Translate

এলিজি / শোক কবিতা / রাখালিয়া শোকগীতি

 






এলিজি / শোক কবিতা / রাখালিয়া শোকগীতি

      সংজ্ঞা: প্রাচীন এলিজি কবিতা বিবর্তিত হয়ে 'শোককবিতা' নাম নিয়েছে। গ্রীক সাহিত্যে 'এলিজি'র নিদর্শন মেলে। সেখানে যুদ্ধ ও প্রেমের মধ্যে শোক সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে কবি যখন ব্যক্তিগত শোকানুভূতি বা বৃহত্তর জীবনের শোককে কবিতাকারে ইঙ্গিতপূর্ণ রসসঞ্চারী ভাষায় প্রকাশ করে থাকেন, তখন সেই কবিতাকে আমরা শোক কবিতা বলি। হাডসন বলেছেন 'a brief Lyric of mourning of direct ulterance of personal bereavement and sorrow.'

বৈশিষ্ট্য: শোক কবিতার বৈশিষ্ট্য হল-

(১) ভাবাবেগ, শোকবিহুলতা, মন্ময়তার প্রকাশ ঘটে।

(২) ব্যক্তি বিশেষের মৃত্যুজনিত দুঃখ এবং মানবজীবনের বৃহত্তর শোককে এই শ্রেণির কবিতায় প্রকাশ করা হয়।

(৩) খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় শতকে মসকাস, যায়ন, প্রভৃতিদের হাতে যে শোকগীতি জন্ম নেয় তাদের বলা হয় 'রাখালিয়া শোকগীতি (Pastoral Elegy)।

(৪) মৃত্যু এক নবজীবনের উন্মেষ ঘটায়। শোককবিতায় সেখানে দুঃখ থেকে আনন্দের উত্তরণ ঘটে।

(৫) প্রিয় বন্ধু বা বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লেখা শোক কবিতাকে ব্যক্তিগত শোককবিতা বলে; যেমন কিটসের মৃত্যুতে শেলি লিখেছেন, 'Adonais (1821).1 মানবজীবনের বৃহত্তর দুঃখ বেদনাকে কেন্দ্র করে লেখা শোককবিতা হল সামাজিক শোক কবিতা; যেমন রিলকে লিখেছেন 'Duinto Elegies (1912-22)

শোককবিতার ইতিহাস

বাইবেলের কোথাও কোথাও শোককবিতার দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে। ইংরেজি সাহিত্যে শোককবিতার যথার্থ আবির্ভাব ঘটে যোড়শ শতকে অনেকে জানিয়েছেন মিলটনের Liycidas (1637) থেকে শোককবিতার শুরু। টমাস গ্রের 'Elegy written in a country church Yard (1751), টেনিসনের 'In memoriam' (1350), আব্রাহাম লিঙ্কনের মৃত্যুতে লেখা হুইটম্যানের 'When Lilacs Last in the Dooryard Bloom'd' শোক কবিতার ইতিহাসে স্মরণীয় নাম।

বাংলা শোক কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-বিহারীলাল চক্রবর্তীর 'বন্ধু-বিয়োগ', গোবিন্দচন্দ্র দাসের 'বঙ্কিম বিদায়' অক্ষয়কুমার বড়ালের 'এষা' ইত্যাদি, কালিদাসরায়ের 'কৃষাণীর ব্যথা', যতীন্দ্রমোহন সেনের 'চাষার ঘরে' হল রাখালিয়া লোকগীতি।

• একটি সার্থক শোককাব্য (Elegy):

বাংলা ভাষায় লেখা শ্রেষ্ঠ শোককাব্য অক্ষয়কুমার বড়ালের 'এষা'। বিপিনচন্দ্র পাল অক্ষয়কুমার বড়ালের 'এষা' কাব্যকে টেনিসনের In 'Memoriam'-এর থেকেও উৎকৃষ্ট কাব্য বলেছেন। 'এষা' কাব্যটি রচিত হয়েছে পত্নীর মৃত্যু শোকে। তাই এর বিষয়বস্তু, পাত্রপাত্রী পটভূমি সবই বাস্তব। পত্নীর মৃত্যু দৃশ্যেও বাস্তবতার পরিচয় মেলে। কবি পত্নীর প্রেম ছিল সংসারে সবার প্রতি-কবির পতি, সংসারের প্রতি, দেবতাদের প্রতি, তুলসীগাছের প্রতি- এমনকি মানবেতর প্রাণীর প্রতি। তাই সেই স্ত্রী সৌদামিনীর মৃত্যুতে কবির জীবন ছন্দ যেন  কেটে যায়। আর তাই কবির ক্রন্দনের ভাষা-'মানবীর তরে কাঁদি যাচি না দেবতা।' সমগ্র কাব্যে অক্ষয়কুমারের মৃত্যু চেতনা কয়েকটি যিশেষ লক্ষণে চিহ্নিত-প্রথমে তিনি ঘোর সংসারী, দেহসর্বস্ব জীবনের পক্ষপাতী,-

"জগতের শূন্য অন্ধকারে

শরীরের রূপরেখা আমাদের অনন্য সম্বল।"

সেই সম্বল গেল ঘুচে। পত্নীর মৃত্যুতে 'আলোক-আঁধার-হীন স্তব্ধতার' মধ্যে তিনি অনুভব করলেন-'মৃত্যু কী ভীষণ'। তৃতীয় পর্যায়ে ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে চান কবি। চতুর্থ পর্যায়ে পত্নী অন্বেষণ এবং শেষ পর্যায়ে দৃষ্টিভঙ্গির বদল। এ কাব্যে চরিত্রের উন্নয়নে মনস্তাত্ত্বিক স্তর পরম্পরার অনুসরণ করেছেন কবি। কবিহৃদয়ের নিরাবরণ কৃত্রিমতার প্রকাশ ঘটেছে 'এযা'য়।

শোক কবিতার সংখ্যাও বাংলা সাহিত্যে কম নয়। বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর লেখা গিরিশচন্দ্র ঘোষের 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর' কারও মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত কবিদের লেখা কবিতা এই কবিতার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। রবীন্দ্রনাথের 'সত্যেন্দ্রনাথ', যতীন্দ্রনাথের 'বাইশে শ্রাবণ', গান্ধীজি, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীর মৃত্যুতে দুঃখাহত কবিদের রচিত অজস্র শোক কবিতা এ পর্যায়ে পড়ে। 

========================

প্রতিটি পড়ার পর Like দিও এই ধরণের আরো ফিচার দেখার জন্য।




কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.