Translate

বাংলা উপভাষা :ড. নীলোৎপল জানা

                                                                


বাংলা উপভাষা

বাংলা ভাষার উপভাষাসমূহ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা দলের অংশ।

 

উপভাষাগুলির অবস্থান

১/রাঢ়ী- নদিয়া, হুগলি, বর্ধমান জেলা সহ দক্ষিণবঙ্গ,

২/ ঝাড়খণ্ডী- বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম সহ ঝাড়খন্ডের কিছু অংশ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম । 

৩/ বরেন্দ্রী- মালদহ, মুর্শিদাবাদ, রাজশাহী সহ উত্তর-পশ্চিম বাংলা,

৪/বঙ্গালী উপভাষা- এটি অধুনা বাংলাদেশের প্রধান উপভাষা।ঢাকা বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ, খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ, বৃহত্তর কুমিল্লা-নোয়াখালী এবং ত্রিপুরার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আছে এই উপভাষা।

৫/কামরূপী- পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার; আসামের বঙাইগাঁও, কোকড়াঝাড়, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ী জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ এর সব জেলায় এটি প্রচলিত।

 

শ্রেণিবিভাগ

বাংলা ভাষায় অঞ্চলভেদে ভিন্ন উচ্চারণ হয়ে থাকে, তাই, বাংলা উপভাষা পাঁচ প্রকার:

    রাঢ়ী উপভাষা

   ঝাড়খণ্ডী উপভাষা

    বরেন্দ্রী উপভাষা

    বঙ্গালী উপভাষা  

    কামরূপী উপভাষা

এই পাঁচটি ছাড়াও কিছু কিছু ভাষাবিদগণ কয়েকটি স্বতন্ত্র উপভাষার নাম উল্লেখ করেন ।

১. রাঢ়ী উপভাষা

এই উপভাষাকে ভিত্তি করে প্রমিত বাংলা গঠন করা হয়েছে।

রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

1.    শব্দের যে কোনো স্থলে ব্যবহৃত 'অ'-এর 'ও' রূপে উচ্চারণ প্রবণতা।

    যেমন- অতুল >ওতুল, মধু >মোধু, পাগল > পাগোল, মত > মতো।

1.    শব্দে ব্যবহৃত 'ন' 'ল' রূপে এবং 'ল' 'ন' রূপে উচ্চারণ লক্ষ করা যায়।

    যেমন- নৌকা >লৌকা, নয় >লয় ;লুচি >নুচি, লেবু >নেবু।

1.    কর্তৃকারকের বহুবচনে 'গুলি', 'গুলো' এবং অন্য কারকের বহুবচনে 'দের' বিভক্তির প্রয়োগ।

    যেমন- মেয়েগুলো, পাখিগুলি, রামেদের।

 ২. বঙ্গালী উপভাষা

রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

1.    এ >অ্যা (কেন > ক্যান ) , উ >ও (মুলা > মোলা), ও >উ (দোষ >দুষ), র >ড় (ঘর >ঘড়) ধ্বনিতে পরিবর্তন ঘটে।

1.    গুল, গুলাইন দিয়ে বহুবচন পদ গঠিত হয়।

    যেমন- বাত গুলাইন খাও।

1.    গৌণকর্মে 'রে' বিভক্তি প্রযুক্ত হয়।

    যেমন- আমারে মারে ক্যান।

৩. বরেন্দ্রী উপভাষা

রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

1.    অপ্রত্যাশিত স্থানে 'র' আগম বা লোপ।

    যেমন- আম >রাম, রস >অস।

1.    গৌণকর্মে 'কে', 'ক' বিভক্তি দেখা যায়।

    যেমন- হামাক দাও।

৪. ঝাড়খণ্ডী উপভাষা

 রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

1.    প্রায় সর্বত্র 'ও'-কার লুপ্ত হয়ে 'অ'-কারে পরিণত হয়েছে।

    যেমন- লোক >লক, মোটা >মটা, ভালো >ভাল, অঘোর >অঘর।

1.    ক্রিয়াপদে স্বার্থিক 'ক' প্রত্যয়ের প্রচুর প্রয়োগ।

    যেমন- যাবেক, খাবেক, করবেক।

1.    নামধাতুর প্রচুর ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

    যেমন- জাড়াচ্ছে, গঁধাচ্ছে।

৫. কামরূপী উপভাষা

 রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য

1.    'র' এবং 'ড়' ও 'ন' এবং 'ল'-এর বিপর্যয় লক্ষ করা যায়।

    যেমন- বাড়ি >বারি, জননী >জলনী।

1.    শব্দের আদিতে শ্বাসাঘাতের জন্য 'অ', 'আ' রূপে উচ্চারিত হয়।

    যেমন- অসুখ >আসুখ, কথা >কাথা।

1.    'ও' ধ্বনি কখনো কখনো 'উ' হয়ে যায়।

    যেমন- কোন >কুন, বোন >বুন।

1.    যৌগিক ক্রিয়াপদে 'খোয়া' ধাতুর ব্যবহার আছে।

    যেমন- রাগ করা >আগ খোয়া।



ভিডিওটি দেখলে উপকৃত হবেন।
=============================

যারা পেজটি দেখছেন অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না নিজের নাম লিখে।



কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.