বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির পূর্বে বাঙালি রচিত সাহিত্যের পরিচয় দাও এবং পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে তার প্রভাব নির্দেশ করুন।/সৃজ্যমান বাংলা সাহিত্য
সৃজ্যমান বাংলা সাহিত্য
সংস্কৃত
ও অপভ্রংশ - অবইঠ ভাষায় বাঙালি কবি রচিত সৃষ্টি সম্ভারের পরিচয় দিন।
অথবা
বাংলা
সাহিত্য সৃষ্টির পূর্বে বাঙালি রচিত সাহিত্যের পরিচয় দাও এবং পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে
তার প্রভাব নির্দেশ করুন।
অথবা
সৃজ্যমান বাংলা সাহিত্য
===================================================
অন্তর্ভুক্তির যুক্তি: বাংলা সাহিত্যের
ইতিহাসে বাংলা ভাষার রচনাবলি আলোচনাই থাকবে-এটিই স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশিত। বাঙালি
অন্য কোন ভাষার ব্যাপক চর্চা করলেও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তার স্থান পাওয়ার কোনো
সঙ্গত কারণ নেই তা স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয় হতে পারে। কিন্তু আদিযুগ উন্মেষ পর্বের বাংলা
সাহিত্যের আলোচনায় বাঙালির সংস্কৃত এবং অপভ্রংশ-অবহট্ট ভাষার রচনাগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত
করতে হবে। কারণ বাংলা ভাষার তখন সবে উদ্ভব ঘটেছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ
সাহিত্যিক প্রকাশের উপযোগী বলে এই ভাষাকে মনে করেনি। বিশেষত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির ধারক
ও বাহক কবি ও বুদ্ধিজীবী সমাজ, রাজসভার কবি এবং রাজসভার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাহিত্যিকবর্গ
তখন সংস্কৃত ভাষার আশ্রয় গ্রহণ করতেন। সংস্কৃত ছিল তখনও হিন্দু ভারতের সভা শোভন ভাষা-উচ্চকোটির
সংস্কৃতির ভাষা। তখনও বাঙালির জাতীয় মন বাংলা ভাষার মধ্যে পুরো প্রতিফলিত হয়নি। এই
পর্বে বাংলা ভাষায় শুধুই সাধনসঙ্গীত রচিত হয়েছে। অপরপক্ষে সংস্কৃত ভাষায় রাধাকৃষ্ণের
প্রেমকবিতা কিংবা রামায়ণ কাব্য বাঙালি কবিরা লিখেছেন। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা যখন আরও
শক্তিশালী হয়ে ব্যাপকতর প্রভাব বিস্তার করে, সর্বস্তরের বাঙালির আত্মপ্রকাশের ভাষা
হয়ে উঠেছে তখন সেখানে রাধাকৃষ্ণের প্রণয়সঙ্গীত, রামায়ণাদি কাহিনি-কাব্য বা সাধনগীতি
প্রভৃতি সব ধারার সন্ধান মিলছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সূত্রানুসন্ধানে তাই আদি
পর্বের ভাষার বাংলা রচনাই পর্যাপ্ত বলে মনে হবে না, বাঙালির সংস্কৃত রচনার সাহায্যও
নিতে হবে।
সংস্কৃত ছাড়া অপর একটি ভাষায় সেকালের বাঙালির
সাহিত্যসৃষ্টির নিদর্শন মিলছে। তা হল অর্বাচীন অপভ্রংশ বা অবহট্ঠ। সমকালীন বাঙালি অবহট্ওঠেও
কিছু কিছু সাহিত্য রচনা করেছে। তার মধ্যেও বাঙালির জাতীয় মনের কোনো কোনো অংশ প্রতিবিম্বিত
হয়েছে এবং পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। পুরাতন বাংলা সাহিত্যের
ইতিহাস প্রসঙ্গে তাই এদেরও সংক্ষিপ্ত পরিচিত অপরিহার্য।
সূত্রপাত: বাংলা সাহিত্য ব্যবহৃত হওয়ার পূর্বে
খ্রিঃ পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সংস্কৃত ভাষা, সাহিত্য, স্মৃতিপুরাণ, ন্যায়দর্শন,
ব্যাকরণ অভিধান যে এদেশে বিশেষভাবে অনুশীলিত হত, তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রাচীন সংস্কৃত
ব্যাকরণে প্রাচ্য দেশের ভাষারীতির যে সমস্ত দৃষ্টান্ত ও বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত হয়েছে,
তাতে মনে হচ্ছে গুপ্ত যুগেরও আগের থেকে বাংলা দেশে সংস্কৃত ভাষার বিশেষ চর্চা ছিল।
গুপ্ত-পাল-সেন যুগের বহু তাম্র শাসন ও শিলালিপির সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে গৌড়ীরীতির
'অক্ষর ডম্বর' অনুসৃত হয়েছে।
কাব্য ও নাট্য রচনা: পাল-সেন আমলের প্রাপ্ত অনুশাসন-স্তম্ভলিপি
প্রভৃতিতে রাজাদের দুজন বিশিষ্ট সভাকবি সংস্কৃতে রামায়ণ লিখেছিলেন। এঁদের মধ্যে একজন
হলেন অভিনন্দ। তিনি 'রামচরিত' রচনা করেছিলেন। গৌড় অভিনন্দ নামক এক কবির অনেকগুলি শ্লোক
শ্রীধর দাস 'সদুক্তি কর্ণামৃত'-এ সঙ্কলন করেছেন। সম্ভবত এঁরা একই ব্যক্তি। অপরজন হলেন
সন্ধ্যাকর নন্দী। তাঁর 'রামচরিত' একটি অভিনব কাব্য। কলাকৌশলে কবির সুবিশেষ দক্ষতা ছিল।
'রামচরিত'এর শ্লোকগুলি দ্বার্থ-বোধক। একদিকে রামায়ণের কাহিনি, অন্যদিকে পালরাজাদের
কাহিনি। সন্ধ্যাভাষার আদি নিদর্শন সম্ভবত এটাই।
'কীচকবধ' নামক অতিরিক্ত অলঙ্কারপ্রধান কাব্যের রচয়িতা নীতিবর্মাকে
অনেকে বাঙালি বলেছেন। অনেকে 'নৈষধচরিত'-এর রচয়িতা শ্রীহর্ষকে বাঙালি এবং সেন রাজাদের
সভাকবি বলে মনে কারেন।
সেকালে বাংলাদেশে সংস্কৃত ভাষায় অনেক নাটক রচিত
হয়েছিল। বেশির ভাগই পৌরাণিক-রামায়ণ, মহাভারত, কৃষ্ণলীলা বিষয়ক। কয়েকটি ঐতিহাসিক ও কাল্পনিক
বিষয় অবলম্বনে লেখা বিশেষ উল্লেখযোগ্য নাট্যরচনা হল ক্ষেমীশ্বরের 'চন্ডকৌশিক', ভট্টনারায়ণের
'বেণীসংহার', বিশাখাদত্তের 'মুদ্রারাক্ষস' এবং মুল্লারী মিশ্রের 'অনর্ঘ রাঘব'।
সেন রাজাদের সময়কার খুব খ্যাতিমান কবিরা হলেন
গোবর্ধন আচার্য, ধোয়ী, শরণ, উমাপতিধর এবং জয়দেব। শরণের কুড়িটি শ্লোক 'সদুক্তি কর্ণামৃত'
নামক সঙ্কলনে স্থান পেয়েছে। ধোয়ীর কুড়িটি শ্লোক স্থান পেয়েছে। ধোয়ীর প্রধান রচনা 'পবনদূত'
কাব্য। কালিদাসের মেঘদূতের আদর্শে মন্দাক্রান্তা ছন্দে কাব্যটি রচিত। পূর্বোক্ত সঙ্কলন
কাব্যে উমাপতিধরের ৯১টি শ্লোক স্থান পেয়েছে। উমাপতি ধরের কবিজনোচিত শব্দচেতনা ছিল।
জয়দেব তাঁর বাক্যকে পল্লবিত বলে প্রশংসা করেছিলেন। গোবর্ধন আচার্য 'আর্যাসপ্তশতী'র
কবি। শ্লোকগুলি শৃঙ্গার রসাত্মক এবং আর্যা ছন্দে রচিত। তিনি পন্ডিত এবং সুদক্ষ কবি
ছিলেন।
কালিদাস-পরবর্তী সংস্কৃত সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি
জয়দেব। তাঁর 'গীতগোবিন্দ' কাব্যের ভাষা সংস্কৃত হলেও ভাব একান্তভাবেই বাংলার। এই কাব্যে
জয়দেব পুরাতন সাহিত্যের সঙ্গে নব্য সাহিত্যের সেতুবন্ধন করেছেন। সংস্কৃত কাব্যভাষা
প্রাকৃত ছন্দকে আশ্রয় করে এখানে কাব্যরূপ লাভ করেছে। বাংলার প্রাচীন যাত্রা বা নাট্যগীতের
রীতিটি জয়দেব এখানে অনুসরণ করেছেন। অলৌকিক দেবকাহিনির সঙ্গে লৌকিক প্রেমগাথার চমৎকার
সমন্বয় সাধিত হয়েছে এ কাব্যে। এই সমন্বয়ই মধ্যযুগের মানসিক মূল্যবোধের ভিত্তি। 'সদুক্তি
কর্ণামৃতে' জয়দেবের ৩১টি শ্লোকের মধ্যে পাঁচটি গীতগোবিন্দের।
প্রকীর্ণ শ্লোক এবং সঙ্কলন গ্রন্থ: মহাকাব্য, আখ্যানকাব্য এবং রসহীন
পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাব্য সেকালের বাঙালির রুচিকর ছিল না। ছোটছোট সংস্কৃত কবিতা বা প্রকীর্ণ
শ্লোক এবং অপভ্রংশ ভাষায় রচিত পদ বাঙালির প্রিয় ছিল। সংস্কৃত শ্লোকের প্রাচীনতম সঙ্কলন
দুটি বাংলাদেশে বাঙালির দ্বারাই সঙ্কলিত হয়েছিল। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে এ জাতীয় কবিতার
দিকে বাঙালির আগ্রহ বেশি ছিল। পালরাজাদের তাম্রশাসনে কোন কোন শ্লোকে বুদ্ধদেবের স্তুতি
করা হয়েছে। সেন রাজাদের লিপিতে কোথাও শিবের অর্ধনারীশ্বর রূপের, কোথাও গৃহী শিবের বাৎসল্য
স্ফুরিত পিতৃহৃদয়ের সুন্দর ছবি মিলেছে।
কবীন্দ্রবচন
সমুচ্চয়: সংস্কৃত
খন্ডশ্লোকের প্রাচীনতম সঙ্কলনগ্রন্থ। একাদশ-দ্বাদশ শতকের আদি বঙ্গাক্ষরে লেখা পান্ডুলিপিতে
পাওয়া গিয়েছে। সঙ্কলয়িতার নাম পাওয়া যায় নি। তবে জানা যায় যে তিনি বৌদ্ধ ছিলেন। ২০৫
জন কবির ১৭০৮ টি শ্লোক গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সর্বভারতীয় কবিদের রচনা যেমন এর মধ্যে
আছে, তেমনি আছে বহু সংখ্যক বাঙালি কবির কবিতা। বাঙালি কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গৌড়-অভিনন্দ,
কুমুদাকরমতি, ধর্মকর, বুদ্ধাকরগুপ্ত, মধুশীল, বিনয়দেব, বিতোক, বীর্যমিত্র, বৈদ্দোক,
শুভংকর, শ্রীধরনন্দা, বৈদ্যধন্য, অপরাজিতরক্ষিত প্রভৃতি। এই গ্রন্থের বহু শ্লোকে বাংলাদেশের
প্রকৃতি ও জীবন লীলার সুন্দর চিত্র ধরা পড়েছে।
সদুক্তি কর্ণামৃত: শ্রীধর দাস ১২০৬ খ্রিঃ এটি সঙ্কলন
করেন। গ্রন্থটিতে ৪৮৫ জন কবির ২,৩৭০ টি শ্লোক আছে। গ্রন্থটি সুসম্পাদিত, পাঁচটি প্রবাহে
বিষয়গুলি বিন্যস্ত এক দেবতার লীলা। দুই- প্রেম ও প্রকৃতি। তিন- রাজবৃত্ত ও যুদ্ধবর্ণনা।
চার গার্হস্থ্য জীবন ও প্রকৃতি ও পরিবেশ বর্ণনা। পাঁচ বিবিধ বর্ণনা। এখানে ৮০ জন বাঙালি
কবির কবিতা রয়েছে। সেন রাজসভার বিশিষ্ট পাঁচজন কবি এবং রাজা লক্ষণ সেন ও কেশব সেন ছাড়াও
উল্লেখযোগ্য হলেন -মহানিধিকুমার ইন্দ্রজ্যোতি, কমল গুপ্ত, রবি গুপ্ত, যজ্ঞ ঘোষ, সংগ্রাম
চন্দ্র, কল্প দত্ত, দিবাকর দত্ত, প্রভাকর দত্ত, ভগীরথ দত্ত, তথাগত দাস, ইন্দ্রদেব,
বসন্ত দেব, জয়নন্দী, শ্রীধর নন্দী, বীর নাথ, গদাধর, ত্রিপুরারি পাল, ঈশ্বর ভদ্র, বীর্য
মিত্র, বসু সেন, বিষ্ণু হরি, বঙ্গাল, বাচস্পতি প্রমুখ। এই গ্রন্থের শ্লোকগুলিতে রাজসভার
শৃঙ্গার সর্বস্ব কাব্য এবং প্রশস্তলিপির বাইরে বাঙালির মন ও বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জীবনলীলার
ব্যাপকতর চিত্রস্থান লাভ করেছে।
প্রাকৃত ও অপভ্রংশ অবহঠ কবিতা: প্রাকৃত ও অপভ্রংশ সাহিত্যও বাংলাদেশে
কিছু কিছু রচিত হয়েছিল। সংস্কৃতের অবক্ষয়ের দিনে এবং ভাষাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে
উৎপন্ন প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষাতে সারা ভারতবর্ষেই অনেকগ্রন্থ লিখিত হয়েছিল। হালের
'গাহাসত্তসই' ('গাথাসপ্তশতী') শীর্ষক প্রাকৃত শ্লোক-সংগ্রহ বাংলাদেশের না হলেও এতে
কোন কোন স্থলে বাঙালির জীবনের ছবিই ফুটে উঠেছে। তবে এদিক থেকে 'প্রাকৃত-পৈঙ্গল' বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। ধর্ম অসম্পৃক্ত কবিতার সঙ্কলন প্রাকৃত পৈঙ্গল। চতুর্দশ শতাব্দীর কাছাকাছি
সময়ে এটি সঙ্কলিত হলেও নবম ও দ্বাদশ দশকে রচিত বহু কবিতা এতে স্থান পেয়েছে। এই সঙ্কলনের
ভাব ও ভাষা বিচারে পন্ডিতেরা এরূপ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে অনেকগুলি কবিতা বাঙালির রচনা।
প্রেমবিষয়ক ক্ষুদ্র ছড়াগুলি অপূর্ব।-
সে মহ কন্তা
দুর দিগন্তা।
পাউস আএ
ঢেউ চলা
এ ।।
[আমার সে
কান্ত এখন দূরদিগন্তে,]
ভাষা মাধুর্যে এক প্রেম প্রকৃতির সম্বন্ধ স্থাপনে
এ কবিতাগুলি চমৎকার। বার বার এরা বৈষ্ণবপদাবলির কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষত কৃষ্ণরাধার
প্রেমের উল্লেখ আছে কবিতায়। একটি শ্লোকের শিব-পার্বতীর দরিদ্র পরিবার চিত্র পরবর্তী
মঙ্গল কাব্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। এছাড়া বাঙালি কবিদের লেখায় শৌরসেনী অপভ্রংশের পাশাপাশি
স্থানীয় মাগধী অপভ্রংশের ছাপও লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সরহ-কাহ্ন
প্রভৃতির দোঁহাকোষ। ধর্মচেতনা তথা সংস্কৃতি পরিমন্ডল এবং রচনাভঙ্গী উভয় দিক থোকেই এইগুলি
বাংলাচর্যাপদের সমগোত্রীয়।
পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক:
বাঙালির
লেখা এযুগের সংস্কৃত এবং অপভ্রংশ সাহিত্য পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন
নয়। ভাষাগত ব্যবধান সত্ত্বেও বাঙালি যেমন এখানে ক্রিয়াশীল পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে তারই
বিকাশ লক্ষ করি।
এক- সংস্কৃত
চিত্রধর্মী শ্লোক বাংলায় অন্তমিলযুক্ত পদে পরিণত হল। এ ধারার পথিকৃৎ জয়দেব।
দুই-
প্রাচীন বাংলার লোক-প্রচলিত নাট্যগীতের আদর্শ জয়দেবের গীতগোবিন্দেই প্রথম ভাষাবন্ধ
কাব্যরূপ লাভ করল। এই নাট্যগীতের রীতির প্রত্যক্ষ অনুসরণ দেখতে পাই বড়ু চণ্ডীদাসের
'শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনে'।
তিন-
প্রকীর্ণ শ্লোক এবং সঙ্কলন গ্রন্থ দুটিতে রাধা-কৃষ্ণের লীলাবিষয়ক অনেক শ্লোক পাওয়া
যাচ্ছে। জয়দেবের কাব্যে রাধাকৃষ্ণের প্রণয়ন্সীলা পূর্ণাঙ্গ কাব্যের রূপ নিয়েছে বাংলা
বৈষ্ণবপদাবলির পূর্বসূরীরূপে এই সংস্কৃত করিতাবলীকে 'স্পষ্টতই গ্রহণ করতে হয়।
চার-
বাংলা মঙ্গলকাব্যে শিব-চরিত্র লৌকিক বর্ণসম্পাতে দরিদ্র গৃহস্বরূপে দেখা দিয়েছে। নানা
প্রকীর্ণ-শ্লোকে শিবের এই রূপটির পরিচয় মিলছে আলোচ্য পর্বে।
পাঁচ-
সাধারণভাবে মহাকাব্যের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ না থাকলেও রামায়ণকাহিনি তখন থেকেই বাঙালির
প্রিয় ছিল। একাধিক রামায়ণ রচনায় এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বাঙালি কবিরা বাল্মিকীর রামায়ণ-কথা
পুনর্বিবর্ত করতে গিয়ে তখন থেকেই কমবেশী মূল বিচ্যুতি দেখিয়েছেন, স্থানিক এবং কালিক
রঙ রামায়ণের চিরায়ত কাহিনিতে এসে পড়েছে।
কোন মন্তব্য নেই
ok