খগেশ্বর দাস
রবীন্দ্র বাগান
খগেশ্বর দাস
আমি উদ্ভিদ বিদ্যার এক নগণ্য অধ্যাপক; তাই সহজে গাছের ভাষা বুঝি। আমি বাগানের মর্ম
যত বুঝি সাহিত্য হয়তো ততটা বুঝিনা। সাহিত্যও আমার কাছে ফুলের বাগানের মতো। ফুলের
বাগান হোক বা সাহিত্য উভয়েই আমাদের বোধের গভীরতা দাবী করে।আর রবীন্দ্ররচনার বিচিত্র সম্ভার পরিধিহীন বোধের সাগর।
যেহেতু আমি একটু আধটু কবিতা
লিখি , গান করি;
তাই আমরা বোধের কাছে রবীন্দ্রনাথ বাগানের মতো। কত বিচিত্র সম্ভারে ভরা তাঁর
সৃষ্টির বাগান, তাতে কত বিচিত্র রঙের ফুল। ছোটগল্পের কথাই
যদি ধরি, তা যেন রসালো চেরি ফল। রূপ আছে, রঙ আছে, স্বাদ আছে অমৃতের মতো। বাংলা
সাহিত্যের বাগানে থোকা থোকা রঙিন তারার মতো ফুটে আছে। যদি উপন্যাসের কথা বলি,
নদীর মতন তার সুদীর্ঘ চলা, বাঁকে বাঁকে
কত শত সুচিত্র বন্দর, কত জনপদ, নাগরিক
মহানাগরিক। মননের মনোজগতের কত বিচিত্র কথন। কবিতা ও ছড়ায় রবীন্দ্রনাথ বরাবর
সমকালীন। উপমা, রূপক, ব্যঞ্জনা
অলঙ্কার আর প্রাজ্ঞ দর্শনে ভরপুর তাঁর মরমী কবিতা। ফুলের যেমন বর্ণে গন্ধে বিচিত্র
সমারোহ এবং দ্যুতি, রবীন্দ্র কবিতাও বিষয়ে, আঙ্গিকে, প্রজ্ঞায় বহুগামী। আর গানের কথা
বললে মনের গভীরে দূরের পানসি ভেসে যায়। মনে হয় স্বতঃস্ফূর্ত নিরুদ্দেশে পাড়ি।
হৃদয়ের জমাট ব্যথা নিমেষে তরল স্রোতে ঝরণা হয়ে নামে। প্রেম ও প্রার্থনায় আপ্লুত করে মন, আমি আবেগে প্রেমিক
হয়ে যাই। মানব মনের সকল ফূর্তি যেন রবীন্দ্র গানে মূর্ত
হয়ে ওঠে। রবীন্দ্র সাহিত্য মনে হয় পরিধিহীন জ্ঞান ও অনুভূতির মরমী সাগর সে সাগরে স্নান ক'রে শ্রান্তি
দূর হয়, শুদ্ধ হওয়া যায়।
সমগ্র রবীন্দ্রনাথকে
একসাথে অনুভব করার মতো দৃষ্টির প্রসারতা
আমার নেই। আমার কাছে রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীর অনন্ত বাগানের মতো তাঁর ফুলশোভা, ফুলগন্ধ
আমাকে বিভোর করে। আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকি এক
অন্তহীন বিচিত্র বাগানের দিকে।
কোন মন্তব্য নেই
ok