কালীপ্রসন্ন সিংহ: ড. নীলোৎপল জানা
কালীপ্রসন্ন সিংহ
প্যারীচাঁদের চিন্তা ও চেষ্টাকে কিছুটা পূর্ণতা
দান করেছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-৭০) জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ধনবান ও সংস্কৃতিপোষক
সিংহ পরিবারে কালীপ্রসন্নের জন্ম পিতা নন্দলাল সিংহ, পিতামহ ছিলেন হিন্দু কলেজের অন্যতম
প্রতিষ্ঠাতার Director জয়কৃষ্ণ সিংহ। বংশগত ঐতিহ্যের অনুসরণে কালীপ্রসন্নও সেকালের
সমাজসংস্কৃতিমূলক প্রগতির অন্যতম অগ্রপথিক।
বাংলাদেশে মধুসূদনের কবিপ্রতিভা প্রথম প্রকাশ্য অভিনন্দন লাভ করেছিল কালীপ্রসন্নের
'বিদ্যোৎসাহিনী সভা'য়। বাংলাদেশের এক অদ্ভুত মানুষ কালী: অদ্ভুদ তাঁর সাহিত্য প্রতিভা।
ঐশ্বর্যের ক্রোড়ে জন্মগ্রহণ করেও তিনি ধনী সমাজের কদাচারকে শানিত ভাষায় ব্যঙ্গ করেছেন,
উচ্ছৃঙ্খল আবহাওয়ার মধ্যে থেকেও সবসময় একটি মার্জিত পরিশীলিত ভব্যমনের অধিকারী ছিলেন।
অনেক সমালোচকই মনে করেন অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সে তার মৃত্যু না হলে কালে তিনি বঙ্কিম, বিদ্যাসাগর,
মাইকেলের মতোই একজন দিপাল ব্যক্তি হতে পারতেন সে যাই হোক এই সহৃদয় সামাজিক মানুষটির
সমস্ত খ্যাতি মূলত 'হুতোম প্যাঁচার নক্সা' গ্রন্থের জন্যই।
কালীপ্রসন্ন সিংহের রচিত গ্রন্থগুলি হল-
১। বাবু
নাটক (১৮৫৮)
২। বিক্রমোর্বশী
নাটক (১৮৫৭), কালিদাসের নাটকে স্বচ্ছন্ন অনুবাদ
৩। সাবিত্রী
সত্যবান নাটক (১৮৫৮) মহাভারতের 'বন পর্বান্তরগত সাবিত্রী সত্যবানের কাহিনি অবলম্বনে
মৌলিক মিলনান্ত নাটক'।
৪। মালতী
মাধব নাটক (১৮৫৯), ভবভূতির নাটকানুবাদ
৫। হিন্দু
প্যাট্রিয়ট সম্পাদক মৃত হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সরণার্থ কোন বিশেষ চিহ্ন স্থাপনের
জন্য বঙ্গবাসীর
প্রতি নিবেদন (১৮৬১) বিনামূল্যে বিতরিত।
১৬। হুতোম প্যাঁচার নক্সা-১৮৬১ খ্রিঃ অব্দে 'হুতোম প্যাঁচার কলিকাতার নক্সা (চড়ক)',
৭। পুরাণ
সংগ্রহ (১৭ খণ্ড মহাভারতের অনুবাদ)
৮। বঙ্গেশ
বিজয় (১৮৬৮)
৯। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (১৯০২ মৃত্যুর ৩২ বছর পরে প্রকাশিত)
এছাড়াও তার অনেক ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধ নানা পত্র পত্রিকা প্রকাশিত হয় কিছু কিছু গ্রন্থসমালোচনাও করেছিলেন তবে তাকে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় করেছে হুতোম প্যাঁচার নক্সা। তাঁর নাটক ও অন্যান্য রচনা একালে পাওয়া যায় যাও বা দুচারখানি পাওয়া যায় তা অনুবাদমূলক। সাবিত্রী সত্যবান মৌলিক নাটক।
কালীপ্রসন্নের কৃতিত্ব : বঙ্কিমপূর্ব বাংলা গদ্যে
চারটি রীতি দেখা দিয়েছিল—সাহেবী বাংলা, আদালতী গদ্য, সাধুরীতি ও কথ্যরীতি। প্রথমোক্ত
দুটি রীতি অস্বাভাবিক বলে ক্রমে পরিত্যক্ত হয়। শেষোক্ত দুটি রীতির দ্বন্দ্ব সমন্বয়ের
মধ্য দিয়ে বাংলা গদ্য বিকশিত হয়। রামমোহন, ভবানীচরণ, মৃত্যুঞ্জয়, বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের
হাতে বাংলা সাধুগণ্য বিকশিত ও পরিণত হয়েছে। প্যারীচাদ মিত্র ও কালীপ্রসন্ন সিংহ বাংলা
চলিত গদ্যরীতি নিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ নকশা
জাতীয় রচনা—আত্মগৌরবী প্রবন্ধ বা Subjective essay শ্রেণিতে এর স্থান। হুতোমের ভাষাচিত্র
রচনায় নিপুণ। এ চিত্র বর্ণবহুল, গতিময়। বইটি যেন বর্ণাঢ্য ভাষার চলচ্চিত্র।
=======================
যারা পেজটি দেখছেন অবশ্যই কমেন্ট লিখুন নাম দিয়ে
কোন মন্তব্য নেই
ok