দুইপাতা পত্রিকা ৮২ তম
৮২ তম ।। ২৫ বৈশাখ
সংখ্যা- ১৪৩০
সম্পাদক
: নীলোৎপল জানা
nilotpaljana1978@outlook.com
সম্পাদকীয়
আমি তখন ক্লাস
ফোরে পড়ি। প্রধান শিক্ষক মহাশয় বললেন বাৎসরিক পরীক্ষায় রবীন্দ্রনাথ নিয়ে রচনা লিখতে
হবে। সত্যি বলতে তখনও রচনা কী জানতাম না। বাড়িতে এসে বাবাকে বললাম বিষয়টি। তখন বাবা
একটি চটি বই হাতে দিয়ে বলেছিলেন 'এতে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে রচনা আছে দেখে নিও’। রচনাটি
খুব বড় নয় তবে আমার ক্ষেত্রে ছোটোও নয়। কোনো কিছু না বুঝেই মুখস্থ করেছিলাম গোটা রচনা।
এরপর বড় হয়েছি,আরো কত রচনা পড়েছি তবে সেদিনকার না বুঝে মুখস্থ করা রচনাটি আমাকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে উচ্চ শিক্ষার পথ দেখিয়েছে। বার বার জানতে ইচ্ছা করেছে কবির মধ্যে কী এমন শক্তি ছিল
যা বিশ্ববাসীকে মোহমুগ্ধ করল ? বার বার খুঁজেছি সেই
লুকানো প্রতিভাকে। এখনো যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি রবীন্দ্রনাথই যেন আমার মাথায় হাত রাখেন। আলো জ্বালায় আমার হৃদয়ে। আমি আবার শক্তি নিয়ে নতুন
ভাবে জেগে উঠি। তখনই মনে মনে গেয়ে উঠি -"আকাশ ভরা সূর্য
তারা বিশ্ব ভরা প্রাণ"
যখন আমি একাকিত্ব বোধ
করে আমার পড়ার টেবিলে বসে থাকি তখন সামনে সেলফে রাখা রবীন্দ্ররচনবলীর দিকে তাকিয়ে
ভাবি আমি একা নয় ,আমার সঙ্গে আছে আমার পরমাত্মীয় রবীন্দ্রনাথ। তখন আমার মন আবার
ভালো হয়ে যায়।
এই সময় আবারও খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন রবীন্দ্রনাথ। যিনি আমাদের নতুন ভাবনায়
জাগিয়ে তুলতে পারেন । বিশ্বময় হানাহানি, যুদ্ধময়
পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রবীন্দ্রনাথ পাঠই একান্ত কর্তব্য। কবি হলেন সেই
বৃক্ষ যার আশ্রয়ে বিশ্ববাসী নিরাপদে থাকতে পারে। তাই রবীন্দ্রনাথ চির দিনের ও শাশ্বত কালের। কবিকে আমার
প্রণাম।
আমাদের পরম আত্মীয়
অরবিন্দ সরকার
আমাদের পরম সুহৃদ রবীন্দ্রনাথ বাঙালি জীবনে কতখানি, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিশ্ব সারাস্বত মন্ডল তাঁর উপলব্ধি সর্বকালে গ্রহণ যোগ্যতা দাবি করে।তিনি সাধারণ্যে নিরুপম। মাটির কাছাকাছি। অহংবোধ তাঁকে কখনও কার কাছ থেকে দূরে রাখেনি। যার জীবন সোঁদা মাটির গন্ধে মাতোয়ারা, সেই জীবনের সন্ধ্যানে তিনি আজীবন ব্যাপৃত ছিলেন। কলকাতার মত মহানগর থেকে দূরে বীরভূমের রাঙামাটির পথে পথে খোয়াই -এর ধারে ধারে পল্লিজীবনের ধুলোর রেণু তাঁর জীবনপটে গেঁথে রয়েছে। সাঁওতাল জীবন সম্পর্কে তাঁর পরম আগ্রহ। যারা কাঠের কাজ করে,যারা মাটির শিল্প কর্ম করে, যারা প্রতিদিনের কর্ম শেষ করে গানের দোলায় সন্ধ্যাকালে কীর্তনে মজে থাকে--- সেই জীবনের সন্ধানে তিনি ওৎ পেতে থাকতেন। তাঁর সংযোগ ছিল বহুধা বিস্তৃত। কিন্তু কখনও তিনি কোন প্রলোভনে পড়েননি । নিজস্ব সত্তা হারাননি।
মৌনমুখর ঢেউয়ে তাঁর
পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অতুলান। এককথায়,
তিনি জন-মন-সংযোগের কাজটি আজীবন খুবই সুন্দর ভাবে রপ্ত করেছিলেন।
কিন্তু কখনও বেসুরে পা দেননি । তাঁর মধ্যে ছিল বিনয় সমন্বিত
দৃঢ়তা। আর সর্বোপরি, তিনি ছিলেন সুরের কাঙাল। তাঁর
গানে মানবজীবনের সমস্ত অনুভূতি চাওয়া পাওয়া দুঃখ বেদনা,
প্রতিবাদ, অভিমান,
আনন্দ , জয়-পরাজয়ের
মধ্যে নতুন ভোরের
ইঙ্গিতময়তা------ পূর্ণ ভাবের প্রকাশ
ঘটেছে। সুদূর স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড,
পদ্মাপারের শিলাইদহ ,গ্রামবাংলার
আনাচে-কানাচে, বাউলের সুরে ভাটিয়ালির গানে মেঠো বাঁশির
সুরে তিনি রোমাঞ্চিত হতেন। বিশ্ব বীক্ষা তাঁর
করতলগত। কিন্তু সেখানে অহংকে দূরে রেখেই তিনি স্বক্ষেত্রে
সম্রাট। তিনি ওই
আসনতলে থাকতে চেয়েছেন।কেন আমাকে মান দিয়ে দূরে সরিয়ে
রাখো-----এইভাবে ' ছোট
আমি' থেকে 'বড়
আমি'র দিকে তাঁর অভিযাত্রা সহজাত। বাল্যে বাবার সঙ্গেই তাঁর বন্ধুত্ব। যা-কিছু কথাবার্তা। তারপর
নতুন বৌঠান কাদম্বরী
দেবী। বিশাল পরিবারে মাকে সবসময় কাছে পেতেন না। চাকরবাকরদের কাছে মানুষ। কিন্তু
সকলকে তিনি গভীর ভাবে সম্মান করতেন। তিনি অন্যের
মত-কে মর্যাদা দিতেন। সুরসিক রবীন্দ্রনাথ মহৎ জীবন
রসিক-------এর সঙ্গে তাঁর ছিল অন্তর পথে নিত্য
বিচরণ। ব্যক্তি জীবনে যখন
ঘোরের
মধ্যে থাকি , সংকোচে দ্বিধাবিভক্ত থাকি, তখনই রবীন্দ্রনাথ
প্রিয়জনের মত অনাবিল হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেন। তাঁর গানে, গল্পে,কবিতায়,
নাটকে, ছিন্নপত্রে মজে উঠি নতুন বৈভবে
আকুল
আগ্রহে।
আমার রবীন্দ্রনাথ, আমারই
আমি যখন রবীন্দ্ররচনা পাঠ
করি, তখন আমার ভিতরে এক প্রাতিস্বিক জগৎ রচিত হয় । সেই
জগৎ যেমন অভূতপূর্ব, অনাবিল তেমনই আনন্দময় । আমার মনে
হয়, তার প্রতিটি রচনার মধ্যে বিশেষ করে গানের মধ্যে আমার
সম্পূর্ণ সত্তা যেন প্রচ্ছন্ন অবস্থায় আছে । পড়তে গিয়ে কেবল আমার আমিকেই অনুভব
করি । সেই সঙ্গে এই ধারণা পোষণ করি যে আমি যেভাবে অনুভব
করছি সেভাবে আর কেউ হয়তো অনুভব করতে পারছে না । তখনই যেন
রবীন্দ্রনাথ আমার হয়ে যায়, একান্ত আমারই । তিনি আমাকে
এমনই আচ্ছন্ন করে আছেন যে আমাকে একা পেলেই চেতন-অবচেতনে তার গান কবিতা ভেসে ওঠে ।
আমি মনে করি আমার একান্ত আপনজন ও একান্ত আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ । যত দিন যায়,
তত বেশি আমি যেন তাঁর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ি । কখনও তাঁর কবিতা
পড়ে, কখনও তার গান শুনে বা গেয়ে, কখনও আবার গল্প-নাটক-প্রবন্ধ পড়ে প্রগাঢ় এক প্রশান্তি লাভ করি,
যা অতিব্যক্তিগত,
কাউকে বোঝাতে পারি না, বলা ভালো অনির্বচনীয় । বারংবার মনে হয় তিনি
যে গানগুলো আমার জন্য লিখেছেন। আমার সঙ্গে থাকা মোবাইলে চারশোর বেশি রবীন্দ্রসংগীত আছে। একটু
অবসর পেলেই অর্থাৎ সাইকেলে নির্জন পথে কিংবা রাত্রির অন্ধকার বারান্দায় তিনিই
বাজিয়ে দেন তার কথা ও সুর । যেন সেগুলো রবীন্দ্রসংগীত
নয়, আমারই জীবনসংগীত। তা বলে আমি কিন্তু একটুও
রবীন্দ্রভক্ত নই । কারণ ভক্তির প্রাবল্যে আমি তাঁকে শালগ্রাম শিলায় পরিণত করতে
চাই না । তাঁর নামসংকীর্তন করে নয়, তার রচনা পাঠ করে
নিজের জীবনকে যথাসাধ্য সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে চাই । সেজন্য তাকে শ্রদ্ধা করি। বলতে
দ্বিধা নেই, তার কাছে আমার ঋণ অপরিমেয় ও অপরিশোধ্য । আমি তাঁকে যেভাবে অনুভব করি, হয়তো অন্যের সঙ্গে মেলে না । না মিলুক, তাতে কোনো আপশোস নেই । তাছাড়া, বাঙালির রূপবোধকে জাগ্রত ও পরিশীলিত করার জন্য
একজন। বাঙলি হিসেবে তাঁর কাছে আমার ঋণ অশেষ । আজ যে ভাষায় ভাবি, কথা বলি এবং লিখি— , সবই তো তারই দান । জীবনের কোনো মুহূর্তেই আমি তাকে
অস্বীকার করতে পারি না । বস্তুত, রবীন্দ্রনাথকে আমি আমার
মতো করে বোঝার চেষ্টা করি,
বুঝি। গবেষক বা অধ্যাপকীয় তত্ত্ব দিয়ে কখনও জানতে চাইনি। হৃদয়
দিয়ে অনুভব করি। তাতে যা আনন্দ পাই, সেই-ই আমার
ব্যক্তিগত সম্পদ, বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী। আমি যদি একবেলা
খেতে না পাই, আমার যদি দামি পোশাক কিংবা
শীততাপনিয়ন্ত্রিত সিসিটিভি লাগানো বাড়ি না থাকে,
তাতে বিন্দুমাত্র দুঃখ বা আপশোস নেই ।
আমার আছে রবীন্দ্রনাথ, সেই আমার অহংকার । তিনি আমাকে
যেভাবে যতটা ধরা দিয়েছেন, সেই প্রাপ্তি আমার কাছে কম নয়,
আমি এর বেশি চাই না । আমি জানি, যত দিন
যাবে, ততই আমার যাত্রাপথ তার দিকে আরও বেশি আকর্ষিত হব ।
তাঁর শরণ ছাড়া আমার জীবনে কোনো আনন্দ নেই । তিনি
রবীন্দ্রনাথ, তিনি আমার, আমারই ।
জড় নয় প্রাণের ঠাকুর
'জীর্ন পুরাতন যাক ভেসে যাক,
বাঁধ ভেঙে দাও বাঁধ ভেঙে দাও ভাঙো'।
অথচ কি আশ্চর্য ভাবে তাঁকেই কিছু জন
নিজেদের নিয়মে বন্দী করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সমাজে তাঁকে নিয়ে ভুল বার্তা দিয়ে
চলেছেন।
নিঃস্ব
বাঙালির সবচেয়ে বেশি ব্যবসা তাঁকে নিয়েই। বছরের দুটি দিন সেই ব্যবসা আরও ফুলে
ফেঁপে ওঠে। পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ।
তাঁকে
নিয়ে উৎসবের ভীড়ে হারিয়ে যায় তাঁর সৃষ্টির মূল্যায়ণ।
অথচ কি বিপুল তাঁর সৃষ্টি। কি
অসাধারণ সেই সব দর্শন। তাঁর সৃষ্টির গভীরে প্রবেশ করলে মন অনায়াসে হয়ে ওঠে শান্ত। সমাহিত। তিনি প্রতিটি
ক্ষণে আমাদের সাথে জড়িয়ে থাকেন। সুখে দুখে আজও তাঁর গীতবিতানের অক্ষরমালা আমাদের
সুরভিত করে। ভাগ্যিস কপিরাইট উঠে গেছে। তাই তাঁর সৃষ্টি নিয়ে এই প্রজন্ম অনেক
ভালো ভালো কাজ করতে পারছে। দাঁত চিপে ন্যাকা ন্যাকা
ভঙ্গীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ায় গানের কথাগুলিই সাধারনের বোধগম্য
হত না। কেবল কিছু তথাকথিত এলিট মানুষের ড্রয়িংরুমের বিষয় ছিলেন তিনি।
এখন সে থেকে মুক্তি। উদাত্ত ভাবে
প্রতিটি কথার অর্থ বজায় রেখে গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত এখন সাধারনের
হয়েছে। তিনি দেবতার উচ্চাসন থেকে এভাবেই নেমে এসেছেন মাটিতে। মিশে গেছেন রক্তে,
মজ্জায়। তাই কনভেন্টে পড়া মেয়ে জিনস পরে হঠাৎ গেয়ে ওঠে, '
আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা' । গীটার হাতে
কলেজ ফেস্টে ছেলেটি চোখ বুজে ডুবে যায় ' কি করিলে বল পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে
আঁখিতে' গানে।
সেই সুর ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
চরাচরে নেমে আসে অদ্ভুত জ্যোৎস্না।
ঠাকুরের আসন থেকে নেমে এসে তিনি হয়ে
ওঠেন বাঙালির নিভৃত প্রাণের দেবতা। তাদের ভালোবাসার ধন।
আমার নিভৃত প্রাণের দেবতা
পুষ্প সাঁতরা
সূর্যের
নিত্য অভ্যাসে, অমল হাসির
আভাসে জেগে থাকে আমার নিভৃত
প্রাণের দেবতা ; নেই অথচ সব
খানেতেই তোমার উপস্থিতি টের পাই। এক ক্ষুদ্র মানবীর জীবনেকিআর চাওয়ার থাকতে পারে। মস্তিষ্কের
হেঁসেলের সব বিশ্বাসে, কোলাহল থেমে
যায়, দহনে মন পুড়ে, শরীর পুড়লে তোমাকে পাই--'বরিষ ধারা মাঝে শান্তির বারি '। অন্তর্গত রক্তের ভিতর, অনুতাপের দহনে শুদ্ধ হই-- তুমি নিভৃতে আছো বলেই--- জীবনের চোরা বালিতে
বিষন্ন রক্ত সংলাপে---'নিত্য নব
সত্য তব শুভ্র আলোকময় '- হৃদয়ের
চুপকথা ঘরে, ভাবনার নতূন
পালক গুঁজে নিই। 'নির্জন রাতে
নিঃশব্দ চরণ পাতে 'তোমায় দেখতে
পাই। চোখের জলপাথরে কি তুমুল বৃষ্টি নামে, নীল দিগন্তে তখন ফুল ফোটে। আমার হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারনের মাঝে গানের
কলি বাজে---'নমো নমো নমো করুনাঘন নম হে '- হৃদয় পেটিকার গোপন কক্ষে কলংকৃত হওয়ার ও ভয় নেই/
দেবতা জেনে দূরে রই
দাঁড়ায়ে। বুকের ছবিতে উপলব্ধির মাধুর্য ফুল! সেই ফুল বলে ধন্য আমি মাটির পরে। জীবন যাত্রায় আনন্দের
আন্দোলনে অফুরান তুলির বিস্তার--- আত্মানুভূতির সূক্ষতায় টানটান অন্তরের তার। তোমার বানী আমার বসন
ভূষণ। এ যেন আমার ভৈরব দর্শন! পলাতকা পূরবীর মত তুমি অস্তিত্বের অনুভব, তোমার সান্নিধ্যেই আমার পরিত্রাণ,বিশ্বস্ত পোতাশ্রয়। হাজার দুয়ারী আশ্রয়ে আত্মগোপন করি।
এখন একলা হতে ভয় নাই--'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে-'এ আমার অভয় মন্ত্র তাই অকূলে জীবন তরী ভাসাই। সব্যসাচী হাওয়ায় মাথার উপর
উন্মুক্ত আকাশ, পায়ে ঘাস মাটি--- তব দয়া দিয়ে হবে গো
মোর জীবন ধুতে '----- হে আমার
নিভৃত
প্রাণের
দেবতা '
যার নাম রোদ
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
রূপ না দিলে
যদি বিধি হে ' -
এ আক্ষেপ নিজের কাছেই। ভালোবাসা চাই –
ভালোবাসা চাই – ভালোবাসতে চাই – ভালোবাসতে চাই, আজ চিৎকার করে বলতে হচ্ছে। যেমন
করে বিন্দু বিন্দু জলকনা নদী হতে চায়,
স্রোত হতে চায়, সমুদ্র হতে চায়। যেমন করে গাছ সবুজ হতে চায়,
ফুল ফোটাতে চায়, ফল ফলাতে চায় । এই বোধটুকু জন্মায় তখনই – যখন গোপনে থাকতে থাকতে
হাঁপিয়ে ওঠে
সত্তা।
বিপন্নতা না এলে
ঠিক সেখানে যেতে চাই না, যেখানে সুন্দর।
আশঙ্কা না থাকলে তার ধারও মাড়াতে চাই না , যেখানে সত্য। কেননা আমাদের
চারপাশে এত রোশনাই, এত সাইনবোর্ড,
এত কাট আউট তার নিচে আমরা সব আলেয়া-পথিক। কিন্তু আামাদের
' আছে আছে স্থান। / একা তুমি, তোমার
শুধু এক আঁটি ধান।
/ না হয় হবে ঘেঁষাঘেঁষি / এমন কিছু নয় সে বেশি - / না হয় কিছু ভারী হবে আমার তরীখান –/ তাই বলে
কি ফিরবে?
আছে , আছে
স্থান। '
অন্তিমে এসে মানুষ শুরুর দিকে ফিরে
যেতে চাইবে , এটাই স্বাভাবিক। যেমন এতদিন কেউ পৃথিবীর কথা ভাবতে চায় নি – আগুন জ্বালিয়েছে তার শরীরে
– পৃথিবী জ্বলতে জ্বলতে তার নিজের জ্বালার
কথা বলেছে। কেউ অনুভব করতে চায় নি সেই যন্ত্রণা।
দুষিত হতে হতে সে বলেছ শ্বাসকষ্টের কথা। কেউ শুনতে চায় নি।
ধোঁয়ায় ভরা পৃথিবীতে ফুরিয়ে যাচ্ছে শ্বাসবায়ু। অবজ্ঞা করছে চঞ্চলতা।
তার জন্য মানুষের কোন আবেগই ছিল না।
কিন্তু
হে অন্তর –’ নীরব বাঁশরি খানি বেজেছে আবার – '
ফিরে
আসে আবেগ , ফিরে আসে তার একেবারে সুচনা কালের ছবি।
যাত্রাপথ, স্কুল পালানো ,
প্রাণের ধ্বনি। সেই মধুর স্বর , সেই মাধবীলতা
,
সেই ভেজা মাটির গন্ধ। যা
অবচেতন অন্তরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হয়ে কুলুঙ্গিতে গচ্ছিত ছিল।
আজ তীব্র হয়ে ওঠেছে তার স্মৃতি-অতীত আকুতি ; এবং খুবই স্পষ্টভাবে। সহজভাবে বলতে গেলে, সময় দ্রুত পাল্টে
যাচ্ছে , রূপ পাল্টাচ্ছে প্রকৃতির , মানুষের মূল্যবোধে
পরিবর্তন আসছে ,
প্রাকৃতিক তৎপরতার কারনে আপাত অর্থে চলছে অন্তর শোধনবোধ , ফিরে আসছে ঐতিহ্য , সাংস্কৃতিক প্রত্যয় , বিলীন হচ্ছে ঝলমলে
নিজস্ব প্রকরণ , স্বপ্ন গান কথা গল্প।
উল্টে যাচ্ছি নিজের পাতাগুলো। কত কিছু
লেখা আছে প্রতিটি পঙক্তিতে। পড়ছি 'ছোট খোকা বলে অ আ '। পড়ছি 'কাল ছিল ডাল খালি / আজ ফুলে যায় ভরে।
/ বল দেখি তুই মালি হয় সে কেমন করে। ' জানি
না ,
আজও বুঝতে পারিনি কেমন করে ফুল ফোটে। এটি যুক্তির ধার ধারে না।
এটি বলতে দেয় না ফুল ফোটার শর্ত কি ছিল। শুধু অন্তরে জমা ফুল গণ্ডি পেরোতে চায় , বন্দিদশা
থেকে চায় মুক্তি।
মুক্তি বললাম এই কারণে যে, সংগীতের মতন
স্বাধীন হবার প্রসঙ্গটি এসে যাচ্ছে বারবার। থেকে থেকে বেজে ওঠে অন্তর। কেঁপে ওঠে
বাদ্য মর্মর।
কৃতজ্ঞ সুন্দরের কাছে সে সুর ' দে দোল
দোল , দে দোল দোল / এ মহাসাগরে তুফান তোল / বধুরে আমার
পেয়েছি আবার , ভরেছে কোল
- '/
বসবাসের এসব মর্মযাতনা ও বেদনা এখন
মিস্টিক হলেও সত্য। জীবনের কালপর্বগুলোর অনিবার্যতা অন্তর্সত্যকে ক্লাসিক্যাল
জায়গাটি চিনিয়ে দেয়
- উন্মোচন করে প্রাণের সৌন্দর্য। আমি গুনগুন করে গাইতে থাকি
'
এ কি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে - ' এই
পাওয়ার মাঝেই আমার বর্তমান। যার নাম রোদ।
নিভৃত প্রাণের দেবতা
অশোক অধিকারী
রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে লিখেছিলেন,“না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন
তবে।”কপিরাইট উঠে যাওয়ার পর থেকে তাঁর গান বা কবিতা নিয়ে একটি অনাবশ্যক পরীক্ষা
নিরীক্ষা ক্ষতিই করেছে! ক্কিন্তু যখন তাঁর ভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র
একটি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন আমাদের ফিরে তাকাতেই হয়।আমরা বিস্মৃত হইনি
রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রয়াত কল্যান সিং তাঁর দীক্ষান্ত
ভাষণে জাতীয়সঙ্গীত থেকে ‘অধিনায়ক’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘মঙ্গল’ শব্দটি ব্যবহারের কথা
বলেছিলেন। কারণ তাঁর ধারণায় কবি এই শব্দটি বিট্রিশ শাসককে প্রশংসা করে লিখেছেন।এই
অবাস্তব ধারণা মানুষ বর্জন করেছে আগেই। ২০০৫ সাল।হরিয়ানার হিসারের দিল্লি পাবলিক
স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই ‘ভাষা মঞ্জুশ্রী’ নিষিদ্ধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী
হুডা।কারণ হিসাবে বলা হল ঐ সহায়ক পাঠে কবির ‘শেষশিক্ষা’ নামে যে কবিতাটি আছে তাতে
নাকি শিখগুরু গোবিন্দকে নিন্দা করা হয়েছে। প্রয়াত শঙ্খ ঘোষ মন্তব্য করেছিলেন,কবিতায় গুরু গোবিন্দের সততা সাহস আর হৃদয়ের বিশালতার কথাই ধরা আছে।আরও
একবার, পন্ডিচেরি সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ ‘টেগোর অন
পন্ডিচেরি’ শীর্ষক পুস্তিকায় রবীন্দ্রনাথের ’হোয়ার দ্য মাইন্ড ইজ উইদাউট
ফিয়ার’কবিতাকে বিকৃত করে
বর্তমান বর্ষেও আসাম সরকার ছুটির তালিকা থেকে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীর
দিন(৯মে) ও ভাষা শহিদ দিবসে(১৯মে) স্কুলছুটি বাতিল করেছে।একই ঘটনা
ত্রিপুরাতেও।কিন্তু তাতেও আমরা গাইছি,‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া।’ রবীন্দ্র চর্চা ও রবীন্দ্র সংস্কৃতি নিয়ে
শঙ্খ ঘোষকে একবার জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেছিলেন,গভীরতর অর্থে
রবীন্দ্রসংস্কৃতি হল একধরনের চারিত্রিক বিকাশ।এই সংস্কৃতিতে মানুষ আত্মশক্তিতে
প্রতিষ্ঠিত হতে চায়,নিজেকে অতিক্রম করতে চায়। নিভৃত প্রাণের
দেবতা তাই বলে ওঠেন,‘সুন্দরকে ভালবাসি বলেই অসুন্দরের সঙ্গে
আমার লড়াই।’
ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ
=========================================
রবীন্দ্রনাথ
গৌরশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনো তোমাকে দেখি
শীতের কুয়াশা মাখা ভোরে
নির্জনে একাকী ভুবন ডাঙ্গায়
ভোর হয়ে এলে
এখনো গানের কলি
শুভ জন্মদিনে
কাছে দূরে ভুবন ডাঙ্গায়
এখনো তুমি সেই অনাথের নাথ
আমার মুক্তি আমার রবীন্দ্রনাথ।
সৌমিত বসু
তুমি যে শূন্যের ওপর দাঁড়িয়ে
তা কি তুমি বোঝো না বিমলা?
জেগে থাকলে নিখিলেশ যেটুকু সত্যি
ঘুমিয়ে পড়লে সন্দীপ যে আরো বেশি
স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ছাদের আলসে ধরে জুঁইফুলের গন্ধ হয়ে
হেঁটে যাচ্ছ তুমি
মনে হচ্ছে গীতবিতানের পৃষ্ঠা পেরিয়ে
ভেসে যাচ্ছে কাদম্বরীর দুঃখ।
আমি সন্দীপ হয়ে জন্মালে
তুমি কি রাজি আছো বাড়িয়ে দিতে
তোমার ঠোঁট?
নীলকণ্ঠ তোমাকে
গোপনে গোপন ছিলে তুমি দূর
সেথা হতে আসে সুমধুর সুর
বেদনার ভারে যত নুয়ে পড়ি
তোমার গানের কাছে অঞ্জলি ধরি ।
এত হাসি মজা ছবি নিখিলে ফুটেছে
তোমার ভুবনে শুধু ব্যথাতুর হাসি
কোথা থেকে এত বেদনা তুলেছে
নীলকণ্ঠ তোমাকে তাইতো ভালবাসি।
নিভৃত প্রাণের দেবতা তুমি
অন্ধকারে
আলো জ্বেলে যেই দাঁড়িয়েছ দ্বারে
আমার সকল দুঃখ যাতনা শোক
নিমেষে উধাও হয়ে হল সে অশোক!
খুকু ভূঞ্যা
ধানকাটা মাঠের ফাটল থেকে উঠছে লু ভাপ
ছিন্ন লাড়ার গোড়ায় নতুন ধানচারার উঁকি
বুক ভাঙার গান লিখতে গিয়ে অন্তরের ক্ষত শুনছে বর্ষা মঙ্গল
ঝড় জীবনেরই আরেক নাম
ভাঙনে ভাঙনে লিখে দেয় বিজয়
অদৃশ্য বিশ্বাস হয়ে উঠে পথ
নিভৃত প্রাণের গভীর থেকে নেমে আসে মাটির বুকে,সৃজন ঈশ্বর
আজ রাতে
পথ চেয়ে বসে আছি নির্জনে।
করতলে চন্দন রঙের পুষ্প এঁকেছি,
রাতভর সরলরেখায় দৃষ্টি রেখেছি।
রাতের পাখি ডাকে - আয়,
ভোরের শিশির ডাকে - আয়!
ঝরা ফুল, বৃদ্ধ
বট টানে হাত।
সে তো বলেনি - কোথায় যাবো!
নির্জনে সরলরেখায় দৃষ্টি
এঁকেছি।
আজ রাতে তার সাথে দেখা হবে-
পথ চেয়ে নির্জনে বসে আছি।
নিশ্চিহ্নপুর
পুরে নাও একাগ্র মনে
যাবে সব একে একে কেহ নেই কোথা
নিশ্চিহ্নপুরে
সাজিয়ে রেখেছো হাজার ওয়াট
আঁখিপল্লবে স্বপ্ন
সবটা কি পারো নেই কিছু হাতে
তোমার আমার দুঃখের এ অস্থির রাতে
তবু রিপুদের বাড়াবাড়ি এতো
তুমি জানো সেই তুমি
হিসেব নিকেষ চলে রোজদিন
মিথ্যে জন্ম মিথ্যে মৃত্যু শূন্যতা স্বভূমি
কে আছে বন্ধু এপারে তোমার
সব গেছে ওই পাড়ে
পারাবার নাও বেয়ে চলে রোজ দিকশূন্য নিশ্চিহ্নপুরে
অজুহাত নিয়ে বেঁচে থাকা রোজ
গোপনে করছো কাজ
আরও কতো বাকি চুরাশি লক্ষ
তরীতেই.............................কাবার
রবীন্দ্রনাথ
অতল তোমার চিরনবীন লিপিমালা
ছড়ায় মগ্ন হিরণ্ময় আলোক
সুখ-দুঃখ, আনন্দ
আখরে
আগলে নিয়েছ আমাদের সব শোক
নিভৃত ডুব আমার দিন যাপনে
নিয়ত খুঁজি মুক্ত বুকে ঝিনুক
প্রাণের দেবতা রয়েছ হৃদয় মাঝে
তবু, যদি দেখা পাই
রয়েছি উন্মুখ
নিত্য তোমার তল খুঁজে পথ ফিরি
পাই বা যদি গুপ্ত কোন ধন
কেউ না থাকুক, তুমিই
আপনজন।
পঁচিশে বৈশাখ এবং আমরা
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
তোমার ছবিতে মালা দিই,
প্রভাত ফেরিতে হাঁটি।
মঞ্চে মঞ্চে তোমার কবিতা পড়ি,
গল্প পড়ি, গান গাই।
আদতে আমরা তোমাকে পুজো করি,রবি ঠাকুর!
বাকি সময় আমরা ঘুমিয়ে কাটাই।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমরা নদী খেয়েছি।
ঝিল বিল পুকুর খেয়েছি।
বাঁওড় জলাজমি খেয়েছি।
সবুজ গাছপালা খেয়েছি।
এখন বাকি আছে শুধু এই পৃথিবী,
এটা খেতে পারলেই
আমাদের ষোলো কলা পূর্ণ হবে।
সেদিকেই এগিয়ে চলেছি দ্রুত গতিতে।
অবচেতনে তুমি
শ্যামল রক্ষিত
নির্বিশেষ চলন : আস্থা ও স্থিতি সম্পর্কিত
তবু
তুমি ভাসান, অদেখার আস্ফালন
জড় ও জাড্যে বিশ্বাস নেই
নিজের বলতে সেই প্রাণ
প্রত্যাখানের চিহ্ণ নিদিষ্ট
আড়ালেও তরবারি : তপস্যায় জন্ম মোদি ও
ক্ষরণের
তুমি উঁকি মারছ স্রোতপাঠে
শোকপ্রহর অপেক্ষায় রয়েছে
অবধারিত হরিণী সন্ধান
অনুমতিতে বাজছে আদরি ঘন্টা
প্রতিদ্বন্দ্বী সবাই
: অবচেতনে তুমি ঈশ্বর
দরজা খুলে মৃত্যু মুচকি মুচকি হাসছে
দেখো, শাসনতন্ত্রের সব
অনুচ্ছেদ
সংবিধানসম্মত ৷
প্রাণাধিকা
তাপস বৈদ্য
কারণ সে কারও কান্নায় হাসে না।
আর সময়ই শ্রেষ্ঠ বিচারক কারণ তাকে
বিপথে চালানোর ক্ষমতা কারও নেই।
আমার একটি আয়না ও সেই আয়নায়
সদা বিম্বিত নিজস্ব সময়-বোধ আছে।
তারাই আমাকে আমার মতো করে চলতে
প্রাণিত করে বলে অনেক সময় তাদেরকেই
প্রাণের অধিক ভেবে কৃতজ্ঞতা জানাই।
দাদুর কথা
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাড়ির বউদের বলেছিল আকাশ আজ আমাদের
পাঁচমহলার সম্মানীয় অতিথি
তোমরা সবাই চারপাশে ঘিরে দাঁড়াও
শিখে নাও হাতে হাত রেখে পা দুটো কিভাবে
মাটির কাছে বন্ধুর মতো লেগে থাকবে
মাথায় ঠিক কতখানি বোঝা চাপালে
সর্বক্ষণ আকাশের জানলায় চোখ রাখা যায়
থালার ভাতে ডাল চাপিয়ে দাও
মায়ের জন্য রাখা তলানি ভাতগুলো
আর গোটা হাঁড়িটা দুয়ারে এনে বসাও
শিখে নাও মানুষের সংসারে লেগে লেগে থাকতে গেলে
ভাত ভাগের অনুপাত আর ডাল তরকারি
কাদের ঠিক কতটুকু করে খেতে হয় --------
জন্মদিনে আমার দাদুর কথা খুব মনে পড়ে
ঋণ
বনশ্রী রায়দাস
তৈলচিত্র থেকে জ্যোতি নিরূপম
ভাষাহীন অপাপবিদ্ব দৃষ্টি
অগুরু চন্দন, করতলে
কিছু
কুচোফুল ,বসি
হাঁটুমুড়ে
চরণ ছুঁয়ে, ধুপের
সমর্পণে
দহন প্রলাপ অশ্রু সাজায়
জীবন খুঁজে পাই সঞ্চয়িতায়
তোমার সৃষ্টি সমুদ্রে হে কবি
সার্থক হোক আমার জন্মান্তর
আরও হাজার বছর ।
প্রাণের দেবতা
বুকের মাঝে
শুধুই বাজে,
ছাতিমতলায়
দীর্ঘ ছায়ায় তুমি আছো,
জন্মজলেই
বাঁধা আছি,
সমস্ত কালির
অক্ষর এসে ভিড় করে ,
অর্পণ করি
রবিঠাকুরের পায়ে
উর্বর
পলিমাটি দাও কবি,
যেন দাঁড়াতে
পারি উন্নত শিরে,
বৈশাখে জারুল
ফুলের শোভা
হৃদয় আলোড়িত
করে
দারুণ
দুঃসময়ে
অন্তর্দৃষ্টি
দাও---
ভয়হীন যেন
করতে পারি জীবন।
আমার রবীন্দ্রনাথ
বিধানেন্দু পুরকাইত
সবখানে তুমি আঁচড় কাটলে
পাহাড় থেকে নদী
রমণী হৃদয় তছনছ করো
একলা হয়েছে যদি।
কাব্য চাষীর বুকের ওপর
ধরলে পাথর চেপে
যেদিকে তাকায় তুমিই আছো
নতুন যখনই খোঁজে।
প্রেম কোলাহল কিংবা বিষাদ
প্রতিটাই অনুভব
তোমার দখলে নিয়েছ একাই
কী করে তা সম্ভব !
শতাব্দি সেরা বটগাছ
চোখের সামনে দাঁড়িয়ে যে বটগাছ
সে আমাদের রবীন্দ্রনাথ
আকাশের দিকে ছড়ানো যে ডালপালা
সেগুলো কবিতা গানের হাত।
পাতার মধ্যে লুকোন যে বটফল
যত ঝুরি চেয়ে দেখি দাড়ি
অতীত ভবিষ্যৎ আমাদের কবি।
নিভৃত জ্যোৎস্না ও মনোরম রোদ
দুরন্ত বিজলী
নিভৃত জ্যোৎস্নায় ছায়াবনপথে
শব্দ ওঠে,শুকনো পাতার শব্দ...
হৃদয়ে নীরব বেদনাগুলো সরব হতে চায়।
সেই দুঃখমেদুর ক্ষণে প্রাণের ঠাকুরের
মৃদু কম্পনে ছড়িয়ে দেন স্নিগ্ধ আলোর তরঙ্গ।
ঠোঁটে অস্ফুট উচ্চারণে ঝরে পড়ে বেদনানির্ঝর,
স্রোতের কলধ্বনিতে পাড় ভাঙে।
আমার মনে নিভৃত প্রাণের ঠাকুরের
মনোরম রোদের প্রভা ছড়িয়ে পড়ে--
'আমার পরান যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাইগো।'
একলা থাকার সঙ্গী,
একলা চলার অনুভব,
অন্ধকারের আলোসাথী,
আমার প্রিয়তম সুখবৈভ
প্রিয়তম রবিঠাকুর।
আমার নিভৃত প্রাণের দেবতা
নবকুমার মাইতি
যন্ত্রণাক্লিষ্ট মনটা যখন ভেঙে চুর চুর হয়ে যায়
তখনই স্মরণ করি তোমায়
মানবপ্রেমীক,আজন্ম রোমান্টিক
দুঃখির আশ্রয়, আর্তের প্রশ্রয়
অতর্কিতে শোনা যায় বেদান্তের বাণী
'নাল্পে সুখমস্তি ভূমৈব সুখম'
অভেদ সুন্দরের গান ' গীতবিতান'
বাউলের একতারায় লালনের মহাসঙ্গীত
উদয়নের
নিভৃত আকাশ, কোপাইয়ের শান্ত
ধারার কান্না
জগৎ ও জীবনের সংরক্ত অনুরাগ, সরল মুগ্ধতার ধ্বনি
শেষের
কবিতা, রক্তকরবীর বিশুপাগল রঞ্জন নন্দিনী
শ্রম সাধনার অপাপবিদ্ধ সংগীত , বিমোহিত
আভূমি প্রনতি রাখি তোমার চরণ পদ্ম প'রে
আমার
নিভৃত প্রাণের দেবতা।
দিনের রবি রাতের তারা
নিরঞ্জন জানা
ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা সকালের সূর্য-- কৃষকের মাঠে আলো ঢালে;
কাস্তে
ফসল তোলার গল্প শোনায়।
শ্রমিকের হাতুড়িতে সুর তোলে
মানুষের মনে আলো রোপন করে,
সে সূর্য আর কেউ না;
সে আমার নিভৃত প্রাণের দেবতা--
সে আমাদের দিনের রবি, রবি ঠাকুর।
দিনের সমস্ত আলো
গোধূলির ঘরে তুলে রেখে
সূর্য ঘুমিয়ে যায় রাত্রির আঁচলে,
রাত ফোটা তারা আলোর গন্ধ ছড়ায়
প্রেম-পূজা-প্রকৃতি'র গানে বিচিত্র পর্যায়ে,
সে তারা আর কেউ না;
সে আমার নিভৃত প্রাণের দেবতা--
সে আমাদের রাতের তারা, রবি ঠাকুর।
প্রাণের দেবতা
ননীগোপাল জানা
'কাল ছিল ডাল খালি আজ ফুলে যায় ভরে'
ছন্দের
সম্ভারে অলংকারে সোনার তরীতে নিভৃত অন্তর কথা।
মম
চিত্তে নিতি নৃত্যে জাগায়
মূর্ছনা।
আমসত্ত দুধে ও সন্দেশে শিল্প নিপুনতা
ধ্বনির
শিল্প রবীন্দ্রসংগীতে ।
বাল্মিকী
প্রতিভায় আছো মনের দেবতা হয়ে।
মূঢ়তার মুক্তিতে শোনাও তোতা কাহিনী কথা।
দিনের
দুর্দিনে দু বিঘা জমিনে উপেন -সব হারাধের পাশে।
একাসনে সবাই রাজা কত অসাধারণ।
কোন মন্তব্য নেই
ok