চর্যাপদ সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ
প্রশ্ন এবং উত্তর
==========================================
চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন
তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও
প্রাচীনতর রচনা এটি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম
থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন
সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ।
বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো
রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও
হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয়
রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই
পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থগার
থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন।
পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক
বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য
যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
.প্রশ্ন:চর্যাপদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন
তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও
প্রাচীনতর রচনা এটি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম
থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন
সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ।
বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো
রচনা করেছিলেন। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও
হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয়
রচনা। একই সঙ্গে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই
পদগুলোতে উজ্জ্বল। এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নেপালের রাজদরবারের
গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন।
পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক
বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য
যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ।
১.চর্যাপদের
মূল পান্ডুলিপিটি কোথায়?
উত্তরঃ হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী পান্ডুলিপিটি
নেপালের রাজদরবারে ফেরত দেন যথাসময়ে। ১৯৬৫ সালে নীলরতন সেন ঐ পান্ডুলিপি থেকে
গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। গত শতকের ছয় দশকের মাঝামাঝি রাজদরবারের গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে
সেটি জাদুঘরে পরিণত হয়। এই বইগুলো নেপালের জাতীয় আর্কাইভসে নেওয়া হলেও চর্যাপদের মূল এবং সম্পূর্ণ খন্ডটি আর
অক্ষত নেই। হয়তো হারিয়ে গেছে।
২. চর্যাপদ কোন
ছন্দে রচিত ?
উত্তরঃ চর্যাপদের পদগুলো প্রাচীন কোন ছন্দে রচিত তা আজ বলা সম্ভপর নয়। তবে আধুনিক ছন্দের বিচারে
এগুলো মাত্রাবৃত্ত ছন্দের অধীনে
বিবেচ্য।
Dr.Nilotpal Jana
২)
প্রশ্ন: চর্যাপদে চিত্রিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিচয় দিন ।
উত্তরঃ দরিদ্র জনগোষ্ঠীগুলো হল মাঝি (কামলি), বেশ্যা (দারী) , শিকারী (অহেরী), নেয়ে (নোবাহী) । এছাড়াও ডোমিনীর নগরে তাঁত ও চেঙারি বিক্রি করে জীবিকা
নির্বাহের কথা উল্লেখ রয়েছে । এছাড়াও চর্যাপদে কাপালিক ( কাপালি), যোগী (জোই) , পণ্ডিত আচার্য(পণ্ডিতচার্য) ,
শিষ্য (সীস) ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর জীবযাপন চিত্রিত হয়েছে।
৪. চর্যাপদের
পদকর্তাদের সম্পর্কে ধারণা দাও।
চর্যাপদের মোট কবি ২৪ জন। এ নিয়েও
বিতর্ক আছে; যেমন অনেকেই বলেন দারিক পা আর দাড়িম্ব পা
আলাদা ব্যক্তি,কিন্তু গ্রহণযোগ্য মত হল, এই দুইজন একই ব্যক্তি। এভাবে একেকজনের গণনায় কবির সংখ্যা একেকরকম;
তবে গ্রহণযোগ্য মত ২৪ জন।
চর্যাপদের প্রাচীনতম কবি সরহ পা । অনেকে দাবি করেন, লুই পা সবচেয়ে পুরোনো;
তাদের এই ধারণার পক্ষে প্রমাণ, চর্যার
প্রথম পদটি তার রচিত, এই প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আদিকবি'ও বলা হয়। কিন্তু পরে এটা প্রমাণিত হয়েছে,চর্যাপদের
কবিদের মধ্যে প্রাচীনতম কবি সরহ পা-ই। আর সবচেয়ে বেশি পদ লিখেছেন কাহ্নু পা,
১৩টি। সরহ পা লিখেছেন ৪টি পদ। ভুসুক পা লিখেছেন ৮টি, কুক্কুরী পা ৩টি,লুই পা,
শান্তি পা আর সবর পা ২টি করে। বাকি সবাই ১টি করে পদ লিখেছেন।
৫. চর্যাপদ কে
আবিষ্কার করেন?
উত্তরঃ ১৮৮২ সালে প্রকাশিত Sanskrit Buddhist Literature
in Nepal গ্রন্থে রাজা
রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ
করেন | রাজেন্দ্রলাল মিত্রের বই হতেই
প্রভাবিত হয়েই মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী , "চর্যাচর্যবিনিশ্চয়" নামে কিছু পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন ১৯০৭
সালে|পরবর্তীতে ১৯১৬ সালে "বঙ্গীয় সাহিত্য
পরিষৎ" 'হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও
দোহা' নামে প্রকাশিত হয় ড.
মহামোহপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর প্রকাশনায়। এটিই পরে চর্যাপদ
নামে পরিচিতি পায় |
৬.প্রশ্নঃ
চর্যাপদের ১ম পদের ২ লাইন লিখুন ।
উত্তর: ‘কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল
চীএ পইঠো কাল ।।’
৭.প্রশ্নঃ চর্যাপদের ভাষা কি?
উত্তরঃ চর্যাপদের ভাষা মূলত প্রাচীন বাংলা ভাষা । তবে এতে
অপভ্রংশ তথা মৈথিলী, অসমিয়া ও উড়িয়া ভাষার প্রভাবও দেখেতে পাওয়া যায়। অনেকেই এর ভাষাকে সান্ধ্যভাষা
বলে অবিহিত করেন। চর্যাপদের প্রবাদ পুরুষ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে . আলো আঁধারী
ভাষা, খানিক বোঝা যায় খানিক বোঝা যায় না । তবে চর্যাপদের ভাষা যে প্রাচীন
বাংলা ভাষা তা গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করেছে ড.
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় । ভাষার বৈশিষ্ট্য
১. ভাব কোথাও স্পষ্ট কোথায় অস্পষ্ট ২. পদগুলো মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
৮. প্রশ্নঃ চর্যাগীতির ভাষা বিতর্ক লিখুন ।
উত্তরঃ চর্যাপদের সংগ্রহ প্রকাশিত হওয়ার পর এর ভাষা নিয়ে প্রচুর
তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন ভাষাবাষীরা তাদের নিজ ভাষার প্রাচীনতম নমুনা
হিসেবে দাবি করেছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর সম্পাদিত "হাজার বছরের পুরাণ
বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান ও দোহা" গ্রন্থের ভূমিকায় চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদ ও কৃষ্ণাচার্যের দোহা এবং ডাকার্ণব-কে সম্পূর্ণ প্রাচীন বাংলার
নিদর্শন বলে দাবি করেছেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কর্তা ও সম্পাদক বসন্তরঞ্জন
রায় বিদ্বদ্বল্লভও
তাঁর দাবিকে সমর্থন করেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে বিজয়চন্দ্র
মজুমদার চর্যাগীতিকে বাংলার প্রাচীন নমুনা হিসেবে অস্বীকার
করেছিলেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ড.
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চর্যাগান ও দোহাগুলির ধ্বনিতত্ত্ব,
ব্যাকরণ ও ছন্দ বিশ্লেষণ করে‒ তাঁর "The Origin and
Development of the Bengali Language" গ্রন্থে,এইগুলিকেই প্রাচীন বাংলার নিদর্শন হিসাবে গ্রহণ করেন। ১৯২৭
খ্রিষ্টাব্দে ডক্টর মুহম্মদ
শহীদুল্লাহ'র প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয় Les
Chants Mystique de Saraha et de Kanha গ্রন্থে সুনীতিকুমারের মত
গ্রহণ করেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন বা অন্যান্য ভাষার বিদ্বজ্জনেরা যাঁরা চর্যাকে নিজ
নিজ ভাষার প্রাচীন নিদর্শন বলে দাবি করেছিলেন, তাঁরা এই
রকম সুস্পষ্ট ও সুসংহত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের দ্বারা নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে
সক্ষম হন নি।
৯. প্রশ্নঃ চর্যাপদের ধর্মমত সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তরঃ সিদ্ধাচার্যগণ অসামান্য কবিত্বশক্তির অধিকারী হলেও
তাঁরা মূলত ছিলেন সাধক। বৌদ্ধ
সহজযানী চিন্তা, দর্শন ও
সাধনপদ্ধতিই তাই চর্যাপদের উপজীব্য হয়ে ওঠে। এই সহজযানী দর্শন একান্তই ভাববাদী। সিদ্ধাচার্যগণ
সহজমার্গের পথিক ছিলেন। শুষ্ক
তত্ত্বকথা নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট থাকতেন না। সেজন্য প্রথাগত সংস্কারের ধারও তাঁরা ধরতেন না।
মায়াপ্রপঞ্চ ও দ্বৈতবোধের ঊর্ধ্বে স্থিত যে ‘বোধিচিত্ত’, সকল প্রকার
দ্বৈতবোধ পরিহার করে সাধনযোগে অবধূতিকামার্গের পথে সেই ‘বোধিচিত্ত’কে ‘মহাসুখকমল’-এ স্থিত করাই
সিদ্ধাচার্যদের সাধনার লক্ষ্য ছিল। এই ‘মহাসুখ’ সহজযান মতে একটি
বিশেষ তত্ত্ব। সাধক ‘মহাসুখ’ লাভ করলে মায়াময় পৃথিবী
সম্পর্কে জ্ঞানরহিত হন। এখানে
হিন্দুদর্শনের সমাধিতত্ত্বের সঙ্গে ‘মহাসুখ’ দর্শনের সাদৃশ্য
লক্ষ করা যায়। চর্যাকারগণ গুরুবাদকে স্বীকার করেছেন। কুক্কুরীপাদের মতে, এক কোটি লোকের
মধ্যে একজন চর্যার গূহ্যার্থ অনুধাবনে
সক্ষম। সেক্ষেত্রে গুরুভিন্ন গতি নেই। বাস্তবিকই চর্যার
কথা লৌকিক অর্থের বদলে সংকেতে আবৃত হওয়ায় তা সর্বসাধারণের বুদ্ধিতে ঠিক ধরে না। এই দ্বৈতার্থের কয়েকটি
নিদর্শন হলো: নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস
অর্থে 'চন্দ্র', চিত্ত অর্থে 'হরিণ', জ্ঞানমুদ্রা অর্থে 'হরিণী', মহাসুখকায় অর্থে 'নৌকা', শবরী অর্থে 'দেবীনৈরাত্মা' ইত্যাদি
১১.প্রশ্নঃ কবে, কোথায়,
কীভাবে এবং কার সম্পাদনায় চর্যাপদ প্রকাশিত হয়? এর সাথে আর কোন কোন গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ বাংলায় মুসলমান আধিপত্য
প্রতিষ্ঠিত হবার আগে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুসমাজের পীড়নের আশঙ্কায় বাংলার
বৌদ্ধগণ তাঁদের ধর্মীয় পুঁথিপত্র নিয়ে শিষ্যদেরকে সঙ্গী করে নেপাল, ভুটান ও তিব্বতে পলায়ন করেছিলেন– এই ধারণার বশবর্তী
হয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চারবার নেপাল পরিভ্রমণ করেন। ১৮৯৭ সালে বৌদ্ধ লোকাচার
সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি
প্রথমবার নেপাল ভ্রমণ করেন। ১৮৯৮ সালের তার দ্বিতীয়বার নেপাল ভ্রমণের সময়
তিনি কিছু বৌদ্ধ ধর্মীয় পুঁথিপত্র সংগ্রহ করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে
তৃতীয়বার নেপাল ভ্রমণকালে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় নামক একটি পুঁথি
নেপাল রাজদরবারের অভিলিপিশালায় আবিষ্কার করেন। চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদের দোহা এবং অদ্বয়
বজ্রের সংস্কৃত সহজাম্নায় পঞ্জিকা, কৃষ্ণাচার্য বা কাহ্নপাদের দোহা, আচার্যপাদের
সংস্কৃত মেখলা নামক টীকা ও আগেই
আবিষ্কৃত ডাকার্ণব পুঁথি একত্রে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে
(শ্রাবণ, ১৩২৩ বঙ্গাব্দ) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হাজার বছরের পুরাণ
বাঙ্গালা বৌদ্ধগান ও দোঁহা শিরোনামে
সম্পাদকীয় ভূমিকাসহ প্রকাশ করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
মোট ৪৬টি পূর্ণাঙ্গ ও একটি খণ্ডিত পদ পেয়েছিলেন। পুঁথিটির মধ্যে কয়েকটি পাতা
ছেঁড়া ছিল। প্রবোধচন্দ্র বাগচী চর্যার যে তিব্বতি
অনুবাদ সংগ্রহ করেন তাতে আরও চারটি পদের অনুবাদসহ ওই খণ্ডপদটির অনুবাদও
পাওয়া যায়। মূল পুঁথির পদের সংখ্যা ছিল ৫১। মূল তিব্বতি
অনুবাদের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, মূল পুঁথির নাম চর্যাগীতিকোষ এবং এতে ১০০টি পদ
ছিল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিটি চর্যাগীতিকোষ থেকে নির্বাচিত পুঁথিসমূহের সমূল টীকাভাষ্য।
১2 প্রশ্নঃ
চর্যাপদের নাম সম্পর্কে কী জানেন?
উত্তরঃ আবিষ্কৃত পুঁথিতে চর্যা-পদাবলির যে নাম পাওয়া যায়
সেটি হল 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়'। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থে এই নামটিই ব্যবহার করেছেন, সংক্ষেপে এটি ‘বৌদ্ধগান ও দোহা’ বা ‘চর্যাপদ’ নামেও অভিহিত হয়ে
থাকে । কিন্তু আবিষ্কৃত
পুঁথিটি যেহেতু মূল পুঁথি নয়, মূল পুঁথির
নকলমাত্র এবং মূল পুঁথিটি
(তিব্বতি পুঁথি) যেহেতু এপর্যন্ত অনাবিষ্কৃত, সেই কারণে পরবর্তীকালে
চর্যা-পদাবলির প্রকৃত নাম নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
মহামহোপাধ্যায় বিধুশেখর শাস্ত্রী ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে
চর্যার প্রথম পদের সংস্কৃত টীকাটি
(শ্রীলূয়ীচরণাদিসিদ্ধরচিতেঽপ্যাশ্চর্যচর্যাচয়ে। সদ্বর্ত্মাবগমায় নির্ম্মল গিরাং
টীকাং বিধাস্যে স্ফুটনম।।) উদ্ধৃত করে শ্লোকাংশের 'আশ্চর্যচর্যাচয়' কথাটিকে গ্রন্থনাম
হিসাবে গ্রহণ করার প্রস্তাব রাখেন। তাঁর মতে, 'আশ্চর্যচর্যাচয়' কথাটিই নেপালী
পুঁথি নকলকারীর ভুলবশত 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' হয়েছে। তবে এই
মতের যথার্থতা বিষয়ে আচার্য অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সন্দেহ প্রকাশ
করেন।প্রবোধচন্দ্র বাগচী ওই একই সূত্র ধরে চর্যা-পুঁথির নাম 'চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়' রাখার পক্ষপাতী
ছিলেন। কিন্তু আচার্য অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই
মত খণ্ডন করে লিখেছেন, "'আশ্চর্যচর্যাচয়' নামটিও অযুক্তিযুক্ত নয়।
কিন্তু 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' ও 'আশ্চর্যচর্যাচয়', দুই নামকে মিলিয়ে 'চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়' নামটি গ্রহণ করা
যায় না। কারণ এই 'জোড়কলম' শব্দটি আধুনিক
পণ্ডিতজনের পরিকল্পিত।” আধুনিক গবেষকগণ তেঙ্গুর গ্রন্থমালা (Bastan-hgyar) থেকে অনুমান করেন
মূল পুঁথিটির নাম ছিল চর্যাগীতিকোষ এবং তার সংস্কৃত
টীকাটি 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' — অধ্যাপক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই মত গ্রহণ করেছেন।
১৩. প্রশ্নঃ চর্যাপদগুলো কারা রচনা করেন ? সহজিয়া বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ
• চর্যাপদ রচনা করেন বৌদ্ধ সহজিয়াগণ।
• সহজিয়াগণ বৌদ্ধ সহজযান পন্থি। তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন
পরিবর্তনের ধারায় সহজিয়াদের উৎপত্তি। স্বদেহ কেন্দ্রীক সহজ পন্থায় সাধনা করত বলে
এদের সহজিয়া বলা হয়। সহজিয়াগণ তাত্বিক চিন্তা ধারার দ্বারা প্রভাবিত বলেই
ধর্মসাধনায় দেহকে বাদ দেন নি। তাদের মতে, সমস্ত সত্য
দেহের মধ্যে অবস্থিত, সেই সত্যই সহজ'।
বৌদ্ধদের মতে, বৈষ্ণব সহজিয়া সম্প্রদায় |
সহজিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাউলদের চিন্তার সাদ্শ্য রয়েছে।
১৪.প্রশ্নঃ
চর্যপদে নারীদের স্থান ও ভূমিকা সম্পর্কে লিখুন ।
উত্তরঃ চর্যাপদের যুগের যুগে নারীরা খুবই স্বাধীন ছিল। তারা
স্বেচ্ছায় পেশা ও সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার রাখত।
প্রশ্নঃ চর্যাপদের ভাষা যে বাংলা তা সর্বপ্রথম কে
প্রমাণ করেন।
উত্তরঃ চর্যাপদের আবিস্কারের
সময় অনেক ভাষার পন্ডিতেরাই একে তাদের ভাষা বলে দাবি করেছিলেন বটে, কিন্তু ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে "Origin and Development of Bengali Language"
গ্রন্থে এগুলোর ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্রথম আলোচনা করেন এবং
প্রমান করতে সক্ষম হন যে,চর্যাপদ আর কারো নয়; সদ্য নির্মীয়মান বাংলা ভাষার নিদর্শন।
Dr.Nilotpal
Jana
Mahishadal Girls’
College
Phone-9932312235
কোন মন্তব্য নেই
ok