পূর্ব মেদিনীপুরের আঞ্চলিক শব্দ : ড. নীলোৎপল জানা
|
পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকার
কিছু আঞ্চলিক শব্দ বিলুপ্তির পথে
ড. নীলোৎপল জানা
(অধ্যাপক,মহিষাদল গার্লস কলেজ)
ভাষা হল ভাব প্রকাশের বাহন। আরণ্যক গুহাবাসী
মানুষ বহু চেষ্টায় ইসারা ছেড়ে শব্দ করতে শিখেছিল। শুধু শব্দ উচ্চারণ নয়,শব্দগুলো অর্থবহ
হয়ে উঠেছিল। শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে কোনো কিছুকে
নির্দেশ করা যায়।এই ভাবে পৃথিবীময় ভাষার ননান আঞ্চলিক ছাঁদ লক্ষ্য করা যায়। ভাষা গবেষকরা
মনে করেন বিশেষ কিছু ভাষা থেকে বহু ভাষার জন্ম হয়েছে। আমরা জানি সংস্কৃত ভাষা বহু ভাষার
জন্ম দিয়েছে।বিশেষ করে বাংলা ভাষার জননী বলতে দ্বিধা নেই।এই বাংলা ভাষার নানান আঞ্চলিক
রূপ লক্ষ্য করা যায়।এর কারণ হিসাবে ধরা যায় বাংলাভাষা অধ্যুসিত এলাকার পার্শবর্তী অন্য
ভাষার রাজ্য ও দেশের অবস্থান।
আমার আলোচনার ক্ষেত্র পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকার আঞ্চলিক শব্দের অবলুপ্তি।ভারতবর্ষের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, পূর্ব মেদিনীপুরের দক্ষিণ- পশ্চিম অংশে ওড়িশা রাজ্যের সীমারেখা,পাশেই হিন্দী ভাষা অধ্যুসিত রাজ্য ঝাড়খণ্ড,বিহার। ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকার বাংলা ভাষার সঙ্গে ওড়িয়া , হিন্দী ও পর্তুগিজ ভাষার সহজ মিশ্রণে এক নতুন ধরনের আঞ্চলিক ভাষা ও শব্দের সৃষ্টি হয়েছে যা পূর্ব মেদিনীপুরের অন্য অঞ্চলের ভাষা থেকে আলাদা।যেমন ওড়িয়া ও পর্তুগিজ ভাষা প্রভাবিত অঞ্চলের মানুষ ইঁদুরকে বলে ‘মুশা’ প্রদীপকে বলে ‘চেরাক’ইত্যাদি।
হাজার
হাজার বছর ধরে চলছে ভাষার সংমিশ্রণ ও বর্জন। এছাড়া বহু জনগোষ্ঠীর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে
এইসব এলাকায় বাস করছে,যেমন-মাঝি,সাঁওতাল,শবর প্রমুখ।এদের মুখের ভাষা এলাকায় প্রচলিত
হয়েছে। এইভাবে অসংখ্য শব্দ এইসব এলাকার মানষের
মধ্যে প্রচলিত হয়েছে,যেমন ‘হিটমা’(হিটিম=কচ্ছপ) বা পারসী শব্দ ‘কুঁই’হয়েছে ‘কইনাড়ী’(শালুক)।
আবার ওড়িশার মানুষের সঙ্গে বৈবাহিক কারণ বা যাতায়াতের কারণে বহুল ওড়িয়া শব্দের আমদানি
ঘটেছে,যেমন-আজা,মাউগ,আই ইত্যাদি।এইসব এলাকার জঙ্গল সাফ করার জন্য বিহারী ও হিন্দুস্থানী
জনমজুর আনা হয়েছিল ,ফলে তাদের লোকভাষা এলাকয়া ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধরা হয়,যেমন-পানি,সামসা
ইত্যাদি।এইস আগন্তুক আঞ্চলিক শব্দ এ অঞ্চলে এসে আরো পরিবর্তীত হয়ে নতুন এক আঞ্চলিক
ভাষার সৃষ্টি করেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকা বিশেষ করে দীঘা, কাঁথি,জুনপুট, শঙ্করপুর,দরিয়াপুর,খেজুরী,নন্দীগ্রাম , ইত্যাদি স্থান আজ আর আঞ্চলিকতায় বন্দী নয়।গত কুড়ি বছরের মধ্যে এইসব এলাকায় ব্যাপক ভাষাগত পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ,এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার ফলে বাংলা তথা ভারতবর্ষের বহু মানুষ এ অঞ্চলে বেড়াতে আসছে এবং তদের মান্য ভাষা এইসব স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এখানকার আঞ্চলিক শব্দের অবলুপ্তি ঘটে চলেছ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়তো এই সব এলাকার আঞ্চলিক শব্দের আর পরিচয় পাওয়া যাবে না।এমনই আমার জানা হারিয়ে যাওয়া কিছু আঞ্চলিক শব্দের পরিচয় তুলে ধরবো; তেবে এদের উৎস আমার পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি।পরবর্তী সময়ে এই শব্দগুলোর উৎস নির্ণয়ের চেষ্টা করবো।
অদা = আধ-ভেজা। যে কোনো আধ-ভেজা জিনিসকে
এই এলাকার লোক অদা বলে।
অঘা
= ভোঁতা,অপদার্থ।
কাটারিটা অঘা ; এটায় গলাবি(গলাও) কাটবেনি।
অছাড়
= আড়াল। তুই অছাড়
হই আছু কেনি? বাইরে আয়।
অঁটা
= কোমর। লোকটা মাছ
অঁটায় মারিকি লি যায়টে।
অড় = আড়াল করা।
অড়গলি
= হাড়িকাঠ ।
অমনি
= এমনি ।
অলাউঠা = গালি হিসাবে ধরা হয় ।
অলা = নামানো। গাছনু অলা।
অসার = পক্ক নয় বা অশক্ত ।
আইলু = আসা হল।
আগলা
= খোলা।
আগড়া = অপুষ্ট ধান
আজড়ানা = পরিবর্তন বা ছাড়া। বাসি কাপড় আজড়ি
পেকা।
আগোড় = বাড়ির প্রচীরের দরজাকে মূলত বোঝায়
যা পলকা বাঁশ ও দড়ি দিয়ে তৈরী।
আদঘাত = আইঢাই। শ্বাস নিতে নাই পারলে আদঘাত
হয়।
অরঘাতিয়া
= মানবিকতা হীন,
নৃশংস।
অলকা
= নামিয়ে ফেলা। কাখনু(কোমর)
কলসী অলকি পেকা।
আওটানা
= গলিয়ে নেওয়া।
আমুয়া = আধপোড়া ইঁট,হাঁড়ি,কলসী ইত্যাদি।
আঁতি = অ-সার অংশ।পাঁয়্যি কাখুরের আঁতি(সাদা
নরম অংশ) দিকি ফুল বড়ি দিয়া হয়।
আঁতেল
= যে নিজেকে বুদ্ধিমান
মনে করে।
আঁউঠ
= হাঁটু ।
আপ = থুতু। শিব চুতুর্দশী বার করনে আপ
ঘিঁটা যায় নি।
আদ্ লা
= অর্ধেক।
আদুড় = খোলা।
আন্না
= লবন হীন।
আবড়া = অবিবাহিত।
আবাজ
= শব্দ।
আমসি = শুকনো আম।
আমুয়া = আধপোড়া ইট।
আলতি = কচু।
আলসা = অলস।
আশলা = আরশোলা।
ইলিবিলি = এলোমেলো।
ইত্রান
= বাজে উৎপাত।
ইড়কি
= গুঁতো। সে ইড়কি
দিয়ে আমাকে সতর্ক করল।
ইল্ চি = পরিহাস করা।
উগাল
বাঁধ = খুব ছোটো
বাঁধ।
উবা বা
উভা = মাটির উপর
থাপড়ে না বসে উঁচু হয়ে বসা।
উথ্-লি
= ঔদ্ধত্ত্ব। টকাটা
(ছেলেটা) মরবে বলিকি উথ্-লায়টে।
উতরি
= ফুলে উঠে গড়িয়ে
পড়া। লয়া ঘরে ঢুকতে হিনে দুধ উতরিতে হয় জানুত…?
উৎকুসলি
= অস্বস্তি বোধ করা।
বেশি খাইনে একটু উৎকুসলি হয়।
উঁকুঁউ/উকুন
= মাথার পোকা।
উচক্কা
= চরিত্রহীন।
উলি কাঁদাড়
= গৃহের বাহিরের
চারপাশ। পাগলাটা সারারাত উলি কাঁদাড়ে শুই আছে।
উদলা
= অনাবৃত গা।
উদভুট্টি
= অত্যদ্ভুত।
উচকা = উঠতি। উচকা যুবতী।
একরুখা
= যা বলবে তাই /কথা
নড়-চড় না হওয়া/এক গুঁয়ে ।
কন্ মোচড়
= বাঁক।
কঁনক
বা কণকা = কাঁসার
সঙ্গে টক জাতীয় পদার্থের বিক্রিয়ার ফলে জাত ধাতুমল।তাই কাঁসায় টক খেতে নেই।
কুচুটি
= হিংসুটে। সব জাইগায়
কুচুটি লোক রয়।
কজাক = সংকীর্ণ।
ককাপ
বা কুকাপ = জ্বরের
তীব্রতা বোঝাতে।
কবাট = কপাট।
কবি = কোন দিন। বইমেলায় কবি যাবু ।
কাখুর=যেকোনো কুমড়ো
কিটানি = যে খুপ বিরক্ত করে (নাছোড় বান্দা)।
টকাটা প্রচুর কিটানি আছে,পারবানি কইটি তবু শুয়েনি।
কাখুর = কুমড়া।
কানপাটা = গলা ও কানের মাঝের স্থান ।
কাঁথ = মাঠির দেওয়াল।
কুঁদান
= অমানবিক মার।পকেটমারটাকে
পাবলিক আচ্ছা কুঁদান দিচে।
কাঁদাল = ঘরের বাহিরে দেওয়ালের পাশে।
কনা = পুরানো ছেঁড়া কাপড়।
কাই = কোথায়।
কাখতল = বগল।
কেতরি
যাওয়া = কাহিল বা
দম পাওয়া। চোরটাকে এমন মারচে পুরা কেতরিচে।
কেড়ি
আঙুল = ছোটো আঙুল।
কেরাস
তেল = কেরোসিন তেল।
কেলান = খাল।
কোপতুল = ঘুঘুপাখি।
খদ্ = গোময় ও খড়পচা।
খুপরানো = ঠোকরানো।
খয়্যা = টালি।
খানকি = গালি। চরিত্র খারাপ।
খালা = নিচু জায়গা।
খরমিশ = ছোটো-বড় সব রকম।
খুপনা
= ঠোক্কর মারা।প্রতিদিন
ভোর চড়ুই পাখি আমার ঘরে জানলায় খুপায় পকা-মাকড় খাওয়ার জিন্যে।
খইফুটা = অনর্গল কথা বলা। বাচ্চা টকা কিন্তু মুয়ে খইফুটেটে।
খিড়কি
দরজা = পেছনের দরজা।
গইরা = গভীর।
গঁজা
= ভালোর মধ্যে একইরকম
দেখতে খারাপটি ঢুকিয়ে দেওয়া।
গঁফা = চুলের খঁপা। চুল সব সময় নাই ছাড়িকি
গঁফা (খোঁপা) করনে তোকে দেখতে ভালো লাগে। /কাপড়ের গোঁজ।গাছে উঠার সময় কাপড়ের
গঁফা (গোঁজ) ভাল করিকি মারতে হয়।
গাঘরা = ধাতুর কলসি।
গেল্ = রসিকতা।
গাঁতি
= লম্বা আকৃতির মাটিতে
গর্ত করার যন্ত্র বা শাবল।
গেঁজানো
= আসল কথার বদলে
আলফাল কথা।
গড়াদানা
= গোয়ালের বাহিরে
গরু বেঁধে রাখার স্থান।
গাভড়া= বাঁশের তৈরী সিঁড়ি ।
গা-ধুয়া
= স্নান করা।
গুনাগার = ক্ষতিপূরণ।
গুড়ি
জাল = ছাকনি জাল
গোঁয়ার = অরসিক ব্যক্তি।
গোয়া = পাছা। কাজ করার সময় গোয়ার
কাপড় ঠিক কর দাদা।
গোহারা
= সর্বোচ্চ পরাজিত
হওয়া।
গ্যাঁড়া = শামুক।
গ্যাঁড়াবাজ
= ঝামেলা বাজ।
গ্যান্-শাবাজি
= ফাজলামি করা
গরাক
= রাক্ষস/যে বেশি
খাই খাই করে।
ঘগা = লুকানো ছিদ্র।
ঘিঁটা =দ্রুত গিলেফেলা । চ্যাকতা খাড়ার
রস প্রচণ্ড তিতা,টপকি ঘিঁটি দে।
ঘেরী = সীমানা ঘেরা জায়গা।
ঘোট
= ঢোক গেলা ।
চকল বকল
= এদিক ওদিক তাকানো।
চড়কা = বাজ।
চকার = চিৎকার।
চপা = খোসা।
চহরম
= ঔদ্ধত্ব। টাকার
চহরম দেখিবুনি,একদিন ফকির হবু।
চা = চওয়া।
চাখা
= পরখ করা(Test)
চান =পাথরের ব্লক/স্নান করা।(চানের উপর
উপর বুসিকি স্নন কর।)
চামচা
= স্তাবক।(Sycophant)
চাইল = ঊরু।
চাবলা = কামড়।
চাড়ুয়া = মাছ ধরার যন্ত্র যা বাঁশের কাঠি
দিয় তৈরি হয়।
চিট = আঠা।
চুয়াড় = মিথ্যুক/ঢ্যামন।
চুথিয়া
= কৃপন। চুথিয়ার
বড় বড় কথা।
চুমুড়
মাছ = চিংড়ি মাছ
(ছোটো)।
চেংনা
= বাজে লোক।
চেঁকা
= ছেঁকা। রাঁধতে
যাইকি হাতে চেঁকা লাগলা।
ছটা = খোঁড়া। লোকটা ছটুউচি।
ছর = কামানো। দাঁড়ি ছর করা।
ছনকি=
বেয়াদপ মেয়ে/ব্যাভিচারী
মহিলা।(ওড়িয়া প্রভাব)
ছয়লাপ
= অপচয়।
ছামু = সামনে।
ছেপ=
থুতু
ছিটাল
= পাগলামি।
ছিঁক = হাঁচি।
ছেঁচড়া
= প্রতারক।(
Lunacy)
ছেঁদা
= ছিদ্র। বাঁশটা
ছেঁদা করি দে।
ছিয়া
= ছেদা করা বা ভাগ
করা। গাছটাকে ছিয়া কর।
ছেনিয়া = ঝাড়ু,খেজুর পাতা দিয়ে তৈরি।
ছোকরা
= ছেলে।
ছুকরি = নব যুবতী(Young Girl)
ছুত্তা = গালাগাল।
জাঁকি
ধর = চেপে ধর।
জাউ = নরম ভাত(Gruel)
জাহান = প্রাণ। পেটে ভাত পড়তে জাহান
আইলা।
জাড়
= শীত। তোর কী জাড়
চাপচে।
জাড়ি
= জিহ্বার ঘা।
জাঁক
= টাইট। জাইগা কম
জাঁকি জাঁকি বুস।
জাবড়া/জ্যাবড়া = অসুন্দর। (Ugly)
জুয়াল্ = লাঙলের সরঞ্জাম।
ঝাঁকাড়
= ধমক দেওয়া।
ঝাপাঝুনা = সাঁতার কাটা।
ঝিঁট
= হোঁচট। দেখিকি
যা, নাইলে ঝিঁট লাগলে পায়ের বারোটা বাজি যাবে।
ঝটকা = ঝড় ওঠা।
ঝাড়া
ফেরা = মলত্যাগ করা
ঝুনা = পাকা। লাড়িয়াটা ঝুনা কী।
ঝুল
= কালো ফাঁদ।
ঝামলানা = ঝিমিয়ে যাওয়া। জল নাই পাইকি গাছ
ঝামলি যায়টে।
টকা = কম-বয়সী ছেলে।
টপকি
= দ্রুত। আমাকে দেখিকি
টপকি মুয়ে(মুখে) ভরি দিলা।
টবা = ডোবা।
টিউকল = নলকূপ।
টেক
= জেদ। সব কথায় টেক
ধরা ভালো না।
ট্যাঁক
= কোমর।
টাঙানা = ঝোলানো। ছবিটা টাঙি দে কাঁথে(দেওয়ালে)।
টেমক
= অহংকার। লয়া বউর
টেমক দেখ।
টেরি = মাথায় চুলের সিঁথি।
টেংরি = পা। টেংরি কাটি লিবা,বেশি
বাহাদুরি দেখিবুনি।
টুসকি
= হালকা টোকা দেওয়া।
টুঁই = ঘরের চালের শীর্ষ দেশ।
টেঁঠি
= বিরক্ত সহকারে
চিৎকার করে কথা বলা।
ঠেকা
= ছোটো ঝুড়ি বা পাছিয়া।
ঠাট
= ঢং করা।
ঠাপ = মার/প্রহার
ঠেঁট
কালা = শুনে না শোনার
ভান ।
ঠেকুয়া
= কোনো বাঁশের খুঁটি
দিয়ে ঠেক দেওয়া।
ঠ্যাং = পা। (Leg)
ডিঁয়া= বড় কালো পিঁপড়া
ডপকা
/ডাগর = যৌবন প্রাপ্ত।
ডাঁট
= অতিরিক্ত কোনোকিছু
দেখানো। কটা গয়না পরিকি ডাঁট দেখাউটু।
ডোমরা = মাদুলি।
ড্যাঁনা
= পুরো বাহু।
ড্যারা = বাঁকিয়ে রাখা
ঢিপা=
বাস্তু । বসতবাটি।
ঢাপু
= নুড়ি দিয়ে খেলা।গুটিগুলো
নাচিয়ে খেলতে হয়।
ঢিপকান
= শব্দ করে মারা।
ঢ্যালা
= চোখ। এমা চাঁইবুনি
ঢ্যালা উপড়ি লিবা।
ঢ্যাসনা
কাঠি = উনুনে জ্বালানি
দেওয়ার লাঠি।
ঢ্যয়্যা
= ঝলঝলে/খোলামেলা।
তল্ মুয়া = যে মুখ সব সময় নীচের দিকে করে রাখে।
তড়ফা = লম্বা
তড়ফা
= লম্ফ-ঝম্প করা।
বেশি তড়ফানি,ঝামেলা হবে।
তপকা = তামাক জাতীয় পদার্থ।
তাড়ি
= পচানো রস। মূলত
খেজুর রস ও পচা পান্তা থেকে তৈরী।
তাতানো = অন্যের বিরুদ্ধে ক্ষেঁপিয়ে তোলা।
বেশি তাতিবুনি খেপি যাবে।
তেঁদড়
= খচড়ামি / ধূর্ত
/শঠ/ শয়তানি।
তেড়িয়া
= মার মুখী।
থাতানি
= মার দেওয়া।
থোপ = থুতু
থোবড়া>থবড়া = মুখ মণ্ডল।
দা =
কাস্তে।
দন্টায়>দঁড়ে =সামন্য সময়
দাউলি = কাটারি
দাঁড়া
= অপেক্ষা করা। দাঁড়া,যাইটি।
দোরো = পাতার রস
দুদু=স্তন।
ধকচান/ধচকান
= তীব্র যন্ত্রণা।
ধবা = ধোপা।
ধোবল>ধোবো = সাদা।
ধারা = চোখ থেকে জল বওয়া।
ধড়াস
= জোরে কিছু পড়ার
শব্দ।
ধাঙড় = বয়স মনে করানো।(গালি পাড়তে ব্যবহৃত
হয়)
ধাতানি = বকাবকি করা।
ধামসা=অতিরিক্ত বড়।
ধাংড়ি
= ধড়িবাজ মহিলা
ধুমসি = মোটা। তার ঘরে সীতা বেস ধুমসি
।
ধাড়ি=বয়স্ক। অতবড় ধাড়ি মাইঝি লজ্জা
নাই খালি গায়ে ঘুরুটু।
ধোকড় = কিছু না। বামুনের টকা মাকড় মারনে ধোকড় হয়।
নাদুস = মোটা।
নেঙা
= স্বাভাবিক নয় বা
কম শক্তিশালী। নেঙা হাত বা পা। (বাম হাত বা পা)
নিখি = উকুনের ডিম।
নিবিচে = নিভে গেছে।
নুনু
= শিশ্ন/অপরিণত পুরষাঙ্গ।
পকটি/পাঘা =গরুর গলার দড়ি যা দিয়ে বেঁধে রাখ
হয়।
পচকা = সহজ ছিঁড়ে যায়।
পতরা
= পাতা।
পতুল
= গরুর দ্বারা খড়কে
এলমেল করা।
পনকি
= বঁটি। মাছ ও সব্জী
কাটার জন্য ব্যবহৃত।
পত্তা = ভর্তি । পত্তা কলসী লিতে পারবুনি
।
পকিয়ি
দে = ফেলে দে।
পাঞ্জানা = লোহার জিনিস ধারালো করা ।
পাউচি = সিঁড়ির ধাপ ।
পাটুক
খঁচা = পাটকাঠি।
পাল যাওয়া = গরুর সঙ্গম।
পুতা = শিলের নোড়া।
পেখিয়া = তাল পাতার আচ্ছাদন যা বর্ষাকালে
ব্যাবহার করা হয়।
পাস্তানা
= গোঁজা। রাতে ঘুমোনোর
সময় মশারী পাস্তাতে হয় ।
পঁদ
=পায়ু।
পাঁউস = ঘুঁটের ছাই।
পুঁজা/পুঞ্জা = আঁটি । শাকের পুঁজা/মূলার পুঁজা।
পেল্ = পুরুষ লিঙ্গ।
পোল = সাঁকো।
পোটিঙ্গা
= ভাব।
পোড়=পাকা। ইঁটের পোড় ভালা নাই হিনে নুনা(লবন)
লাগবে।
ফেঁণা = ছড়া/গোছা। কলার ফেঁণা ।
ফলার>
ফরাল = ফলমূল দান।
ফরা=ফাঁপা।
ফাপ=ব্যথা।
ফ্যারা=সামঞ্জস্যহীন/পার্থক্য।
বদা = পাঁঠা।
বুজলা
= এলোমেলো করে জড়ো
করা।
বতরানা
= ফুলেওঠা। মটর জলে
বতরানা হয়।
বাটচাঁয়া
= অপেক্ষ করা।
বাড়ুয়া
= মোড়ল।
বাড়ুয়া
রথ = ফেরত রথ।
বিষ আঙুল
= তর্জনী
বিঁড়া
= বোঝা বহনের জন্য
মাথর পাগড়ি।
বুজা= বোতলের ছিপি।
বুদা = ঝোপ।
বেই = পুত্রের বা কন্যার শ্বশুর।
বে-টাকুরিয়া
= যে সহবৎ জানেনা
বা মানেনা।
বোড়বা
/ বোড়মা = জ্যাঠামশায়/জ্যাঠাইমা।
ব্যে = বিবাহ।
ব্যান = ধানচারা।
ভাকু
= তাড়ি / মদ।
ভাতার = স্বামী।
ভিকনা = ভিখারি বা মাগনা।
ভিতা = জমির আলের কাছের অংশ।
ভোক্ = ক্ষুধা।
ভ্যাকা
= বোকা।
ভুঁকড়া
= কিল।
ভঁসড় = মোটা । ভঁসর লোকের হাঁটতে
অসুবিধা হয়।
ভুরকুটি
= ভেলকি/চমকানো
মঞ্জরি = ঝিমিয়ে পড়া / আয়তন কম হওয়া। এক
কড়া শাক চুলায় বুসিনে দেখবু মঞ্জরি যাবে।
মোট = মাথায় করে কিছু বওয়া / বোঝা।
মালুম = অনুমান
মুঠুণ
= কনুই থেকে মুষ্টিবদ্ধ
হাত পর্যন্ত দূরত্ব।
মুড়া
= মাথা।
মুহাড়ি
= মুখ ভার করা।ঝিমলিকে
কোনো কথা কইবার রাস্তা নাই; ভালো কিছু কইলেই সবেতে মুহাড়ি করে।
মুগরি=মাছ ধরার যন্ত্র বিশেষ,যা বাঁশের
কঠি দিয়ে তৈরী হয়।
মাউক
= স্ত্রী।
মাড়া
= মাঠ দিয়ে বহুজন
যাওয়ায় যে নতুন পথ তৈরী হয়।
মেড়াখিয়া
= গালি বিশেষ। (ওড়িয়া
প্রভাব)
রসা = তরকারর ঝোল।
রিক্
= ক্রোধ
রগড়ি
= নছোড়বান্দা। বাপিকে
রগড়িকি ধর চাকরি হবে ।
রিষ্টি=খারাপ সময়।
রুয়া = রোপণ করা।
রুলি
= পোলা। লাল প্লাস্টিকের
চুড়ি।
রুই=রোপন করা
লাই = নাভি।
লাতি = নাতি।
লাপিত = নাপিত।
লৌটি
= উল্টি।
লড়কানি
= খারাপ জিনিস।
শটকা
= স্বল্প টানা (
এক শটকা হুকায় টান দিলে হিতা)। শরীরে কোথাও লেগে যাওয়া।
(ধাপতে যাইকি কমরে শটকা লাগলা )।
শোড়ো
= শ্যালিকার স্বামী।
শ্যালাই = দেশলাই।
সন্না
গাছ = সজনে গাছ।
সমরা = পাঁচফোড়ন।
সিঙনি
= সর্দ্দি।
সেঁকন = পিটিয়ে শিক্ষা দেওয়া।
সুতলি
দড়ি = পাটের সরু
দড়ি।
হজা = গরু গোয়াল শোয়ার সময় যে খড় বিছানো
হয়।
হলা = নড়া । দাঁত হলেটে।
হড়া
= কর্দমাক্ত।
হড়কা
= পিচ্ছল।
হাটুয়া=সাধারণ।
হেলগম = নির্বিকার। ভবার সংসারের প্রতি
হেলগম নাই।
হাঁইপাই = ব্যস্ততা।
হাঁড়িশাল = রান্নাঘর।
হিঁসকুটিয়া
= হিংসুটে।
হারকিন = বড় লণ্ঠন।
হিটমা = জেদি।
হুড়কা = কপাট বন্ধ করার কাঠ বা বাঁশ।
হোড় = বেশি কাদা।
এই সংক্ষিপ্ত
আলোচনায় সমস্তকিছু তুলে ধরা যেমন সম্ভব হল না তেমনি বহু শব্দ আরো থেকে গেল যার সম্পর্কে
আমার পরিচিতি নেই বা আরো অনেক আগে অবলু্ত হয়েছে; আবার অনেক শব্দ বহুল ব্যবহারের ফলে
অভিধানে স্থান পেয়েছে। যেভাবে সভ্যতা ও সংস্কৃতি এগিয়ে চলেছে আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে
এইসব এলাকার আঞ্চলিক শব্দ লিখিত প্রমাণ ছাড়া পাওয়া সম্ভব হবে না। কোনো ভাল কাজ কখনোই
সম্পূর্ণ হয় না।তবু আশা করি এই ক্ষুদ্র সংগ্রহ
যদি গবেষকদের কাজে লাগে তবেই এই শ্রম সার্থক হবে।
--------------------------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র
ক্ষেত্রসমীক্ষার
তথ্য।
কোন মন্তব্য নেই
ok