ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা: রূপ-রীতি
ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা:
ট্র্যাজেডি সংজ্ঞা নিয়ে বিদগ্ধগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কিন্তু তাঁদের আলোচনা মূলত অ্যারিস্টটলের সংজ্ঞার উপর নির্ভর করে আছে। এবং আজ পর্যন্ত ট্রাজেডিতত্ত্ব বিষয়ে যত আলোচনা হয়েছে তার সমস্তটাই অ্যারিস্টটলভিত্তিক। অ্যারিস্টটল ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছেন-
"A tragedy, then, is the imitation of an action that is serious and also, as having magnitude, complete in itself; in language with pleasurable accessories, each kind brought in separately in the parts of the work; in a dramatic, not in a narrative form, with incidents arousing pity and fear, where with to accomplish its catharsis of such emotions. "
অ্যারিস্টটলের সংজ্ঞা থেকে আমরা ট্র্যাজেডি সম্পর্কে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি পাই-
১. জেডি হল জীবনের কোন ঘটনার অনুকরণ-imitation of an action.
২. ট্র্যাজেডিতে জীবনের কোন গুরুতর-Serious ঘটনা থাকবে।
৩. ট্র্যাজেডির ঘটনা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এর একটি পরিমিতি থাকবে।
৪. ট্র্যাজেডির ভাষায় আনন্দজনক উপাদান Pleasurable accessories থাকবে অর্থাৎ ছন্দোবদ্ধ রচনা, গীত ইত্যাদি থাকবে।
৫. ট্র্যাজেডির প্রকাশরীতি হবে নাটকীয়, বর্ণনামূলক নয়।
৬. ট্র্যাজেডি এমন ঘটনাকে রূপায়িত করবে যাতে Pity ও Fear অর্থাৎ অনুকম্পা ও ভয় দর্শকচিত্তে জাগ্রত হয়।
ট্র্যাজেডির এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে অনেক আলোচনা, অনেক বাদানুবাদ হয়েছে এবং বিভিন্ন দার্শনিক ও সমালোচক অনেক দিক দিয়ে ট্র্যাজেডি তত্ত্ব বিচার করেছেন। আমরা বিভিন্ন দার্শনিক ও সমালোচকের মতামতকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক হেগেল ট্র্যাজেডি নিয়ে যে মত পোষণ করেছেন, তা অ্যারিস্টটলের বক্তব্য থেকে অনেকটাই পৃথক। দ্বন্দ্বকেই তিনি ট্র্যাজেডির প্রাণ বলে মনে করেন। আর এই দ্বন্দ্ব সত্যের সঙ্গে মিথ্যার বা ভালোর মন্দের দ্বন্দ্ব নয়; ভালোর সঙ্গে ভালোর, সত্যের সঙ্গে সত্যের, ন্যায়ের সঙ্গে ন্যায়েরই অর্থাৎ দুই নৈতিক সমস্যারই দ্বন্দ্ব। এই দুই দ্বন্দ্বের পরিণতিতে থাকবে সমাধানবোধ (Feeling of reconciliation), আর সেখান থেকেই সনাতন ন্যায়বোধ (Eternal Justice) এর উপলব্ধি।
অধ্যাপক ব্রালে হেগেলের মতকে
সমর্থন করে বলেছেন-দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে
নায়কের জীবনে যে ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে, তাই ট্রাজেডির বিষয়। তাঁর মতে, সব ট্র্যাজেডিতে
নৈতিক সমস্যা থাকে না-তবে
'a self division' ও 'self waste of spirit'
থাকবেই। ব্রাড়লে ট্র্যাজেডিতে দ্বন্দ্বের সমাধান সম্পর্কে হেগেলের বক্তব্য থেকে সরে এসে
(ক) সমন্বয়-পরিণাম, (খ) বিপত্তিপরিণাম
(Catastrophe) -এই দু'রকমভাবে সমাপ্তির
কথা বলেছেন। এর মধ্যে সমন্বয়-পরিণাম
হল নায়কের সঙ্গে বিরুদ্ধ শক্তির আপস ও
মিলন। কিন্তু এই মিলন ক্ষণিকের,
যা পরবর্তীতে আরো মর্মান্তিকরূপ নেয়। আর বিপত্তি
পরিণাম হল খণ্ডিত মনের ঐক্যসাধনের
জন্য প্রবল প্রচেষ্টা কিন্তু পরিণামে দুর্ভোগ।
শোপেনহাওয়ারের মতে, ট্রাজেডির
মধ্যেই আমরা সংসারের জীবনচিত্র দেখি।
এখানে সর্বদা হানাহানি, মর্মান্তিক দুঃখকষ্ট, শয়তানের অট্টহাস্য ও নিয়তির হহৃদয়হীনতা। ট্র্যাজেডির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বহু দুঃখকষ্ট ও দ্বন্দ্বের শেষে মান-অভিমান ত্যাগ করে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে। এই উৎসর্গতেই ট্র্যাজেডির আনন্দ উপলব্ধি। তিনি বলেছেন-
Tragedy gives us an
insight in to the heart of the mystery, into nature of the evil, which is the
nature of reality and hence of the will.
শোপেনহাওয়ারের মতে, জীবনে তিন দিক থেকে ট্র্যাজেডি ঘনীভূত হতে পারে।
(ক) মানুষের অতিরিক্ত শয়তানির
ফলে। যেমন-ইয়াগো, রিচার্ড ততীয়।
(খ) নিয়তির নিষ্ঠুর বিধানে।
যেমন-রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট
(গ) মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের
সংঘাতে। যেমন-গেটের প্ল্যাভিগো ও কিছুটা হ্যামলেট।
সমালোচক ডিক্সন ট্র্যাজেডি সম্পর্কে বলেছেন-Tragedy Calls up witness a confilict, which arouses the sympathies and forces us to takes sides, dispels apathy, awakens the sense of justice, kindless thought, dilates the imagination and throws the whole nature into expectancy, into marching order
F.L. Lucas ট্র্যাজেডি তে জীবনসত্য ও জীবন সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছেন। তাঁর
কথায়- So the essence of Tragedy reduces it self to this-The pleasure we take in rendering of life both serious and true.
ইবসেন, মেটারলিঙ্ক, বার্ণাড শ প্রমুখ নাট্যকারদের ট্র্যাজেডির স্বরূপ ও প্রকৃতি ভিন্ন ধরণের। ইবসেন ও মেটারলিঙ্কের ট্র্যাজেডিতে কোন সংঘর্ষ বা রক্তপাতের ব্যাপার নেই- নিকলের কথায় এগুলি সম্পূর্ণ যুগোপযোগী এবং এখানে মৃত্যু নয়, নায়কের হৃদয়ের মহিমাই প্রধান ট্র্যাজিক বিষয়-
Where apparent greatness
is dimmed by an inner greatness..
ট্র্যাজেডি নিয়ে বিদগ্ধদের মতামত আলোচনা করে আমরা বুঝতে পারি- ট্র্যাজেডি জীবনেরই এক বিশেষ রূপ। সেই কারণেই দীর্ঘকাল ধরে নাট্য সমালোচকেরা ট্র্যাজেডি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেছেন এবং করে চলেছেন।
কোন মন্তব্য নেই
ok