Translate

প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা: ড. নীলোৎপল জানা

 




প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা

 পৃথিবীতে প্রায় চার হাজার ভাষা প্রচলিত আছে। এদের মূলীভূত সাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রধ্যণত তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের পদ্ধতির সাহায্যে কয়েকটি ভাষাবংশে বগীকৃত করা হয়। এই ভাষাবংশের একটি শাখা ভারতবর্ষ ও ইরান-পারস্যে প্রবেশ করলে তাদের ইন্দো-ইরানীয় বা সংকীর্ণ অর্থে আর্য শাখা বলা হয়। এই শাখাটি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি যায় ইরান-পারস্যে, অপরটি আসে ভারতবর্ষে। ভারতবর্ষে যে শাখাটি প্রবেশ করে তাদের ভাষাকেই ভারতীয় আর্যভাষা বলে। ঘটনাটি ঘটেছিল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় আর্যভাষাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয় —

১) প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা— বিস্তারকাল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। 

২) মধ্যভারতীয় আর্যভাষা— বিস্তারকাল আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ এবং

৩) নব্যভারতীয় আর্যভাষা— বিস্তারকাল আনুমানিক ৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান সময়।

 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রাচীনভারতীয় আর্যভাষার বিস্তারকাল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এই ভাষার মূল নিদর্শন হিন্দুদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ‘বেদ’। ‘বেদ’ আবার চারটি ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। এছাড়াও প্রত্যেক বেদের আবার চারটি অংশ আছে সংহিতা, ব্রাহ্মন, উপনিষদ এবং আরণ্যক। প্রাচীনভারতীয় আর্যের দু’টি রূপ ছিল বৈদিক ও সংস্কৃত। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

 

ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: 

 

১) ঋ, ঋঋ, ৯, এ, ঐ সহ সমস্ত স্বরধ্বনি এবং শ, ষ, স সহ সমস্ত ব্যঞ্জণধূনি এই ভাষায় প্রচলিত ছিল।

২) স্বরাঘাতের স্থান পরিবর্তনের ফলে শব্দের অন্তর্গত স্বরধ্বনির বিশেষ ক্রম অনুসারে পরিবর্তন হত। এই পরিবর্তনের তিনটি ক্রম ছিল— গুন, বৃদ্ধি ও সম্প্রসারন। স্বরধ্বনি অবিকৃত থাকলে তাকে গুন বলে, স্বরধ্বনি দীর্ঘ হয়ে গেলে তাকে বৃদ্ধি বলে এবং স্বরধ্বনি যখন ক্ষীণ হয়ে লােপ পায় তখন এই পরিবর্তনকে সম্প্রসারন বলে।

৩) সন্নিহিত দুই ধূনির মধ্যে যেখানে সন্ধি সম্ভব সেখানে সন্ধি প্রায় সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য ছিল।

৪) প্রাচীন ভারতীয় আর্যের বৈদিক ভাষার স্বর তিন প্রকার ছিল উদাত্ত (high\acute), অনুদাত্ত (low\grave), এবং স্বরিত (circumplex)। 

৫) প্রাচীন ভারতীয় আর্যে যুক্ত ব্যঞ্জণের স্বচ্ছন্দ ব্যবহার প্রচলিত ছিল। যেমন – ঐ, ক্ল, ক্ত, ভূ, র্ম, দার, ষ্ট্র, ঘ্ন ইত্যাদি।

 

রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

 

১) একবচন, দ্বিবচন এবং বহুবচন নিয়ে প্রাচীনভারতীয় আর্যে তিনটি বচন ছিল।

২) মূল ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষায় প্রাচীনভারতীয় আর্যে আটটি কারক ছিল কতৃকারক, কর্মকারক, করণকারক, নিমিত্তকারক, সম্প্রদানকারক, অপাদানকারক, সম্বন্ধকারক, অধিকরণকারক এবং সম্বােধনকারক।

৩) প্রাচীনভারতীয় আর্যে লিঙ্গ তিনপ্রকার ছিল পুং লিঙ্গ (masculine), স্ত্রীলিঙ্গ (feminine) এবং ক্লীবলিঙ্গ (neuter)।

৪) প্রাচীনভারতীয় আর্যে শব্দরূপের চেয়ে ক্রিয়ারূপের বৈচিত্র্য বেশি ছিল। কর্তৃবাচ্য (Active Voice) কর্ম-ভাব বাচ্য (Middle Voice) এই দুই বাচ্যে ক্রিয়ারূপ পৃথক হত।

৫) ক্রিয়ারূপ পরৈস্মপদ ও আত্মনেপদ— এই দুইরূপে বিভক্ত ছিল। ধাতুও তিনভাগে বিভক্ত ছিলপরৈস্মপদী, আত্মনেপদী ও উভয়পদী।

৬) প্রাচীনভারতীয় আর্যে তিনপুরুষে (উত্তমপুরুষ, মধ্যমপুরুষ ও প্রথমপুরুষ) ক্রিয়ারূপ পৃথক হত।

৭) এই ভাষায় ক্রিয়ার পাঁচটি কাল ছিল। এগুলি হল- লট্, লঙ্‌, নৃট্‌ (Present Perfect, Future), লিট্‌ (Perfect) লুঙ্‌ (Past)। এর মধ্যে লঙ্‌, লুঙ্‌ ও লিট্‌ ছিল অতীত কালের ই প্রকারভেদ।

৮) প্রাচীনভারতীয় আর্যের বৈদিকে ক্রিয়ার পাঁচটি ভাগ ছিল- অভিপ্রায় (লেট্‌), নিবন্ধ, নিদের্শক, সম্ভাবক (বিধিলিঙ্‌) এবং অনুজ্ঞা (লােট্‌)।

৯) প্রাচীনভারতীয় আর্যে প্র, পরা, অপ, সম, অনু, অব, নির, দুর, বি, অধি, সু, উৎ, অতি, নি, পরি, অপি, অপ, আ— এই কুড়িটি উপসর্গ ছিল। যারা ধাতুর পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করত।

১০) প্রাচীনভারতীয় আর্যে প্রত্যয় যােগেও নতুন নতুন শব্দ গঠন করা হত। এই প্রত্যয় ছিল দুই প্রকার কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়। ( ধাতুর সাথে যে প্রত্যয় যােগ করা হত তাকে বলা হত কৃৎ প্রত্যয়। যেমন- বৃৎ+শানচ্‌= বর্তমান, মন+উ= মনু, আর শব্দের সাথে যে প্রত্যয় যােগ করআ হত তাকে বলা হত তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন- মন+অন্ মানব।)।

============================

মোবাইল: ৯৯৩২৩১২২৩৫

যারা পেজটি দেখছেন অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না



কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.