Translate

সংসার সীমান্তে: ট্র্যাজিক জীবনের কথা




সংসার সীমান্তে : ট্র্যাজিক জীবনের কথা
প্রেমেন্দ্র মিত্র

মানুষের জীবনের জন্যে নানা ধরনের জীবিকা। কোনো কোনো জীবিকা সমাজের মানুষের কাছে পরিচয় দেবার নয়। অথচ এ ধরনের জীবিকা কেন মানুষ গ্রহণ করে তা কোনো বুদ্ধিজীবীর ভাবনায় হয়তো স্থান পেতে পারে, কিন্তু দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র তা যদি না ভাবে তাহলে সে ভাবনার মোটফল দাঁড়ায় শূন্য। জীবনে সামান্য বাঁচার তাগিদে কেউ দেহব্যবসায়ী বা ব্যবসায়িনী হয়, কেউ চুরি করে, কেউ বা ডাকাতি করে। দিনের পর দিন বিগত যৌবনা তার দেহ সৌন্দর্য তুলে ধরে পথের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে, আবার চুরি করে দৈহিক নির্যাতন পেয়েও ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে, অতীতকে বিদায় দিয়ে বর্তমানের পুতিগন্ধময় সময়ের পাটাতনে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। অন্যদিকে রূপজীবিনী ক্ষয়ে-যাওয়ার রূপের কিনারে দাঁড়িয়ে জীবনকে নতুন করে উপভোগ করার বাসনা নিয়ে রাতের পর রাত জাগে। তবু কেউই সফলতার শীর্ষে পৌঁছতে পারেনা। এভাবেই ট্যান্টালাস-সিসিফাসের মতো তাদের জীবনের অধ্যায় রচনা হয়।

রজনী-অঘোরের যৌবন সীমান্তে ঘর বাঁধার বাসনা পুষ্পিত হল না, বরং অনাব্যশকভাবে তা শুকিয়ে গেল। গার্হস্থ্যজীবন শুরু (সংসার) করার সুযোগও পেল না দেহজীবিনী রজনী এবং চৌরবৃত্তিতে রত অঘোর দাস। অঘোর শেষবারের মত চুরি করতে চেয়েছিল-শুধুমাত্র নতুন করে জীবনের মানে খোঁজার জন্যে। তারা দুজনেই সংসার সীমান্তে দাঁড়িয়ে সংসারের ঝুঁকি নিয়েও ব্যর্থ হল। অনিবার্যভাবে উভয়ের মনে যে নিষ্পাপ বাসনা দানা বেঁধেছিল তা উপ্ত হল না-অঙ্কুরোদগম বা চারাগাছ বা তা থেকে কোনো মহীরুহ হওয়ার দুরাশা আর তাদের মধ্যে স্থান পেল না। এভাবেই 'সংসার সীমান্তে' গল্পের পরিণতি চিহ্নিত হল।

এক বিশ্রী বাদলের রাত। বৃষ্টির ঝাপটা থেকে নিজেকে বাঁচাতে কেরোসিনের ডিবিয়ার আলো দুহাতে তা আড়াল করে ক্লান্ত হতাশ চোখে পথের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে রজনী। তার স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য কিছুই উল্লেখ যোগ্য নয়-তার দেহদ্যুতি প্রসঙ্গে গল্পকার যা বলেছেন তা তো বিশেষভাবে প্রণিধান যোগ্য। 'কোনোদিন তাহার দেহে ও মুখে প্রাণের শিখার দ্যুতি ছিল কিনা তাহাই সন্দেহ হয়। ধূম ও কালিই এখন তাহার সর্বস্ব। নারীত্ব ও যৌবনের সে একটা কুৎসিত বিকৃতি মাত্র'। তার খদ্দের ধরার জন্যে এই বর্ষণক্লান্ত রাতে বসে থাকাও বাড়িউলির কর্কশ-উক্তিতে জর্জরিত হয়ে ওঠে। পরণের বসন সিক্ত, বৃষ্টির ঝাপটায় হাত-পাও সিক্ত হয়ে উঠেছে। তবুও সে বসে থাকে। হঠাৎ পদধ্বনি-ধীর থেকে দ্রুত। হঠাৎ এক কৃষ্ণকায় বিশাল মূর্তির আগমন এবং তার সম্ভাষণ, 'চ. তোর ঘরে চ'। যেন কত পরিচিত, কত আপনজন। হঠাৎ ফুঁ দিয়ে আলোটা নিভিয়ে দিল লোকটি। রজনী বিহ্বল। চীৎকার করতেও পারে না। তার মুখ চাপা দিয়ে রাখে লোকটি। রজনী ভীত হয়ে তাকে চলে যেতে বলে। কিন্তু সে তো শোনেনা। তারপর বাইরে পদশব্দ শুনে সচকিত হয়ে অঘোর রজনীর মুখে হাত ঢাকা দিয়ে তীক্ষ্ণ চাপা গলায় বলে ওঠে, টু শব্দটি করেছিস কি খুন করে ফেলব।' নিরুপায় হয়ে রজনী তাকে রাত্রে ঘরে আশ্রয় দেয়। লোকটি একটি টাকা তার হাতে প্রথমেই দিয়ে দেয়। খোলার চাল, নিরন্তর বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অবস্থা, কেরোসিন-লণ্ঠন, নোংরা বিছানা-তাতেই সে নৌকার মত একজোড়া জুতো খুললে খানিকটা জল ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। আধো আলো আধো ছায়ায় লোকটিকে ভালোভাবে চেনা যাচ্ছিল না, এখন স্পষ্টতর হতে রজনী দেখল তার বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে, আর তার স্বাস্থা এবং শক্তি অটুট আছে। লোকটির স্বভাব রজনী বুঝতে পারেনি। একটা ছোট্ট পুটলি নিয়ে এসেছিল-রজনী সেটা দেখতে চেয়েছিল-কিন্তু লোকটি নিষেধ করেছে। লোকটি যেমন ক্লান্ত, তেমনি রজনীও ক্লান্ত ছিল-তাই তারা অনেকরাত পর্যন্ত জেগে ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর ভোরে দরজা হাট করে খোলা রেখে লোকটি পালিয়ে যায়-এতে সারা বাড়িতে গণ্ডগোল শুরু হয়। রজনীর আঁচল থেকে চাবি নিয়ে সে দরজা খুজে চলে গেছে।

লোকটি বিকেলে পোশাক পরিচ্ছদ পরিবর্তন করে আসতেই রজনী চিনতে পারল যে-এই লোকটিই গতরাত্রে এসেছিল-এ কথায় বাড়িশুদ্ধ সকলেই কিল, চড়, লাথি মেরে, চোর ভেবে লোকটাকে আধমরা করে ফেলল। লোকটা মেঝেতে পড়ে থাকল। কেউ কেউ পুলিশের ভয় দেখাতে রজনীকেই এজন্যে দোষী ভাবতে লাগল সকলেই। আর সেই সুবাদে রজনীকেই লোকটির ক্ষতস্থান ধুইয়ে দেওয়া, নার্সিং করা সবকাজেই করতে হল অকাতরে। ধীরে ধীরে লোকটি রজনীর সেবা-যত্নে একসপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্তু এর মধ্যে লোকটি রজনীকে মাত্র পাঁচটাকা দিয়েছিল, শুধুমাত্র পুলিশের ভয়ে রজনী তার পরিচর্যা করেছে, কিন্তু তার পক্ষেতো আর বেশিদিন চালানো সম্ভব নয় বলেই টাকা পয়সা নিয়ে বচসা শুরু হল-একদিন সত্যি সত্যিই লোকটি চলে গেল। রজনীকে সে জন্যেই বাড়ির আর পাঁচজনের গালাগাল হজম করতে হল। রজনীর কেমন যেন একটা মায়া লোকটির ওপর হয়েছিল-তাই তার আগমন প্রত্যাশায় সে বসে থাকে। 

তারপর একদিন অনেকগুলো টাকা এনে রজনীর কাছে ফেলে দিয়ে রজনীর চমক সৃষ্টি করল সে। রজনী বুঝতে পেরেছিল যে সে চুরি করতে গিয়ে কপালটা কেটে গিয়েছিল। রজনী তাকে চুরি থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার অনুরোধ করেছে। এসময়ই তার কথার মধ্যে কোথায় যেন একটু ব্যথার সুর ধ্বনিত হয়ে ওঠে। রজনী বলেছে, যেভাবে মার খাচ্ছিস, 'অমনি করেই তুই কোনদিন মরে যাবি।' তখন লোকটি বলেছে- 'তা গেলেই বা কার কি? অঘোর দাসের জন্য তিনকুলে কাঁদবার কেউ নেই।' রজনী জোরদিয়ে বলেছে, চুরি যদি সে না ছাড়ে তাহলে আসতে পারবে না। অঘোর উত্তরে জানিয়েছে কাজকর্ম পাওয়া এতসহজ নয়, তাছাড়া আর দলও কি তাকে ছেড়ে দেবে? তখন রজনী তাকে এদেশ ছেড়ে চলে যাবার পরামর্শ দিয়েছে। অঘোর তখন দ্বিধাহীনভাবেই জিগ্যেস করেছে, 'তুই যাবি সঙ্গে?' এখানেই উভয়ের মনের মধ্যে একটা রোম্যান্টিকতার অঙ্কুরোদগম হল। রজনী অকপটে জানিয়েছে যে সে যেতে পারে, কিন্তু তার নানা জনের কাছে ঋণ শোধকরা জরুরী। তারপর রজনীর কাছে শেষ বারের মত চুরি করার শপথ নিয়ে সকালে বিদায় নেয়। 

বিকেলে ঢাউস একখানা বাক্স ঘাড়ে করে নিয়ে আসে-যাতে আছে নানা সাজ সরঞ্জাম-কারণ তারা যে বিয়ে করতে যাচ্ছে। সবশেষে তারা হিসেব করে দেখল যে আর মাত্র কুড়িটাকার অভাব-ঐ টাকা জোগাড়হলেই পরদিন সকালে তারা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে দূরে-সেখানে ঘর বাঁধবে। জিনিসপত্র সব বাঁধছাদা করে বসে থাকার পরামর্শ দিয়ে অঘোর অন্তর্হিত হয়-ফিরে এসে তারা কলকাতা ছেড়ে রওনা হবে নতুন সংসারে।

এখানেই গল্পের শেষ নয়। রজনী অসীম ধৈর্যে আর প্রতীক্ষায় অঘোরের জন্য বসে থাকে-অঘোর ফেরে না। অঘোর শেষ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, মহামান্য আদালতের সামনে অস্বাভাবিক কান্নাকাটি করে বলেছে আর সে কখনো চুরি করবে না-এপথ সে ছেড়ে দিয়ে চায়-জেল হলে তার সর্বনাশ হয়ে যাবে। কিন্তু আদালতের নির্দেশে তার পাঁচ বছরের জেল হয়েছে। আর বিগতযৌবনা রজনী এখনো একরাত্রের অতিথির জন্য হতাশ নয়নে পথের দিকে চেয়ে প্রতীক্ষা করে। তেলেনাপোতার যামিনী যেমন প্রতীক্ষা করে বসেছিল, রজনীর প্রতীক্ষা তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়-কারণ সমাজের এক ঘৃণ্য-পরিবেশে বাস করে রজনীও যে ভালোবাসতে চেয়েছিল-আর সে ভালোবাসা মুকুলিত হল না-এর চেয়ে দুঃখের আর কী আছে? গল্পটির বুনোটে অসামাজিকভাবে জীবিকা অর্জনে (?) নিযুক্ত নারী-পুরুষের রোম্যান্টিক মিশন আখ্যান যা ট্র্যাজেডি পর্যবসিত। তাদের প্রথম মিলন-এক বর্ষণমুখর রাত্রে পতিতাপল্লীর নিভৃতকোণে রজনীর ঘরে অঘোরের মত চোরকে ভয়ে ভয়ে স্থান দেওয়া এবং রাত্রি শেষে কাউকে না জানিয়ে রজনীর আঁচল থেকে চাবি খুলে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্যে কতখানি মাত্রা এনেছিল তা ওরা দুজনই বলতে পারে। কিন্তু যখন পরদিন তার আসায় রজনীর তার ঘরে চোর হিসেবে সনাক্তকরণের জন্যে অঘোর অমানুষিক ভাবে দৈহিক নির্যাতনের শিকার হলে থানা পুলিশের ভয়ে আবার সেই রজনীকে তার সেবার সব দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তার সেখানে আটদিন ধরে থাকা এবং রজনীর যত্নে সুস্থ হয়ে ওঠার মধ্যে দ্বিতীয় মিলন সমগ্র গল্পের আদল বদলে দিয়েছে। গল্প এর পরে দ্রুত এগিয়ে চলেছে রজনী অঘোরের সার্থক মিলনের দিকে। আর সেই অগ্রগতির মাঝে কিছু মান-অভিমানের পালা অনুষ্ঠিত হল। রজনী অঘোরের দিকে পছন্দ করে, আর ঐ চুরি ত্যাগ করানোর জন্যে গা ছুঁয়ে শপথ থেকে শুরু করে, কিছু কিছু হৃদয়-সংবেদ্য কথা উঠে এসেছে যা সত্যি রোম্যান্টিক বৃত্তকে বৃহত্তর পরিধিযুক্ত করতে সহায়তা করেছে। রজনীর 'তুই কোন দিন মরেই যাবি'-এর উত্তরে অঘোর বলেছে 'তা গেলেই বা কার কি?' এই হৃদয়-বোধ জাগিয়ে তোলার উক্তির সঙ্গে রজনীর সর্তকতা 'তুই এদেশ ছেড়ে চলে যা' এবং অঘোরের শেষ স্বতঃস্ফূর্ত আকুলতা, 'তুই যাবি সঙ্গে?' গল্পটিকে স্রোতস্বতী করে সাগর সংগমে ঠেলে নিয়ে গেছে। আর এই ঘর বাঁধার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্যে শেষ বারের মতো সে চুরি করতে চেয়েছে। কিন্তু আইন তার সে চুরির দায়ে সাজা দিয়েছে যা অনির্বাযভাবে তার স্বপ্নকে ফলপ্রসূ না করে ব্যর্থতায় রূপান্তরিত করেছে। 

অঘোর শেষ চুরি করতে গিয়ে কিছু নিতে পারেনি, কিন্তু ধরা পড়েছে। গল্পকার অঘোরের বক্তব্য জানিয়েছেন এইভাবে, 'আসামী তখন কাঠগড়া হইতে দুই হাত জড় করিয়া কাতরভাবে কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতেছিল- হুজুর ধর্মাবতার তাহাকে এই বারটি মাফ করেন। সে চুরি করিবার চেষ্টা করিয়াছে কিন্তু কিছুই লইতে পারে নাই। সে হুজুরের পা ছুঁইয়া ও ঈশ্বর সাক্ষী করিয়া শপথ করিতেছে সে সত্যিই আর এমন কাজ করিবে না। এ পথ ছাড়িয়া দিতে সত্যই সে চায়। এবার জেল হইলে তাহার সর্বনাশ হইয়া যাইবে'। আসলে অঘোর যে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে শেষ চুরি করতে গিয়েছিল-তার ভবিষ্যৎ গৃহিণী বাঁধাছাদা করে নতুন পথের যাত্রী হওয়ার জন্যেই বসে আসে-এসব কথা সে কীভাবে বোঝাবে। আইন তো অন্ধ। সে চোখ কান খোলা রাখে না। সে সাক্ষ্য প্রমাণ দেখেই রায় দেয়। Soapy মানসিক অবস্থা এবং গীর্জার প্রভাব তার মনে এক বিরাট পরিবর্তন এনেছিল। অবশ্য জানালা ভাঙার দায়ে তিন মাসের কারাবাস অবধারিত হল। এক্ষেত্রে আইন অঘোরের কাছেও সুখকর অবস্থা নিয়ে হাজির হয়নি।

এই গল্পের পাশে রবীন্দ্রনাথের 'বিচারক' গল্পটি প্রণিধান যোগ্য। বিগত যৌবনা ক্ষীরোদা পুরুষদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে যখন দারিদ্র নির্যাতীত নিজেকে এবং তার শিশুপুত্রকে ধরে রাখতে পারেনি, তখনই সে নিকটবর্তী কূপের মধ্যে মৃত্যুর আহ্বান করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিবেশিরা তাকে ও তার পুত্রকে উদ্ধার করলেও শিশুপুত্র মৃত্যুবরণ করেছে, আর আত্মহত্যার অপরাধে ক্ষীরোদার বিরুদ্ধে পুলিশ কেস চলে। বিচারক মোহিত মোহন বিনোদচন্দ্র ছদ্মনামে এককালে প্রতিবেশিনী বিধবা হেমশশীর যৌবন লুট করে নিয়েছিল-তা হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো গল্পে এসে আলো-ছায়ার খেলা খেলে যায়। বিচারক ক্ষীরোদার ফাঁসির হুকুমের পর যথোচিত ভর্ৎসনা, উপদেশ ইত্যাদি প্রয়োজন বিবেচনা করে ক্ষীরোদার কাছে এলে বিচারক লক্ষ্য করেছেন যে ক্ষীরোদা আংটি নিয়ে প্রহরীর সঙ্গে বচসায় লিপ্ত। কৌতূহলী বিচারক সেই আংটি দেখতে চেয়ে তার ফেলে আসা জীবনের ছবি যেমন দেখতে পেলেন, তেমনি কলঙ্কিনী পতিতার মধ্যে স্বর্ণময়ী, দেবীপ্রতিমারও সন্ধান পেলেন। সেই আংটিতে বিচারকের ছদ্মনাম 'বিনোদচন্দ্র' লেখাছিল। পতিতা ক্ষীরোদা এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বিচারক মোহিতচন্দ্রের মত কত যুবকের লালসার শিকার হয়েছিল। এই বিচারক আর কী বিচার করবেন, আর কেই বা বিচারকের বিচার করবে। সারা গল্পে ক্ষীরোদার যে করুণ আর্তনাদ ধ্বনিত, সেই আর্তনাদই রজনীর মধ্যে পাঠক লক্ষ্য করবেন। ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বসে থাকা রজনী, যামিনী বা নান-সু'রা প্রতীক্ষায় দিনকাটায়। তাদের স্বপ্ন সফল হয় না। এদিকে অঘোরের আদালতে অস্বাভাবিক কান্না, আর কাঠগড়া থেকে লাফ দিয়ে বিচারককে আক্রমণ করার মধ্যে যে পুঞ্জীভূত ব্যথার ইতিহাস আছে, সে ইতিহাস বিচারকের অজানা।

তাই বিচারক অঘোর দাসকে নতুন করে বিচার করে দীর্ঘদিন কারাবাস চিহ্নিত করলেন। অঘোর এখনও জেলখানায় পচছে, আর রজনী এখনও একবারের অতিথির জন্যে হতাশ নয়নে পথের দিকে চেয়ে বসে থাকে। এখানেই গল্পের ট্যাজেডি।

===================
LIKE ও কমেন্ট দিন।




কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.