Translate

লোকপথ ২৪তম সংখ্যা।








   

                                 লোকপথ,বইমেলা সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০২৩

                            সাহিত্য পত্রিকা 

                        

                        কবিতা বিষয়ক ২৪তম সংখ্যা।। ডিসেম্বর ২০২৩

সূচিপত্র

নিশীথ ষড়ংগী  মৃণালকান্তি দাশ

হরপ্রসাদ সাহু 

সৌমিত বসু  

রফিক উল ইসলাম  আশিস মিশ্র  

শীতল চৌধুরী  দেবব্রত দত্ত  সৌগত প্রধান  মধুমিতা বেতাল  

গোবিন্দ বারিক বাণীব্রত কেতকীপ্রসাদ রায় সুধাংশু রঞ্জন সাহা

অদিতি সেনগুপ্ত   জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়   দুরন্ত বিজলী   অন্তরা দাঁ 

কৃষ্ণ  সৎপথী   মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

অর্থিতা মন্ডল   আমিরুল ইসলাম চৌধুরী  রাজীব ঘাঁটি

প্রদীপ্ত খাটুয়া   সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য   তাজিমুর রহমান

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় কৌশিক বর্মন   লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

উত্তম বেহারা খুকু ভূঞ্যা   নীলোৎপল জানা।

==================================================================================================================================================



ডিপফেক

নিশীথ ষড়ংগী


অবিশ্বাস্য নয়,তবু বিশ্বাসের শিলাস্তরে সমূহ ফাটল

উঠে আসে অতর্কিত লাভা--

ভয়ঙ্কর মিথ্যেটুকু কোথায় রাখবে,বলো

ঘনমেঘে সব যেন আবছা লাগে বড়ো


রূপ থেকে প্রতিরূপ,তল থেকে আরও অবতল

মুহূর্ত-ভগ্নাংশ থেকে আরও আরও ভগ্ন অংশ হয়।


কতোদূর যেতে পারো সভ্যতা আমার!

কতোটা সুদূর আজ দূর-পরাহত!


শেকড় ছড়িয়েছে সেই হৃদয়ের তবু।,,,,


অন্ধকার কুচি কুচি কেটে ফেলে সময়ের ব্লেড


তর্জনীর মুখোমুখি দুঃখ-ব্যারিকেড ,,,,,


=============================================

শত্রুরা 

মৃণালকান্তি দাশ 


কলমের পাশে আজ

কবিতার কোনো ছায়া নেই,

শত্রুরা কাল রাতে

চুরি করে নিয়ে গেছে

নদী ও নারীকে-

তাদের উচ্ছল ধ্বনি 

বেজে উঠছে আজ দিকে দিকে !


===============

অপূর্ব ক্ষমায় জমাট নীল তুলসী

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল 

 

কচুরিপানার ছায়াকেই আবাদের সীমানা বলছে ভাগবত অধিকারী

ধীরে ধীরে চোখের পাতা কাঁপতে থাকে সাদা শূন্য বর্তমানের ভিতর; কয়েক খোপ স্তব্ধতা নিয়ে তারই দিকে তাকিয়ে জলজ সুবাসটুকু নিরালা

আর অপূর্ব ক্ষমায় জমাট নীল তুলসী

 

এই গহন আকাশি বাতাসে মধ্যাহ্নগামী উদোম রোদ্দুর,  তার লিমিটেসানের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়াটে আলপথ ; কয়েক পক্ষ ডুবে থাকার পর বেরিয়েছে হাড়গোড়

 

দুখুর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আমি একটা পূর্ণিমা দেখা রাস্তা

 

দূরে কোনো এক বৃদ্ধকাল

আলাপের স্বর খুঁড়তে খুঁড়তে বৃষ্টি শুকিয়ে যাওয়া গোড়ালির ব্যথা সয়;  আর খালি হতে থাকে ফুসফুস 


===============

মা

নীলোৎপল জানা


আমার জন্মদাত্রী মা আমার প্রিয় দেবী

তাঁর চরণ ছুঁলে সকল বেদনা ভুলে যাই

আমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস; আশা-ভরসা-আনন্দ...

সবই মা

আমার মা; আমার বৃদ্ধা মা।

         ====================

মৃত্যুঞ্জয়

কৌশিক বর্মণ


কখনও হঠাৎ যদি

কোনো নিরালা নিঝুম সন্ধ্যায়

মৃত্যু এসে কড়া নাড়ে দরজায় 

আদুরে সুরে জানতে চায়

’’বাড়িতে আছো ?দ

তুমি নিঃশব্দে দরজাটা খুলে দিও 

ভেতরে এসে বসতে বোলো

জানালার ধারে যেখানে থাকবে শুধু অন্ধকার

আর অন্ধকারের বুক চিরে ফুটে ওঠা আলো

যে আলো অন্ধকার কে আরও জীবন্ত করে তোলে

করে তোলে আরও রোমাঞ্চকর !

তারই নিরালায় মৃত্যুর কপালে

একটা আলতো চুমো খেয়ে বিশ্বাসে

আলিঙ্গনে ভালোবাসা দিও

শুনিও প্রিয় গান অথবা রবীন্দ্রনাথ  !

দেখবে -মৃত্যুও তোমার বন্ধু হয়ে উঠছে সেদিন

সোহাগ করে বলছে বাঁচার কথা !

সেদিন তোমার কাছে সে নিজে ধরা দেবে

জীবন হয়ে .....আলো হয়ে.....ভালো হয়ে -


তুমি শুধু নিঃশব্দে দরজাটা খুলে দিও .....

খুলে দিও দরজাটা .....


                  ============================

অনভিমান

হরপ্রসাদ সাহু


তোমার পাপোশ হয়ে থাকার চেয়ে 

চলে যাওয়াই ভালো।

ভাঙ্গা কুলো হয়ে থাকার চেয়ে 

চলে যাওয়াই ভালো।

কিংবা সম্মার্জনী হয়ে থাকার চেয়ে 

চলে যাওয়াই ভালো।


তোমার পাপোশ হয়ে বেশ কিছুকাল কেটে গেল আমার জীবন।

ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো হয়ে বেশ কিছুকাল কেটে গেল আমার জীবন।

তোমার পরিবারের সম্মার্জনী হয়ে বেশ কিছুকাল কেটে গেল

আমার জীবন।


যদিও দুঃখ যদিও অভিমান-ক্রোধ রেখেছি আড়ালে, 

কলঙ্কিত হতে হতে এতদিনে জেনেছি তোমাকে,

পরমপ্রাপ্তি এই, আর এ-জন্মকে অবহেলিত করার ফল পেয়েছি হাতেনাতে।


এবার চলে যাওয়াই ভালো।

অনেকদিন তো কেটে গেল তোমার কৃত্রিম আদরে,

অনেকদিন তো কেটে গেল বাইরে মধু ভিতরে গরল বৃত্তের ভিতর,

প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে হতে কেটে গেল অনেক দিন,

এবার চলে যাওয়াই ভালো,

ভালো--তোমার-আমার উভয়েরই।

===================

আমার মেয়েটি

সৌমিত বসু


মায়ের কোল ঘেঁষে শুয়ে আছে মেয়ে,মুখে রক্তজবা।যতবার দুধ টানে বিছানা রক্তে ভেসে যায়।যতবার ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে,মাও কেমন যেন সরে সরে যায়।


কোনো কোনো রাতে সে উড়ে বসে বুকের ওপর।শুড় দিয়ে অল্প আদর মেখে মা বাবার চোখে ঘুম আনে।টুপ করে ঢুকে পড়ে হাসিমুখে ভরে দেয় মাঝের ফাঁকটুকু। 


বাতাস বইছে।মেয়ে আমার পাতা হয়ে ঝরে পড়ছে নিচে।সন্ধ্যা হয়ে এলো।পাতাটুকু কুড়োনো হলোনা।


=====================================================

যার সঙ্গে

রফিক উল ইসলাম 


যার সঙ্গে আছি, তাকে আমি চিনি না। ইশারায়

কথাবার্তা হয়। যে পৃথিবী পিছনে ছিল, যে পৃথিবী 

সামনে আছে, তাদেরকে ফুটবলের মতন গড়াতে গড়াতে সামনে এনে

আঁকিবুঁকি কাটি দুজনে। গাছপালা ঝুঁকে ঝুঁকে দেখে,

পাখিদের শিসের ভেতর আমাদের এইসব কথোপকথন 

ভেসে ভেসে গ্রহান্তরে যায়।


এভাবে অনেককাল পার হয়ে এসেছি।  আমি যখন

রসনাতৃপ্ত, সে তখন বুভুক্ষুর পাতে অন্ন হয়ে ঝরেছে।

আমি যখন স্ত্রীর সঙ্গে শপিং-মল, সে তখন চুপিচুপি

প্রেমিকার দুচোখ মুছিয়েছে। অথচ তাকে ঠিকঠাক

চিনতে পারি না আজও। পৃথিবীর সব ছেঁড়া ফুটো

                                               তাপ্পি দিতে দিতে

সমস্ত জীবন ব্যয় হয়ে যায় তার। অথচ হায়, আমাকেও সে

ছাড়তে পারে না! 


যার সঙ্গে থাকব, তাকে আমি চিনি না!

================================

স্বপ্নসরণি 

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

 

 যে রাস্তায় ছায়া পড়ে না 

সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে 

নিরালম্ব  আলোকমালায়  

সে দেখছে নিজেরই আকাশ। 

 

অথচ এমন নয় 

তার কোন অবয়ব নেই

অথচ এমন নয় সে এক দৃশ্যাতীত শরীরের ভার

বয়ে যাচ্ছে অনন্তের পথে 

 

আসলে এক মায়া দরজার সামনে খুলে গেছে 

স্বপ্নের নির্জন সরণি।


                        ===============                       

নদী

তাজিমুর রহমান


যে পথে আগুন বহমান আমি সেখানে রেখে দিই নদী

সেলুলয়েডের নয়,বিনম্র ভালোবাসার


নদীটির একটা নামকরণ করতে তন্ন তন্ন খোঁজ-  হরিচরণ থেকে চলন্তিকা 

অথচ আদিগঙ্গার থেকে সরু যে প্রবাহটি চলে যায়

গ্রাম ছাড়িয়ে বটবৃক্ষের পাশ দিয়ে তীর্থদর্শনে

তার নামের পাশে অনন্ত জেগে রয়েছে মানবতা


এসো,সকলে আর একবার তাকে রাখি কুমোরের চাকতির উপর

যদি দ্বেষ দরবেশ হয়ে কথা বলে নিতে পারে  আচানক

==========

একটি সাক্ষাৎকার 

মন্দিরা ঘোষ 


এই সন্ধ্যাসাক্ষাতের কোনও লাগাম পরানো হয়নি

দুটি ধোঁয়া ওঠা কাপের ব্যাসার্ধে

ঘন হয়ে উঠছে জুন জুলাইয়ের রুটপ্ল্যান

দু একটা বদভ্যাসের মাছি

ঘনিয়ে তুলছে রহস্যের মেদ


একটা নির্ভেজাল ভ্রমণসূচির জন্য 

যখন সক্রিয় ইমনসন্ধ্যা

 নিবিড় মুহূর্তটিকে  হত্যা করা হলো

পারস্পরিক  ছুঁড়ে দেওয়া শব্দশরে


রক্তপাতহীন এই হত্যাকান্ডের  সাক্ষী  থাকলো

 বরফ হয়ে ওঠা দুটি কাপের অসীম শূন্যতা 


 অব্যক্ত মেঘের গুঞ্জন পরিধি ছাপিয়ে গেলে

 অঝোর বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল

জুনজুলাইয়ের সমস্ত রুটপ্ল্যান

           ===================    

অন্ধকারের রক্ত

আশিস মিশ্র


অন্ধকারের রক্ত আপাদমস্তক গড়িয়ে পড়ছে। 

এই দৃশ্য কেউ বন্দী করে রাখছে মোবাইলে, 

কেউ এঁকে নিচ্ছে খাতায়; কেউবা দেখেও 

না-দেখার ভান করে পালিয়ে যাচ্ছে।


এসব দৃশ্য নিয়ে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন 

লেখা হলো না- ‘চেপে দাও’ বলে 

পেজ উল্টে দিচ্ছে একটি শ্রেণির প্রতিনিধি।


তারপর তুমুল কোলাহল, মত, মতান্তর...


আসল ঘটনা, ঘটনার ভেতরের ঘটনা 

সবকিছুকে তলানিতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।


ইতিহাসের কথা জানতে গিয়ে তুমিও একদিন 

অন্ধকারের শুকনো রক্ত নিয়ে কার দিকে যাবে? 

নির্বাক অতীত কি তবে ডানা গুটিয়ে বসে আছে!

============

রশ্মি

শীতল চৌধুরী


তোমার রশ্মি থেকেই উৎপত্তি আমার হৃদপিণ্ডের

তোমার মধ্যেই রয়েছে তাই সৌন্দর্যের প্রকাশ

তুমি আমার লোকগীতি, প্রাণের এক তারা

তোমাতেই খুজি মুক্ত মনের প্রসার......

                  তোমার মধ্যেই আমার বসবাস

                  তোমার মধ্যেই আমার সুপ্তি

                  তুমি আমার চলাচল

তুমি আমার সুন্দরের চালচিত্র; অনন্তের পাখি!

============

উপহার

দেবব্রত দত্ত


বাড়ির ভেতরে একফালি মাটির উঠোন-লাগোয়া 

পলেস্তারা খসা উঁচু-উঁচু থামওয়ালা টানা বারান্দা। 

তবলা হারমোনিয়াম তানপুরা আর সবার মাঝে 

কাকলি দত্ত গাইছেন রবীন্দ্রসংগীত ‘আজি ঝরো ঝরো 

মুখর বাদরদিনে’ কিংবা ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল 

করেছ দান’। বৃষ্টি ভেজা গান, অন্ধকার আর আলোয় 

কেমন যেন আটকে গিয়েছিল প্রতিটি চরণ। 

ছোট বড়ো ঝরে-পড়া ফুল। একতারা দোতারা সন্ধ্যাতারা। 

সত্যিকারের ভালোবাসা পরস্পরকে পূর্ণতায় নিয়ে যায়, 

আর জীবনের সেই পূর্ণতার বোধে দুঃখ হলো সুনিশ্চিত 

আর মহার্ঘ্য। বিরহই একমাত্র দুঃখবোধ নয়, দুঃখের সঙ্গে 

পরিচয় নেই যার জীবনকেও জানা হয়নি তার। 

ও চাঁদ চোখের জলের লাগল জোয়ার দুখের পারাবারে।’ 

মুগ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে মিশে এই দুঃখবোধ যে, 

এই সময়টা তো আর ফিরে আসবে না। ডাক নাম ধরে 

ডাকার মতো গান চলতে থাকে হাওয়ায় হাওয়ায়। 

‘দুখজাগানিয়া...’

=============

জয়ধ্বজা

সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য


একটা করোটি থেকে লৌহ ছিটকায়

অন্যটায় তামা

রক্ত সব লৌহকনিকা

তাম্রর অভাব


গরুর রচনা লিখতে গিয়ে

ঘাস ও বিচালির মধ্যে গুড়ের মিশেলে 

জমাট রক্তর স্বাদ এনে রাজনীতি, 

পতাকা উড়িয়ে দিচ্ছে গুমোট আকাশে


মুখে আবোলতাবোল সুকুমার রায়

গয়না ব্যবসায়ীর হৃদয় উড়িয়ে দিয়েছে

বোমার স্প্লিন্টার

অনুভব ভয় শূন্য,শোচনাহীন


গহ্বরে আটকে শ্রমিক এখনও

নিরাসক্ত নিরুত্তাপ মৌন সমাজ

ক্রিকেটের জন্য প্রাণপাত,খেলা নয়

বিচ্ছিন্ন, বিভেদকামী রাজনীতির সুদৃশ বোড়ে


করোটির পর করোটি জোড়া মুন্ডমালা ভারতের গলায়

===============================================                           

রূপনারায়ণ

প্রদীপ্ত খাটুয়া


কিছু কিছু দেখা হারাতে মন চায় না।


দূরে চলে গেছে নদী। ফেরিঘাট বন্ধ। হাঁটা ও ফেরী 

এখন দু-পাড়ের সেতু। রূপনারানের স্রোত 

আটকে দিয়েছে পলি জমে গড়ে ওঠা নতুন চর।


কিছু দেখা, কিছু যাপন, আমাদের চোখে আটকে পড়ে। 

শৈশব, বন্ধুতা, প্রথম প্রেম- আঁকড়ে থাকে একজীবন।


বেশ উঁচু, সুদীর্ঘ, নতুন চর আড়াআড়ি ভাগ করেছে 

ভোরের আলো। সংßৃñতি।


একদিন ইতিহাস হবে এই সকল দেখা। এইসকল 

মনখারাপ, বিষাদ, একসময় কালো মেঘ হয়ে যাবে...


নিকশ আঁধারের গর্ভ থেকে পূর্বপুরুষের 

প্রকৃত দেখাগুলি আলোয় আনবে আগামী প্রজন্ম...

======================================                                

অভ্যাস

সৌগত প্রধান 


স্বপ্ন দেখার অভ্যাস একটা দুষ্টু রোগ... 


ঠিক রোগ নয় - রাস্তার পাশে শেকড়ের ফাঁদে শেকড় জড়ানো জালে 

আটকে পড়া নতুন প্রাণবীজের মতো


যার এক হাতে মানুষের 

পরম বন্ধু হয়ে ওঠা নিঃসঙ্গতা 

আর অন্য হাত আগলে রাখে 

হেরে যাওয়া মানুষের নিজস্ব গন্ধ...


এক অসহায় বিদ্রুপের মতো 

মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ঝরে পরা নক্ষত্র 

যার চোখ জেগে আছে পথিক হাওয়ায়...


যে হাওয়ায় বেঁচে থাকে অনন্ত সপ্তসুর...

============

ঐতিহাসিক নীরবতা

মধুমিতা বেতাল


একটি ঐতিহাসিক মিনারের সাথে 

অপ্সরার নাভিস্তর চুপিচুপি কথা বলে।

ত্রিকাল-প্রেম মধুতাপ হয়ে গোপন মৈথুনে 

লিপ্ত হয় যেখানে, সেখানেই আগুনের 

লাভাপথ ঘুমিয়ে পড়ে।

 

আমার ধীর পায়ে হেঁটে চলা নিয়ন্ত্রিত 

গতি খনন করে পূর্বপুরুষদের স্তিমিত বজ্র।

অশ্রুগ্রন্থির ব-দ্বীপ থেকে ভেসে আসে 

কুরুক্ষেত্র ধোয়া লাল নদী।

 

আমি ভোররাতের ক্লান্ত স্নান সেরে ফেলতে

স্রোতে নামি, অজস্র ইন্দ্র-ভ্রূণের ফণা 

ঢেউ হয়ে জড়িয়ে ধরলে অহল্যা আঁধার

ঋতুমতী হয়ে ওঠে উন্মুক্ত কামনায়।

আমার সহস্র কবিতার আমি তখন তোমার

স্মরণে পাশা খেলার দ্রৌপদী হয়ে 

জীবনের পণ রাখি নীরবে।

===========


আলো দাও,উত্তাপ নয়

রাজীব ঘাঁটী


সব জিজ্ঞাসাগুলি আজ সমাধান করবো

বলে দেব জানতে চাওয়া আমার জীবন

সবটুকু শুনে আমার কথা লিখে নাও

বলে রাখ বন্ধুদের , আমার যাপন বিন্যাস।


প্রজাপতির মতো একটি দিন রঙিন হয়ে

পাখার বর্ণ বিলাবো , আনন্দধারা ছড়িয়ে

অনেকখানি আদর মাখবো বন্ধু আবদারে

তুমি বলে দেবে না বলা অধ্যায়গুলি।


সাগরের কোন এক অচেনা সৈকতে

দেখা হবে দুজনের, সেদিনও বন্ধুত্ব খুঁজতে

খুঁজতে ফিরে যাবো শৈশব-কৈশরের দিনগুলিতে

তুমি রজনীগন্ধা বিকেল হতে পারো ,তারপর

চেনা সন্ধ্যায় আগুনের লেলিহান শিখায় ছড়াবো

আলো আর আলো, উত্তাপ এখন অহরহ ।


                           ====-======                             

এই অস্থির সময়ে 

আমীরুল ইসলাম চৌধুরী


এমন একটা সময় এখন 

যখন মুখ ঢাকে বিজ্ঞাপনে 

মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলি ভিড়ে 

কারও অঙ্গুলিহেলনে 

কাঠ খোদাই লিথোচিত্রে 


এখন কথার কি ছিরি বুঝি না 

মাটির ডালা সোনার ফসলে 

মেঘমুক্ত আকাশ ঘিরে 

দই ওয়ালা হেঁকে চলে 

সংকটের মাঝে অন্য প্রতিচ্ছবি 


আমরা সোনার খাঁচা বানাতে ব্যস্ত 

যুদ্ধের বিস্তীর্ণ ভূ খন্ডে 

বিভীষিকাময় রাজপথে 

চলে অবাধে গোলাগুলি 

আর তাতেই স্নাত হয়ে ওম নিচ্ছি

                   ================================

গামছার লোটা ও এক টুকরো পৃথিবী

গোবিন্দ  বারিক


কচু পাতার নীচে চুপ মেরে শুয়ে আছে কবি

শুটি টুকে খেসারির নীল ফুল আঁকছে গ্রাম   

বাঁশ পাতার মতো জোনাকি খোঁপায় জ্বেলেছে বিন্দু বিন্দু স্বপ্ন, ঠোঁটের কোণে চোখের বারান্দায়

অভিমানী দীপ সাজিয়ে নশ্বর-গৃহিনী, সাত জনম


বাদলা পোকার মত সরে আছি দূরে, দূর মানে সবুজ আলের ওপর মুনিরশর পান্তা ভাত।

কৃষ্ণ-রোদ চুইয়ে পড়ছে কপালে দুঃখের মতো

কে তুমি গাইছো করুণ সুরে মাগনা গীতি

এক বুক আলো মেখে লংকা কামড়ে

ঝুঁকে ঝুঁকে রুইছো অভাব অনটন, অলীক অভিমান।


বৃষ্টি আসতে পারে। যদি তুমি ভ্রু-দুটির মাঝখানে

গড়ে তোলো প্রেম উপত্যকা, মেঘের মতো ঝরনা

মাঠে পুঁতে দাও অহংকার কিম্বা বারুদের হাসি ,

তবে আমি গামছার লোটায় বেঁধে নেব গৃহ , সুখ-শান্তি ও পৃথিবী ...



বহ্নিশিখা 

বানীব্রত 


বারুদের স্তুপে বহ্নিশিখা  হও

দাবানল ছড়িয়ে দাও দিকেদিকে

পুড়িয়ে দাও মিথ্যের মুখোশ... 


জ্বলে উঠুক সত্যের বাতি

কালের অন্ধকার সরিয়ে


মুখ ঢাকুক লজ্জারা

পোরা বারুদের ছাইয়ে

ধর্ষিত হোক অহঙ্কার 

তবুও  যদি সত্য ও শান্তি ফেরে

লেলিহান শিখার হাত ধরে

                                                                 ==========================================================================

রূপান্তর বই 

কেতকীপ্রসাদ রায় 


বইয়ের পাতা খুলতেই অক্ষর বিন্যাস উবে যায় 

চোখ ধরেই নেয় এখন বইগুলো এমন 

পথে-ঘাটে অক্ষর এলোমেলো ঘুরে বেড়ায়।


যাদের ড্রয়িংরুমে আজও সাজান আছে বই 

বছরে দু’একদিন ঝাড় পোঁছ হয় 

নতুন বইয়ের দাপটে পুরাতনের মাটিতে গড়ায়। 


যাদের নেশা নিরীহ প্রাণীর মতো বইমেলায় যায় 

উত্কৃষ্ট শস্যের প্রয়োজনে বীজ সংগ্রহ করে 

চাষীর দুর্দশার কথা ভেবে ঝড়ের গতিতে বৃষ্টি নামে।


সাম্রাজ্য বিস্তারে নেট দুনিয়ায় অক্ষরগুলো আগুন ঝরায় 

তথ্য ভুলেও সে আগুন ঝরায় 

চারিদিকে সত্যকে গিলে খাওয়ার প্রলয় হুঙ্কার 

কোনো অর্থেই মেলে না ই-কার, আ-কার 

অথচ নেচে নেচে ছুটে চলে ভাঙা অক্ষর-শরীর

তবুও দ্যাখো, বিদ্যানরা আজ কেমন নিশ্চুপ, বধির ।

                    

==========================

অশেষ নির্মাণ 

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি 

 

অসীম , অপার ভালোলাগা নিয়ে ছেয়ে থাকো সর্বক্ষণ, 

তোমার ভালোবাসা আমার বুকের অতল গভীরে 

এক অদ্ভুত লীলাকার্য চালায় - তুমি প্রতিনিয়ত আমার 

মধ্যে নির্মাণ হতে থাকো।

 

তুমি আমার কাছে এতটাই সুন্দর আমার কোনো নির্মাণে 

তুমি আর শেষ হও না, যেখানে শেষ করি পরক্ষণেই 

সেখান থেকে আবার শুরু করতে হয় , আপন খেয়ালে 

তোমাকে আমি নির্মাণ করেই চলি। বিনি সুতোর বাঁধন-

অথচ কি অসম্ভব শক্তি সে বাঁধনের।

 

মনের মধ্যে কখনো আত্মতুষ্টি আসে তোমাকে যেভাবে 

গড়তে চেয়েছি সেভাবেই বুঝি গড়ে ফেলেছি, একটু 

পরেই সেই মনই বাদ সাধে-কই কোথায় গড়লাম তোমাকে? 

তোমার অনুপম সৌন্দর্য, অনবদ্য রূপলালিমাকে ভাষায় 

নির্মাণ করি এ তো আমার সাধ্যাতীত, তাই তোমাকে নির্মাণ 

করতেই থাকি এক সুন্দর থেকে আরো কোনো সুন্দরের টানে।



================

অন্তরাল

অর্থিতা মণ্ডল

 

আমি তো একা একা হেঁটে যাই, ছুঁয়ে থাকি গভীর অসুখ

তবুও কোথাও তো ফুল ফোটে, কোথাও তো পেতেছি হাত

যতবার ভাবি, অগোছালো হেঁটে যাব অনন্ত প্রহর-

ততবার অলক্ষ্যে বাজে শাঁখ, এই হৃদয়ে জড়িয়েছে ঈশ্বরীস্বাদ

আঘ্রাণ ছুঁয়ে আগুন হয়েছি আমি।

ইশ্বর ভুলে গেছেন জানি ঈশ্বরীর আলিঙ্গন সুখ,

একা দেবী একা নারী নিশ্চুপ অভিমান-

আরও একবার নাহয় মুছে দাও ক্ষত দাগ, আরও একবার সৃষ্টি স্থিতি লয়,

ঈশ্বরের বুকে মাথা রাখেন ঈশ্বরী আমার

শুভ এক জাদুময় একাত্ম দাম্পত্য যাপন    

=========                 

অভিজ্ঞতা 

অন্তরা দাঁ


কথা হতো মাঝে মধ্যে যেমন সবার হয়

বালিকাবয়েস ছুঁয়ে যায় ইমোজির নকশায় 

একটা গোটা দুপুর মেঘ-ভাঙা আলো

ফেরারি হৃদয় একটু কি থমকালো? 


মুঠোফোনের পর্দা জুড়ে প্রসন্ন সুহাস 


তুমি জানোনা , তোমায় নয় নিজেকে ভয় পেয়ে সরিয়ে নিয়েছি হাত 


যদি ঘটে যায় এক মোহন সর্বনাশ! 


===============

নদী ও নারী

কৃষ্ণ সৎপথী


নদী ও নারী মুখোমুখি হলে

বোঝা যায় না ঠিক ঠিক

নদীর ভিতরে থাকে নারী 

না নারীর ভিতর নদী ।


সেতারের কম্পনে 

যে সুর ভেসে আসে

বোধহয় তা নদী আর নারীর

দহ ও দহনের কথা ।


মনে হয় নদী কখনো নারী তো

নারী কখনো নদী হয়ে যায়।


আমি শুধু কূলে দাঁড়িয়ে

আঁকতে পারি কবিতার মুগ্ধছবি

গড়তে পারি থাক থাক শব্দঘর ।

শুধু মাপতে পারি না

নদী আর নারী র গভীরতা .... ।               

========

ছুঁয়ে থাকৃি ভুলে থাকি 

সুধাংশুরঞ্জন সাহা

  

ছুঁয়ে থাকি  ক্ষতে ভরা মন

ভুলে থাকি  হাতে গড়া বাড়ি 

ছুঁয়ে থাকি  সান্ধ শঙ্খধ্বনি 

ভুলে থাকি  ডাক্তার ওষুধ

ছুঁয়ে থাকি  শূন্য করতল

ভুলে থাকি  বষিাদ বহোলা 

ছুঁয়ে থাকি  লতা পাতা ঘাস 

ভুলে থাকি  নষ্ট এঙ্মজীবন

ছুঁয়ে থাকি  মাঙ্মর হাসমিুখ 

ভুলে থাকি  বাবার দাপট 

ছুঁয়ে থাকি  নদী আর জল

ভুলে থাকি  অসুখ বসিুখ 

ছুঁয়ে থাকি  মহানমিগাছ

ভুলে থাকি  র্ব্যথ প্রমে 

ছুঁয়ে থাকি  কবতিার ঋণ 

ভুলে থাকি  বপিন্ন জীবন 

============

অলিক সুখ

অদিতি সেনগুপ্ত


ছোটবেলায় পড়ার বইয়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়তাম শুকতারা, চাঁদমামা, আনন্দমেলা।


ক্লাস বাড়ল বইয়ের আড়াল দখল করল 

দেশ, আনন্দলোক, উনিশ-কুড়ি।


একসময় পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডি পেরিয়ে

সংসারের পাঁচালি পড়তে শিখলাম...

আজ আর গল্পের বই পড়তে আড়াল লাগে না!

যাপনের পথে প্রতিদিন তৈরি হয় গল্প!

মানুষের প্রতিবিম্ব বদলে বদলে যায়,

আর অলিক সুখ খুঁজে ফিরি প্রতিদিন।


--------------------------------------------------------------------------


এখন নকশিকাঁথা   

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়


নকশিকাঁথার মতো মাঠ এখনও পড়ে

তাতে নেই কাঁথাবোনার ইতিকথা আর নেই

হাসি কান্না অনুভবের গল্পগাছা কিছু বা

রক্তঝরার স্মৃতি।


এখন কাঁথাস্টিচ শাড়ি বা পোশাক খুব চালু

তাতে বেশ উসকানিসুখ আর আভিজাত্য সুচ।

নেই কোনো মরমছোঁয়া কথা বা কাহিনি......

পথ চেয়ে বসে থাকা যন্ত্রণায় গেঁথে তোলা সুখ

অভাবের আগুনে পুড়ে সোনা হওয়া অথবা

মরণকে ছিছি বলে অমরত্ব লাভ

কিছু নেই

শুধু কিছু নীরস সুতো আর নকল আলো।

                           ---------------------------------------------------                                

পরমিাপ

দুরন্ত বজিলী


আহ্বানরে ভতের কতটা অনাহূত আহ্বান লুকযি়ে

আছে সটো যদি অনুভবে আসে তাহলে সখোনে

যাবার ভাবনা তরল জলে পরণিত হয়।

মঘে যমেন ধরে রাখতে পারে না ভারৃতাই বৃষ্টি হয়।


ভজো মাটৃি পথ পচ্ছিলিৃ  গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি  

যতেে মানা কর।ে


কন্তিু বদেনার তীব্রতা মাপার জন্য মন যতেে চায়।    

আসলে ঐ পোড়ারমুখী খোঁচা দযে় ঙ্ম চলো না গো।


রাস্তায় নামতে আকাশ পরষ্কিার। ছাতার দরকার

নইে। একলা দুঃখ চবিযি়ে খতেে পারব।


==========================

ব্লেডের উপর হেঁটে যাওয়া  

উত্তম বেহারা 


আাজ কোথাও কোন উৎসব নেই 

তবু বাঁশি তুলে নিয়েছি, 

          বাতাসে আমার 

বে-সুরো ফুসফুসের উল্লাস। 

তুমি এখান থেকেই শুরু করো

          বুঝতে শেখ --

সুখ 

স্পর্শ 

যন্ত্রণা 

ব্ল্যাকহোল

ঈশ্বরকনা 

                    আর

মাথা উঁচু করে ব্লেডের উপর হেঁটে যাওয়া।





 

কোন মন্তব্য নেই

ok

4x6 থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.