Translate

বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তির ইতিহাস: ড. নীলোৎপল জানা

 



বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তির ইতিহাস

          আবুল ফজল তাঁর 'আইন-ই-আকবরী' গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘বাংলা’ শব্দ ব্যবহার করেন। কিন্তু এই বঙ্গ বা বাংলা শব্দের কিভাবে উৎপত্তি হল সে বিষয়ে নানারকম মত প্রচলিত আছে। যেমন-

এক. নীহাররঞ্জন রায় তাঁর 'বাঙ্গালীর ইতিহাস' (আদি পর্ব) গ্রন্থে জানিয়েছেন-- : ‘বঙ্গাল’ শব্দ থেকে বাংলা, বাঙলা, বাঙ্গালা প্রভৃতি শব্দ সাধিত হয়েছে। ইউরোপীয় পর্যটকগণও ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই দেশকে Bengala বলে এসেছেন। এমন কি পর্যটক মার্কো পোলো Bengala বলেছেন।

দুই. রমেশচন্দ্র মজুমদার ‘বাংলার ইতিহাস' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :-  

(ক) ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে জাও দ্য বারোস বাংলাদেশের যে মানচিত্র ও নক্‌শা অঙ্কন করেছিলেন, তাতে সমগ্র বাংলাদেশকে তিনি Bengalla বলেছেন।

(খ) ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ফান ডেন ব্রুক যে মানচিত্র অঙ্কন করেন তাতে Bengala বলতে সমস্ত দেশকেই নির্দেশ করেছেন।

(গ) রেনেলের বিস্তারিত মানচিত্রে এই দেশের নাম দেওয়া হয়েছে Bengal।

তিন. গোপাল হালদার তাঁর 'বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখা' (প্রথম খণ্ড) গ্রন্থে বলেছেন, “রাঢ়, সুহ্ম, পুণ্ড্র, বঙ্গ প্রভৃতি প্রাচীন শব্দগুলি প্রথম দিকে বোঝাত বিশেষ বিশেষ জাতি বা উপজাতিকে; তারপরে তাদের বাসস্থল হিসাবে এক একটা বিশেষ বিশেষ অঞ্চলকে।”


দুঃসময়ের কবিতা
এই ধরনের আরো কবিতা শুনতে পেজটি  ফলো ও লাইক করে রেখো


চার. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত' (প্ৰথম খণ্ড) গ্রন্থে জানিয়েছেন—': “ইংরাজ শাসনাধীনে আসিবার পূর্ব হইতেই ইংরাজ বণিকগণ এই দেশকে Bengal বলিয়া আসিতেছিলেন। তাঁহারা বাংলা ভাষাকেও Bengal Language বলিতেন। হালহেড ইংরাজী ভাষায় যে বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, তাহাকে Grammar of the Bengal Language (1778) বলিয়াছিলেন। মনোএল-দ্য-আস্- সুম্পসাম ১৭৪৩ সালে পর্তুগীজ ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ ও শব্দকোষ রোমান হরফে লিসবন হইতে মুদ্রিত করেন। তিনি উক্ত ব্যাকরণের আখ্যা দিয়াছিলেন, Vocabulario Idioma Bengalla e Portuguez."

পাঁচ. সুকুমার সেন তাঁর 'বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস' (প্রথম খণ্ড) গ্রন্থে বলেছেন-- : আমাদের দেশে, ভারতবর্ষে, অধিকাংশ দেশনাম জাতিনাম হইতে আগত। (সেইজন্য সংস্কৃতে দেশনামে সাধারণত বহুবচন হয়। যেমন, “অস্তি মগধে চম্পকবতী নামারণ্যানী”, “বঙ্গেষু আহববর্তিনঃ” ইত্যাদি।) সুতরাং বঙ্গজাতির অধ্যুষিত অঞ্চল ‘বঙ্গ’ দেশ। অথবা বঙ্গে-জলময় দেশে—যাহারা পূর্বাপর বাস করিত তাহারা ‘বঙ্গ’ এবং পরে তাহাদের নিবাসভূমি ‘বঙ্গ’ দেশ।”

ছয়. অতুল সুর তাঁর 'বাঙালার সামাজিক ইতিহাস' গ্রন্থে জানিয়েছেন, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবিভাগের পূর্ব পর্যন্ত বাঙালির আবাসভূমিকে বলা হত ‘বঙ্গদেশ’ ইংরেজিতে যার নাম “বেঙ্গল'। প্রথম 'বঙ্গ' শব্দটি ছিল এক কৌমগোষ্ঠীর নাম। কৌমগোষ্ঠীর নাম হিসেবে 'বঙ্গ' নামটির সঙ্গে বৈদিক যুগের আর্যরাও পরিচিত ছিল। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে বঙ্গবাসীদের ‘বয়াংসি’ বা পক্ষিজাতীয় বলে বর্ণনা করা হয়েছে, আর ‘পুণ্ড্র’দের দস্যু বলে অভিহিত করা হয়েছে। বোধহয় পক্ষি বিশেষ তাদের ‘টোটেম’ ছিল। মহাভারত রচনার যুগে ‘বঙ্গ’, ‘কর্বর্ট, ‘সুহ্ম' প্রভৃতি জনপদের নাম পাওয়া যায়।

    হিন্দু যুগের ইতিহাসে বঙ্গ ও গৌড় দুই জনপদের অস্তিত্ব স্বীকৃত হয়েছে। আবার পাঠান আমলে বঙ্গভূমি শুধু ‘গৌড়' নামে পরিচিত হয়েছে। ‘বঙ্গ’ও ‘বাঙ্গালা’ শব্দের ব্যবহার যে ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে একথা ঐতিহাসিকরা মনে করেন।


========================
Whatsapp: 9932312235   
     মতামত জানাতে পরো।





কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.