'বঙ্গভূমির প্রতি ' : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত
সার-সংক্ষেপ :
কবি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত 'বঙ্গভূমির প্রতি ' কবিতায় বঙ্গজননীর প্রতি তাঁর বিনীত মিনতি
জ্ঞাপন করেছিলেন। তিনি বলেছেন যে বঙ্গজননী যেন কবিকে
চিরকাল মানুষের স্মৃতিতে অমলিন রাখেন। উচ্চভিলাষী কবি বিদেশ যাওয়ার আগে
মাতৃভূমির কাছে এই প্রার্থনা জানিয়েছেন যে তিনি যেন কবিকে সর্বদা মনে রাখেন। মানুষের দেহ নশ্বর , কিন্তু স্মৃতি
অবিনশ্বর। নশ্বর এই দেহের বিনাশ ঘটলেও নিজের কীর্তির মধ্যে দিয়ে মানুষ অন্য
মানুষের মনে অমরত্ব পেতে পারে।
কবি নিজেই বললেন যে , জন্মগ্রহণ করলে
মৃত্যু অনিবার্য। নদীতে জল যেমন স্থির নয় , চির
প্রবাহমান , তেমন মানুষের জীবনও স্থির নয়। মানব জীবনের ধর্ম চিরপ্রবাহমানতা। কিন্তু কবির বিশ্বাস তিনি কর্মের
মধ্যে দিয়ে মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারবেন। তাই তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। তিনি মানুষের মনের মন্দিরে চির
ভাস্বর থাকতে চান। ক্ষুদ্রতম মক্ষিকাও যেমন অমৃত হ্রদে
পড়লে মরে না , অমৃতের স্পর্শে সে যেন অমরত্ব লাভ করে, তেমনি বঙ্গ জননীর স্নেহ লাভ
করতে পারলেই কবিও ধন্য হবেন।
কবি বঙ্গমাতার স্নেহের উপর একান্ত
নির্ভর করে বলেছেন যে , তাঁর এমন কোন গুণ নেই যে , তিনি বঙ্গভূমির কাছে অমরত্ব
প্রার্থনা করতে পারেন , তবে বঙ্গজননী যদি কৃপা করে তাঁর দোষ ত্রূটিকেই গুণ বলে
ধরেন এবং তাঁকে অমরত্বের বর দান করেন , তবে এই সুবরদায়িনী বঙ্গমাতার
কাছে তিনি চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।
কবিতার শেষ স্তবকে কবি এই অমরত্বের
ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গৌড়জনের জন্য তিনি এমন কাব্য রচনা
করে যেতে চান যা চিরকালের আনন্দ সুধা বর্ষণ করবে। বঙ্গবাসীর হৃদয়মন্দিরে বিরাজ করে
তিনি তাঁদের স্মৃতিতে চির অক্ষয় হয়ে বিরাজ করতে চান, যেমন তিব্বতের মানস সরোবরে সব
ঋতুতে পদ্মফুল ফুটে থাকে। এইভাবে কবি বঙ্গবাসীর স্মৃতিতে
উজ্জ্বল থেকে অমর হয়ে থাকতে চান।

কোন মন্তব্য নেই
ok