গিরি, এবার আমার উমা এলে, আর উমা পাঠাবো না।
গিরি, এবার আমার উমা এলে, আর উমা পাঠাবো না।
বলে বন্ধে লোকে মন্দ, কারো কথা শুনবো না।।
যদি এসে মৃত্যুঞ্জয়, উমা নেবার কথা কয়-
এবার মায়ে-ঝিয়ে করবো ঝগড়া, জামাই বলে মানব না।।
দ্বিজ রামপ্রসাদ কয়, এ দুঃখ কি প্রাণে সয়,
শিব শ্মশানে মশানে ফিরে, ঘরের ভাবনা ভাবে না।।
-রামপ্রসাদ সেন
পদটি রামপ্রসাদ সেনের আগমনী বিভাগের। কৈলাস থেকে কন্যা উমা হিমালয়ে এলে কী করবেন মেনকা সে বিষয়ে পরামর্শ করছেন স্বামীর সঙ্গে। তিনি স্থির করেছেন কন্যাকে আর কৈলাসপুরীতে পাঠাবেন না; এতে পুরবাসী জনসাধারণ নিন্দা করলেও মেনকা তাতে ভয় পাবেন না। মৃত্যু ভয়প্রদ; সেই মৃত্যুকে জয় করে শিব হয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। মৃত্যুঞ্জয় শিব যখন উমাকে নিয়ে যেতে আসবেন, তখন মেনকা শিবের প্রাপ্য সম্মান দেবেন না, যতই তিনি মৃত্যুঞ্জয় হোন না কেন। মেয়ে উমাকে সঙ্গে করে মেনকা জামাই-এর সঙ্গে ঝগড়া করবেন। উমা রাজদুলালী; সেই উমা কিনা ঘর করেন শ্মশানে-মশানে। জামাই শিব ঘরের কথা আদৌ ভাবেন না।
পদকার রামপ্রসাদ বাঙালি। বাঙালার ঘরের, সমাজের সব বিষয়ই তাঁর জানা। দরিদ্র ঘরে কন্যা সম্প্রদানের পর বাঙালি পিতা-মাতার চিন্তা যে কী প্রকার হয়ে থাকে তা রামপ্রসাদের সম্পূর্ণ জানা। সেই ভাবনাকে কবি পদটিতে সঞ্চারিত করে দিয়েছেন। প্রথম চার পঙ্ক্তিতে বাঙালি মায়ের মুখের ভাষাটি পর্যন্ত ধরে দিয়ে পদটিকে একান্ত জনপ্রিয় করে তুলেছেন তিনি।


কোন মন্তব্য নেই
ok