
  •  পুরী মাহেশ মহিষাদলের রথযাত্রা, সংকর্ষণ মাইতি, ২০০৬, বাকপ্রতিমা
  •  মহিষাদল রাজবংশ, ভগবতীচরণ প্রধান, ১৮৯৭
  • Hitory and Account of the Mahishadal Raj Estate.কে, সি, আইচ, ১৯৪৫
  •  মহিষাদল স্মরণিকা, মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি, ২০০৬
  • মহিষাদল ইতিবৃত্ত, হরপ্রসাদ সাহু ও নীলোৎপল জানা, ২০১৬, বাকপ্রতিমা                      

কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.