Translate

শরৎচন্দ্রের পল্লীসমাজ উপন্যাসের নায়ক রমেশ চরিত্রের পরিচয় দাও



রমেশ

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "পল্লীসমাজ" উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হল রমেশ। তিনি একজন তরুণ, শিক্ষিত যুবক এবং গ্রামের উন্নতিকল্পে আগ্রহী। রমেশ গ্রামে প্রচলিত কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং সমাজের উন্নতির জন্য চেষ্টা করেন।

"পল্লীসমাজ" উপন্যাসে রমেশ চরিত্রটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিচে তার কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো---

শিক্ষিত ও প্রগতিশীল-- রমেশ শহরে লেখাপড়া করে আসা একজন শিক্ষিত যুবক। তিনি গ্রামের সনাতন প্রথা ও কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে আধুনিক চিন্তা-ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত।

উদার ও মানবতাবাদী-- রমেশের মনে গ্রামের মানুষের জন্য গভীর মমত্ববোধ রয়েছে। তিনি তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে চান এবং সমাজের উন্নতি বিধানে আগ্রহী। গ্রামের প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতির সমালোচনা করেন এবং সেগুলোর সংস্কারের চেষ্টা করেন।

সংগ্রামশীল-- রমেশ গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। তিনি সমাজের স্বার্থে নিজের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করতেও প্রস্তুত।

ব্যর্থ প্রেমিক-- রমেশের জীবনে প্রেম ও ভালোবাসার ক্ষেত্রেও দুঃখ ও ব্যর্থতা রয়েছে। রমার প্রতি তার প্রেম ছিল গভীর, কিন্তু সামাজিক কারণে তা সফল হয়নি।

========================================

রমেশ

   'পল্লীসমাজ' উপন্যাসের প্রধান পুরুষ চরিত্র রমেশ। রমেশ একজন আদর্শ চরিত্র। রমেশ একজন কর্মতৎপর, বলবান ও সাহসী যুবক। শরৎচন্দ্রের জীবন ভাবনার ধারক এই রমেশ। পল্লী-সমাজের ক্ষয়িষ্ণু যে রূপ আলোচ্য উপন্যাসে তুলে ধরেছেন তা থেকে কিভাবে মুক্তিলাভ সম্ভব-লেখক সেদিকেও আলোকপাত করেছেন। এ বিষয়ে তিনি দুটি চরিত্রের সহায়তা গ্রহণ করেছেন। এর একজন বিশ্বেশ্বরী, অপর চরিত্র রমেশ। বিশ্বেশ্বরী যদি হন তত্ত্বকথার ধারক তাহলে রমেশকে বলতে হয় সেই তত্ত্বের প্রয়োগকর্তা। বেণী ঘোষাল, গোবিন্দ গাঙ্গুলীর মতো ভ্রষ্ট চরিত্রের মানুষের পাশে রমেশকে স্থাপন করে তথাকথিত সমাজপতিদের মুখোশ উন্মুক্ত করেছেন এবং কিভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলার পল্লীকে দুর্দশামুক্ত করা যায় সেই পথ নির্দেশ করেছেন।

   রমেশ কুয়াপুরের জমিদার তারিণী ঘোষালের একমাত্র পুত্র। গ্রামের সঙ্গে তার দীর্ঘদিন কোন সংস্রব ছিল না। শৈশবে তার মাতৃবিয়োগ হয়। এরপর দীর্ঘ দশ-বারো বছর সে গ্রামের বাইরে কাটিয়েছে। মাতৃ-বিয়োগের পর রমেশ মাতুলালয়ে চলে যায়, রুড়কিতে সে ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ছিল। এক মামলার তদারকি করতে সদরে গিয়ে তারিণী ঘোষাল আকস্মিক ইহলোক ত্যাগ করেন। এই দুঃসংবাদ পেয়ে রমেশ গ্রামে ফিরে আসে। তখন সে তেইশ বছরের যুবক। বাংলার পল্লী-অঞ্চলের জীবনযাত্রা, পল্লী-বাসীর মানসিকতা সম্পর্কে তার কোনরূপ ধারণা ছিল না। বৈষয়িক কর্ম সম্পর্কেও সে ছিল অনভিজ্ঞ। পিতা তারিণী ঘোষাল জমিদারীর কাজে বিশেষত জমিজমা, মামলা-মোকদ্দমা সম্পর্কে ছিলেন অত্যন্ত পটু। এই বৈষয়িক কারণেই ভ্রাতুষ্পুত্র বেণী ঘোষাল এবং আত্মীয়-প্রতিম যদু মুখার্জীর কন্যার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পিতৃদায়গ্রস্ত রমেশকে এই প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। একদিকে অভিজ্ঞতার অভাব, অন্যদিকে পিতার শত্রুদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে তাকে ব্যতিব্যস্ত হতে হয়েছে। সবচেয়ে বড়কথা রমেশের আদর্শবাদ এবং মহৎ কর্মপ্রয়াসকে গ্রামবাসীরা সহজ-মনে গ্রহণ করতে পারেনি। স্বভাবতই তারাও নানাভাবে রমেশকে প্রবঞ্চিত করতে থাকে। এই সামাজিক পরিবেশে কিভাবে রমেশ আঘাতে আঘাতে নিজের সঠিক পথটি আবিষ্কার করেছিল, তারই বিবরণ 'পল্লী-সমাজ'-এর সংক্ষিপ্ত কাহিনি।

   রমেশের এই জীবন ইতিহাস আরো জটিলতা প্রাপ্ত হয়েছিল তারই প্রেমিক রমার আচরণে। বাল্যবিধবা রমা রমেশকে ভালোবাসত, এক কালে তাদের সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর। নানাবিধ কারণে রমা-রমেশের বিবাহের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি। বাল্যবিধবা রমা নিজের এই দুর্বলতা গোপন করার জন্য বেণী ঘোষাল ও অন্যান্যদের প্ররোচনায় রমেশের উপর পুনঃ পুনঃ আঘাত করেছে। রমার মিথ্যা সাক্ষ্যেই রমেশকে ছ'মাস কারাবাস করতে হয়েছিল। এভাবেই একদিকে বাইরের বৃহৎ শক্তি, অন্যদিকে একান্ত প্রিয়জনের আঘাতে রমেশের সংক্ষিপ্ত জীবন-ইতিহাস তরঙ্গ সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।

রমেশ চরিত্র পরিকল্পনায় শরৎচন্দ্র আয়োজন এবং উপকরণের কার্পণ্য করেননি। নায়কোচিত সকল গুণেই রমেশ চরিত্র উজ্জ্বল। রমেশ বিদ্বান, 'বিনয়ী, সৎচরিত্রের মানুষ। তৎকালে জমিদার তনয়দের নানাবিধ চারিত্রিক বিচ্যুতি দেখা যেত। শরৎচন্দ্রের নিজের রচনাতেই এর নিদর্শন আছে। কিন্তু রমেশ সংযমী মানুষ। সর্বপ্রকার চারিত্রিক কলুষতা থেকে সে মুক্ত। সে নিরামিষ আহার করে। খাদ্যের বিষয়ে তার কোন প্রলোভন নেই। তার শরীরের গড়নটিও মজবুত। লেখক বিভিন্ন সময়ে রমেশের "সুদীর্ঘ এবং অত্যন্ত বলশালী দেহ", প্রশস্ত বক্ষের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। রমেশের নিজের ভাষায় খোট্টার দেশের ডাল, রুটি খাওয়া দেহ। রমেশ নিজে লাঠি খেলায় ওস্তাদ। রমেশের বীর্যবত্তার পরিচয় ধরা পড়েছে পেশাদারী লাঠিয়াল আকবরের উক্তিতে। রমেশ যখন প্রজাদের স্বার্থে বাঁধ কাটতে গিয়েছিল তখন তাকে বাধা দিতে গিয়েছিল সপুত্র আকবর। কিন্তু রমেশের সঙ্গে তারা লড়াইতে পেরে ওঠেনি। রমেশের প্রশংসা করে আকবর বলেছিল-"...সাবাস! হাঁ মায়ের দুধ খেয়েছিল বটে ছোটবাবু! লাঠি ধরলে বটে।" এভাবে এবং আরো ছোটখাটো কিছু ঘটনায় রমেশের শরীর, স্বাস্থ্য, ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। 

   রমেশ ভদ্র এবং পরোপকারী ব্যক্তি। লেখক এক নাটকীয় ভঙ্গিমায় রমেশকে পাঠকের সামনে উপস্থিত করেছেন। প্রথম পরিচ্ছেদে বেণী ঘোষাল এবং রমার মাসি রমেশ সম্পর্কে কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছিল। বেণী বলেছিল-"এতদিন নাকি বোম্বাই না কোথায় ছিল। কেউ বলচে ডাক্তারি পাশ করে এসেচে, কেউ বলচে উকিল হয়ে এসেচে।" সবশেষে বেণীর অভিমত: "সমস্তই ফাঁকি, ছোঁড়া নাকি পাঁড় মাতাল।" এভাবে একটা বিরূপ পটভূমিকা তৈরি করার পর রমেশ যখন উপস্থিত হল তখন তার শরীরে গুরুদশার চিহ্ন- রুক্ষ মাথা, খালি পা, উত্তরীয়টা মাথায় জড়ানো। প্রথম আবির্ভাবে রমেশ, বেণী এবং রমার সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেছে তাতে তার চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং সৌজন্যবোধ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে বেণীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং রমার প্রতি আন্তরিকতার অভাব ছিল না। শুধু তাই নয়, রমার মাসির  কদর্য বাক্যেও রমেশ ধৈর্য হারায়নি। এর পরেই পিতৃশ্রাদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনায় রমেশের আচার-আচরণ সম্পর্কে আরো অবহিত হওয়া গেছে। গোবিন্দ গাঙ্গুলী, ধর্মদাস চাটুয্যে, বেণী ঘোষাল-এদের চিনতে রমেশ ভুল করেনি। কিন্তু রমেশ কখনই এদের প্রতি বিরূপ আচরণ করেনি। কিন্তু রমেশের মধ্যে ছিল চারিত্রিক দৃঢ়তা। তাই জ্যাঠাইমার অনুরোধ সত্ত্বেও সে বেণী ঘোষালের কাছে যেতে অস্বীকার করেছিল এবং নিমন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমাজপতিদের নির্দেশকে মেনে নিতে অসম্মত হয়েছিল।

   বিবিধ কাজকর্মের মাধ্যমে রমেশের সৎ গুণাবলী প্রকাশিত হয়েছে। রমেশ ক্ষুদ্র স্বার্থ থেকে মুক্ত। তেঁতুল গাছের কাঠ কিংবা পুকুরের মাছের সামান্য শরিকি অংশের জন্য সে উতলা হয় না। চাষীদের প্রয়োজনে বাঁধ কেটে জল বের করে দিলে তার আর্থিক ক্ষতি হবে-একথা জেনেও সে এই কাজ করতে কিছু মাত্র দ্বিধা বোধ করে না। গ্রামের স্কুলের উন্নয়নে মুক্ত হস্তে অর্থ ব্যয় করতে পারে। পিতৃশ্রাদ্ধে শুধু ব্রাহ্মণ নয়, সাধারণ ঘরের মানুষকে, এমনকি গোবিন্দ গাঙ্গুলীর ভাষায় 'ছোটলোকদের'ও সে অন্ন বস্ত্র দান করেছে। শুধু নিজের গ্রামের হিন্দু প্রজাদের জন্য নয়, ভিন্ন গ্রামের মুসলমানদের জন্যও সে বিদ্যালয় স্থাপন করেছে এবং প্রয়োজনীয় অর্থব্যয় করেছে। বেণী ঘোষালের মত চরম শত্রুও বলেছিল রমেশ তার দাদামশাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ এভাবে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করতে চেয়েছে। "রমেশ প্রচার করে দিয়েচে, যেখানে নতুন স্কুল হবে, সেইখানেই ও দু'শ করে টাকা দেবে। ওর দাদামশায়ের যত টাকা পেয়েচে সমস্তই ও এইতে ব্যয় করবে।   ওকে একটা পীর-পয়গম্বর বলে ঠিক করে বসে আছে।" একথা যে অত্যুক্তি নয় তা সনাতনের উক্তি থেকে প্রমাণিত হয়। সে বেণীকে বলেছিল- মুসলমানেরা "ছোটবাবুকে হিঁদুদের পয়গম্বর বলে মনে করে।" তাই রমেশের কারাবাসের সংবাদে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়।

   এমনকি জাফর আলির মতো কৃপণ ব্যক্তিও রমেশের জেলের দিন তাদের স্কুলের জন্য হাজার টাকা দান করেছে। শুধু অর্থ ব্যয় নয়, রমেশ মানুষকে ভালোবেসেছে, তাদের সঙ্গ দিয়ে উপকার করতে চেয়েছে। রমেশ মানুষের মধ্যে জাতিভেদ মেনে চলে না। হিন্দু-মুসলমানেরা স্পর্শ দোষকেও অস্বীকার করে। রমার দাসীর কথা থেকে আরো জানা যায় রমেশের উদ্যোগে গ্রামের রাস্তাঘাটের প্রভুত উন্নতি হয়েছিল- "পথে আর এতটুকু কাদা পাবার যো নেই দিদিমা। ছোটবাবু এমনি রাস্তা বাঁধিয়ে দিয়েচেন যে, সিঁদুর পড়লে কুড়িয়ে নেওয়া যায়। ভগবান তাঁকে বাঁচিয়ে রাখুন, গরীব-দুঃখী সাপের হাত থেকে রেহাই পেয়ে বেঁচেচে।"

   এই জাতীয় কাজ কর্মের জন্য রমেশকে কখনো কখনো অপরের উপহাসের পাত্র হতে হয়েছে। রমেশের উদারতাকে কেউ ভেবেছে বোকামি, কেউবা ভেবেছে দুর্বলতা। গোপাল সরকার ভৈরব আচার্যের কাছে রমেশ সম্পর্কে আক্ষেপ করে বলেছিল- "দিবারাত্রি বই নিয়ে থাকলে, আর শরিকদের এত ভয় করলে কি বিষয় সম্পত্তি রক্ষে হয়? যদু মুখুয্যের কন্যা-স্ত্রীলোক; সে পর্যন্ত শুনে হেসে কুটিপাটি। গোবিন্দ গাঙ্গুলীকে ডেকে নাকি সেদিন তামাশা করে বলেছিল- রমেশবাবুকে বলো, একটা মাসোহারা নিয়ে বিষয়টা আমার হাতে দিতে। রমেশের ভালোমানুষির সুযোগ গ্রহণ করে ভৈরব আচার্য রমেশকে ঠকাতে পেরেছে। যে রমেশ বিনা দ্বিধায় সহস্রাধিক টাকা দিয়ে বেণীমাধবের মিথ্যা মামলা থেকে ভৈরবের বাস্তু ভিটা রক্ষা করেছিল সেই ভৈরব মামলায় অনুপস্থিত থেকে শুধু রমেশের অর্থের ক্ষতি করেনি; তার পৌত্রের অন্নপ্রাশনে রমেশকে পরিত্যাগ করে বেণী ঘোষালের দলে ভিড়েছিল। এই ঘটনা জানতে পেরে রমেশ ভৈরবের বাড়িতে উপনীত হয়ে তার উপর চড়াও হয়। এই ঘটনাবলির মাধ্যমে লেখক শুধু গ্রামবাসীদের চরিত্রকে তুলে ধরেননি, রমেশ চরিত্রের অপর একটি দিককে উদ্‌ঘাটিত করেছেন। রমেশ যে যন্ত্রবিশেষ নয়, রক্ত মাংসের মানুষ, তার মধ্যেও আবেগ-অভিমান, ক্রোধ বিরাজমান এটা তিনি দেখাবার সুযোগ পেয়েছেন। গড়পুকুরের মাছের জন্য রমেশের হুঙ্কার এবং ভৈরব আচার্যের গৃহে উপনীত হয়ে অসংযত আচরণ এবং রমার সামনে জ্যাঠাইমার কাছে তার হতাশ মনের অভিব্যক্তিগুলি প্রমাণ করে রমেশ রক্তমাংসের মানুষ। এই জাতীয় আরো ছোটখাটো ঘটনায় রমেশের আবেগ, অনুভূতি, মান, অভিমান প্রভৃতিকে তুলে ধরে লেখক তাঁর উপন্যাসের নায়ককে পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে চেয়েছেন।

   রমেশ চরিত্রের অপর দিকটি জড়িয়ে রয়েছে রমার সঙ্গে। রমা-রমেশের প্রণয় সম্পর্কের গতিপথটি বড়ই বিচিত্র।অন্যান্য সময়েও রমার কাছে সে তার অভিমানকে বা প্রতিবাদকে প্রকাশ করেছে। রমার প্রতি তার দুর্বলতাও গোপন থাকেনি। রমেশ নিজেই রমাকে বলেছিল: "তোমাকে ভালোবাসতাম রমা। আজ আমার মনে হয়, তেমন ভালোবাসা বোধকরি কেউ কখনো বাসেনি; ছেলেবেলায় মার মুখে শুনতাম আমাদের বিয়ে হবে। তারপরে যেদিন সমস্ত আশা ভেঙ্গে গেল, সেদিন আমি কেঁদে ফেলেছিলাম, আজও আমার তা মনে পড়ে।" শুধুই প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি নয়, পূর্বে, পরে নানা আচরণের মাধ্যমে এমনকি রমার প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও রমেশ রমার প্রতি তার অনুরাগকে পোষণ করেছে।

   বাস্তবিক শরৎসাহিত্যে রমেশ এক স্মরণীয় সৃষ্টি। নারীচরিত্র প্রধান শরৎ সাহিত্যে রমেশের মত সক্রিয় চরিত্র নিতান্তই বিরল। লেখকের জীবনবোধে এই চরিত্র- "আশা ও আদর্শের ধ্যানমূর্তিতে” পরিণত হয়েছে। পরিশেষে রমেশ চরিত্রের মূল্যায়নে ড. অজিতকুমার ঘোষের  অভিমত উল্লেখ করা যায়। শরৎচন্দ্রের "আশা ও আদর্শের ধ্যানমূর্তি হইল রমেশ, যে তাহার সরল, সতেজ ও সক্রিয় দেহ ও মন লইয়া মুমূর্ষু সমাজকে প্রাণরসে চেতনায়িত করিতে আসিয়াছে। জড়ত্বকে আঘাত করিতে গেলে জড়ত্বের নিষ্ঠুর প্রতিঘাত সহ্য করিতে হইবে, ইহার ফলে অনেক কিছু হারাইতে হইবে, অনেক দুঃখ পাইতে হইবে, তথাপি পরাজয় স্বীকার করা চলিবে না। রমেশও পরাজয় স্বীকার করে নাই এবং শরৎচন্দ্রও তাহা স্বীকার করেন নাই। বর্তমান অন্ধকার, কিন্তু ভবিষ্যৎ আকাশের সুনিশ্চিত আলোর শিখা তাঁহার চোখে পড়িয়াছে।"

=============================

Follow  ও  Like করুন।

 


কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.