ওড কবিতার ইতিহাস
ওড কবিতার ইতিহাস
গ্রীসে ধর্মীয় আচার আচরণকে কেন্দ্র করে নাচ গানের মাধ্যমে দেবস্তুতি মূলক যে সব গান গীত হত, সেগুলি ছিল ওডকবিতা সৃষ্টির প্রাথমিক রূপ। গ্রীক বীরত্ব কীর্তিকে বন্দনা করে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে পিন্ডার ভাবগম্ভীর ও বৃহৎ আকারের স্তোত্র কবিতা রচনা করেছেন। পিন্ডারের স্তোত্রকবিতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে টমাস গ্রে লিখেছেন the Progress of Poetry' নামক স্তোত্র কবিতা, ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে আব্রাহাম বাউলে 'Pindarique odes' লেখেন। যথার্থ ওড কবিতা রচিত হয় রোমান্টিক যুগে। ওয়ার্ডসওয়ার্থের 'ode on Intimations of Immortality', শেলির 'ode to the west wind, কীটসের 'ode to a nightingale' প্রভৃতি কবিতা এই পর্যায়ে স্মরণীয় হয়ে আছে। ভিক্টোরীয় যুগে টেনিসন লিখেছেন 'ode on the Death of the Duke of wellington.'
বাংলা কবিতায় দেবেন্দ্রনাথ সেনের 'বর্ষামঙ্গল' গোবিন্দচন্দ্রদাসের 'মৃত্যুশয্যায়', 'ভাওয়াল', 'স্বদেশ', 'স্বাধীনতা', মোহিতলাল মজুমদারের 'পান্থ', 'নারীস্তোত্র', 'বুদ্ধ', সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের 'বুদ্ধপূর্ণিমা' রবীন্দ্রনাথের 'বর্ষশেষ' ওডকবিতা হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
স্তোত্র কবিতার বৈশিষ্ট্য
ওডের (ode) বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যহীন। তবে-যে কটি লক্ষণ বিশেষভা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল-কবিতা বেশ কয়েকটি স্তবকে বিভাজিত থাকে, প্রত্যেক স্তবকে আলাদা আলাদা ভাব সংযোজিত হয়। এবং আবেগপূর্ণ শব্দ চয়নের সচেতনতায় কবিতার আঙ্গিক বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধি লাভ করে।
* চিন্তাধারার যুক্তি সংগত বিবর্তন ঘটে।
* ওডের ছন্দ সমিল অমিল দুই-ই হতে পারে।
* কবিতার অবয়ব ৫০ থেকে ২০০ লাইন দীর্ঘ হতে পারে।
* মূলত সৃষ্টি লগ্নে এই ode কোরাম রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
* সাম্প্রতিক কালের স্তোত্র মূলক কবিতায় বহু বৈচিত্র্য সম্পাদিত হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের 'বর্ষশেষ' এই পর্বের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন রূপে চিহ্নিত করা যেতে পারে। ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র কালবৈশাখীর উদ্দামতার প্রেক্ষাপটে লেখা আলোচ্য কবিতাটি সতেররোটি স্তবকের এক দীর্ঘ স্তোত্র কবিতা। একটি দীর্ঘ ও একটি হ্রস্ব চরণের দ্বারা গঠিত আট লাইনের একেকটি স্তবক যার দ্বিতীয় ও চতুর্থ এবং ষষ্ঠ ও অষ্টম চরণগুলি পারস্পরিক অন্ত্যমিল যুক্ত, কখ গখ ঘঙ চঙ। চৈত্র শেষের ঝপড়ো তাণ্ডবে বর্ষশেষের যে ইঙ্গিত তা অপূর্ব গতিময় ছন্দোবদ্ধ, চিত্ররূপ মণ্ডিত হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই
ok